বৃহস্পতিবার, ২ মার্চ, ২০১৭ ০০:০০ টা

প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ নিয়েই শেষ হচ্ছে পরীক্ষা, ব্যবস্থা নেই

আকতারুজ্জামান

পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ থাকলেও সরকারের পক্ষ থেকে কোনো ব্যবস্থা ছাড়াই শেষ হচ্ছে এবারের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা। কয়েকটি পরীক্ষায় প্রশ্নফাঁসের অভিযোগ আসার পর শিক্ষামন্ত্রী তদন্ত করে প্রমাণ পেলে পরীক্ষা বাতিলের সিদ্ধান্তের কথা জানান। কিন্তু শিক্ষা বোর্ড, মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট দফতরে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এখন পর্যন্ত তেমন কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। আগামী রবিবার দাখিলের উচ্চতর গণিত (তত্ত্বীয়) পরীক্ষার মাধ্যমে ২০১৭ সালের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শেষ হবে। ২ ফেব্রুয়ারি এসএসসি পরীক্ষা শুরু হয়। বেশির ভাগ পরীক্ষায় অভিযোগ ছিল প্রশ্নপত্র ফাঁসের। ৫ ফেব্রুয়ারি বাংলা দ্বিতীয় পত্রের (এসএসসি) পরীক্ষা শুরুর আগেই প্রশ্নপত্র পাওয়া যায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। এ নিয়ে বাংলাদেশ প্রতিদিনে ৬ ফেব্রুয়ারি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ১২ ফেব্রুয়ারি গণিত বিষয়ের প্রশ্নপত্র পরীক্ষার আগেই হোয়াটসঅ্যাপসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে বলে অভিযোগ ওঠে। এ ছাড়া আরও কয়েকটি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস হয় বলে অভিযোগ ওঠে। শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ ১৩ ফেব্রুয়ারি সাংবাদিকদের বলেন, ‘যদি দেখা যায় আগেই (গণিতের) প্রশ্ন আউট হয়ে গিয়েছিল এবং তার ফলে শিক্ষার্থীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অথবা কেউ লাভবান হয়েছে, তাহলে নিশ্চয়ই আমরা গণিতের পরীক্ষা বাতিলের বিষয়ে ভাবব। প্রশ্নফাঁসের অভিযোগ আমলে নিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে। পরীক্ষার আগে প্রশ্নফাঁসের বিষয়টি প্রমাণিত হলে আমরা পরীক্ষা বন্ধ করে দেব। পরীক্ষার পরে প্রমাণ পেলেও সে পরীক্ষা রাখব না।’ জানা গেছে, যেসব পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ার অভিযোগ উঠেছিল তার কোনোটি তদন্ত বা বাতিলের ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্তই নেওয়া হয়নি সরকারের পক্ষ থেকে। মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মাহাবুবুর রহমান বলেন, ‘আমরা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করি। মন্ত্রণালয় থেকে প্রশ্নফাঁসের তদন্ত বা পরীক্ষা বাতিলে কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি আমাদের কাছে।’ এদিকে পরীক্ষায় প্রশ্নফাঁসের অভিযোগের পর শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের পক্ষ থেকে দাবি উঠেছিল তদন্ত করে প্রমাণ পেলে পরীক্ষা বাতিলের।

 প্রশ্নফাঁসের প্রমাণ পেলে পরীক্ষা বাতিল করা হবে শিক্ষামন্ত্রীর এমন মন্তব্যের পর এ পরীক্ষা পুনরায় নেওয়া হবে কিনা এ সংশয় কাটছে না পরীক্ষার্থীদের। কোনো সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা না পাওয়ায় দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভুগছে ছাত্রছাত্রীরা। দেখা গেছে, বিভিন্ন ফেসবুক অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে প্রশ্নপত্র ফাঁস করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন অনেকেই। তারা আগ্রহী শিক্ষার্থীদের আলাদা একটি গ্রুপে সংযুক্ত করেন। পরে তাদের গ্রুপে পরীক্ষার আগেই প্রশ্নপত্র দিয়ে দেয় জালিয়াত চক্র। মোবাইল নম্বর ব্যবহার করে একের পর এক ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে প্রশ্নফাঁসের ‘অপপ্রচার’ চালালেও তাদের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট, গ্রুপ, পেজ বন্ধ করা হচ্ছে না। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এসব চক্রের কোনো কোনো সদস্যকে গ্রেফতার করলেও তাদের তৎপরতা বন্ধ করা যাচ্ছে না। মূল হোতারা থেকে যাচ্ছেন ধরাছোঁয়ার বাইরে। নিবন্ধনবিহীন সিমকার্ড ইতিমধ্যে বন্ধ হয়ে যাওয়ার কথা। যদি চক্রটির ব্যবহার করা সিমগুলো নিবন্ধন করা হয়েই থাকে, তবে কেন তাদের খুঁজে আইনের আওতায় আনা হচ্ছে না, এমন প্রশ্ন অভিভাবক ও সংশ্লিষ্টদের। ১৪ ফেব্রুয়ারি প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগে রাজু আহমেদ, ফয়সালুর রহমান ওরফে আকাশ, জোহায়ের আয়াজ