শিরোনাম
বৃহস্পতিবার, ২ মার্চ, ২০১৭ ০০:০০ টা

শামীম চষে বেড়ালেন কুমিল্লা যাবে বিএনপির টিম

কুমিল্লা সিটি নির্বাচন

নিজস্ব প্রতিবেদক ও কুমিল্লা প্রতিনিধি

শামীম চষে বেড়ালেন কুমিল্লা যাবে বিএনপির টিম

দলীয় প্রতীকে কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচন হবে আগামী ৩০ মার্চ। মনোনয়নপত্র জমাদানের শেষ দিন আজ। এ নির্বাচনে নৌকার প্রার্থীর পক্ষে কুমিল্লার সকল পর্যায়ের নেতা-কর্মীকে ঐক্যবদ্ধভাবে মাঠে নামাতে দলীয় সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বার্তা নিয়ে গতকাল কুমিল্লা চষে বেড়িয়েছেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এ কে এম এনামুল হক শামীম। জেলার শীর্ষ নেতা, সহযোগী সংগঠন ও সাবেক ছাত্রনেতাদের সঙ্গে কয়েক দফা ঘরোয়া বৈঠক করেছেন তিনি। স্থানীয় নেতাদের কাছে পৌঁছে দিয়েছেন সভানেত্রীর বার্তা। ছাত্রলীগের জেলা, মহানগর ও কলেজ শাখার নেতাদের নিয়ে বৈঠক করে কেন্দ্রভিত্তিক কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন। সিটি করপোরেশন নির্বাচনের মনোনয়ন নিয়ে দ্বিধাবিভক্ত নেতা-কর্মীদের উজ্জীবিত দেখা গেছে। পৃথকভাবে যুবলীগ, মহিলা লীগ, কৃষক লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও সাবেক ছাত্রনেতাদের আলাদা কেন্দ্রভিত্তিক কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। দু-এক দিনের মধ্যেই এ কাজ শুরু হবে। সন্ধ্যার পর সিটি করপোরেশনের দলীয় প্রার্থী আঞ্জুম সুলতানা সীমাকে সঙ্গে নিয়ে টাউন হলে বৈঠক করেছেন কুমিল্লার এমপি আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহারের সঙ্গে। বৈঠকে দুজনকে বেশ আন্তরিক দেখা গেছে। বৈঠকে আ ক ম বাহাউদ্দিন বলেছেন, ‘দলীয় সভানেত্রী যাকে নৌকা দিয়েছেন তার পক্ষেই কাজ করব। আমি নৌকার লোক। নৌকার বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই।’ জানতে চাইলে বাহাউদ্দিন বাহার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘সীমা নৌকার প্রার্থী। নৌকা যেখানে আমি সেখানে। নৌকার বিপক্ষে আমি কখনই ছিলাম না। এখনো নেই। নির্বাচন কমিশনের বিধি মেনে যতটা সম্ভব দলীয় প্রার্থীর পক্ষে কাজ করব।’ বিকালে দলীয় কার্যালয়ে এক বক্তব্যে এনামুল হক শামীম বলেন, ‘এ মুহূর্তে সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রী শেখ হাসিনা। জনপ্রিয় দল আওয়ামী লীগ। জনপ্রিয় প্রতীক নৌকা। আসন্ন সিটি করপোরেশন নির্বাচনে উন্নয়নের প্রতীক, গণতন্ত্রের প্রতীক, স্বাধীনতার প্রতীক নৌকার পক্ষে নেতা-কর্মীদের ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। উন্নয়নের ধারাবাহিকতার প্রয়োজনে কুমিল্লার জনগণ নৌকাকেই বেছে নেবেন। দেশের উন্নয়ন-অগ্রগতি ধরে রাখতে চাইলে, শান্তি চাইলে নৌকার বিকল্প নেই।’

এর আগে কুমিল্লা ক্লাবে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে চট্টগ্রামের বিভাগীয় সম্পাদক এনামুল হক শামীম বলেন, ‘কুমিল্লা সিটি করপোরেশনে মেয়র পদে দলের একাধিক মনোনয়নপ্রত্যাশী থাকবেন এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা আদর্শের পক্ষে, বঙ্গবন্ধু, শেখ হাসিনা ও নৌকার পক্ষে ঐক্যবদ্ধ থাকেন। মনোনয়ন না পাওয়া প্রার্থীদের দু-এক দিন মন খারাপ থাকতেই পারে। আজ আমি আসার পর থেকে সবাই নৌকার ব্যাপারে এক হয়ে কাজ করবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।’ তিনি বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জের সেলিনা হায়াৎ আইভী যেমন জনপ্রিয় ছিলেন, তেমনি কুমিল্লায়ও আমাদের প্রার্থীর ব্যক্তি জনপ্রিয়তা রয়েছে। আশা করি জয়ের মালা তিনিই গলায় পরবেন। কুমিল্লাবাসী প্রধানমন্ত্রীকে নৌকা উপহার দেবেন।’ অন্য এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘যারা নির্বাচনে ভালো কাজ করবেন তাদের দলের মহানগর কমিটিতে পুরস্কৃত করা হবে। কেউ বিদ্রোহী প্রার্থী হলে তাকে আওয়ামী লীগ করার সুযোগ দেওয়া হবে না। যারা সিদ্ধান্ত মানবেন না তাদের দলে থাকার দরকার নেই।’

এ সময় দলের কেন্দ্রীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার আবদুস সবুর, জেলা পরিষদের সাবেক প্রশাসক ওমর ফারুক, আওয়ামী লীগ নেতা সফিক সিকদার, দলীয় প্রার্থী আঞ্জুম সুলতানা সীমা, আরফানুল হক রিফাত, নাসির উদ্দিন, সাজ্জাদ হোসেন, দক্ষিণ জেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি শাহীনুল ইসলাম শাহীন, আওয়ামী লীগ নেতা আবুল কাশেম রৌশন, চিত্তরঞ্জন ভৌমিক, আবদুল হাই বাবলু, ভিক্টোরিয়া কলেজ ছাত্র সংসদের সাবেক ভিপি নূর-উর রহমান মাহমুদ তানিম, জিএস আবদুল্লাহ আল মাহমুদ সহিদ, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি কবির সিকদার, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের উপকমিটির সাবেক সহ-সম্পাদক আনিসুর রহমান মিঠু ও আওয়ামী লীগ নেতা জাকির হোসেন, ছাত্রলীগ নেতা রাজীব আহমেদ রাসেল প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। এরপর টাউন হলে আদর্শনগরের উপনির্বাচন নিয়ে বৈঠক করেন শামীম ও বাহাউদ্দিন বাহার এমপিসহ জেলা-উপজেলা নেতারা।

এদিকে দুপুরে আওয়ামী লীগ প্রার্থী সীমার ভাই ডা. আজম খান নোমান ও এমপি বাহার গ্রুপের যুবলীগ নেতা আবদুল্লাহ আল মাহমুদ সহিদ তর্কে জড়িয়ে পড়েন।

জানা গেছে, দলীয় সভানেত্রীর বার্তা কুমিল্লায় পৌঁছার পর পাল্টে যাচ্ছে সীমার মাঠের অবস্থান। যারা মান-অভিমান নিয়ে দূরে ছিলেন তারা এখন নৌকার পক্ষে কাজ শুরু করছেন। অন্যদিকে বিএনপির প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কুর রয়েছে দলীয় গ্রুপিং। সাক্কু দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকায় এবং আওয়ামী লীগের সঙ্গে মিলেমিশে চলায় স্থানীয় বিএনপিও বিষয়টি ভালোভাবে গ্রহণ করেনি। এদিকে শামীমের ঘরোয়া বৈঠককে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কু। এ বিষয়ে রিটার্নিং অফিসার রকিব উদ্দিন মণ্ডল বলেন, ‘প্রতীক বরাদ্দের আগে এখন কেউ কোনো প্রচারণা চালাতে পারবেন না। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে এনামুল হক শামীম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমি নির্বাচনী প্রচারণা চালাইনি, ভোটও প্রার্থনা করিনি। নেতা-কর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছি। ঐক্যবদ্ধ থেকে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে কাজ করতে বলেছি। এটা আচরণবিধি লঙ্ঘনের মধ্যে পড়ে না।’ তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সব সময় আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। নির্বাচনী বিধি ভঙ্গ হয় এমন কোনো কাজ করিনি।’

কুমিল্লা সিটি নির্বাচনে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ ২৪৪ জনের : কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে এ পর্যন্ত ২৪৪ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। গত ২৩ ফেব্রুয়ারি থেকে গতকাল বিকাল ৫টা পর্যন্ত ৭ দিনে ৬ জন মেয়র প্রার্থী, মহিলা সংরক্ষিত আসনের ৪৫ জন এবং সাধারণ ওয়ার্ডে ১৯৩ জন মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। মেয়র পদে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন আওয়ামী লীগের আঞ্জুম সুলতানা সীমা, মো. শাহজাহান, বিএনপির মনিরুল হক সাক্কু, জাসদের শিরিন আক্তার, স্বতন্ত্র মেজর (অব.) মামুনুর রশিদ ও অ্যাডভোকেট শোয়েবুর রহমান। এদিকে সাধারণ ওয়ার্ডে ২৮ জন ও সংরক্ষিত ওয়ার্ডে ৪ জন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা ও সিটি করপোরেশন নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার রকিব উদ্দিন মণ্ডল জানান, কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে এখন পর্যন্ত ২৪৪ জন মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। সব মনোনয়নপত্র সংগ্রহকারীকে আচরণবিধি সম্পর্কে সতর্ক করা হচ্ছে। কেউ তা লঙ্ঘন করলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। উল্লেখ্য, আগামী ৩০ মার্চ কুমিল্লা সিটি নির্বাচন। মনোনয়নপত্র সংগ্রহ, জমাদানের শেষ তারিখ ২ মার্চ ও প্রত্যাহারের তারিখ ১৪ মার্চ।

সর্বশেষ খবর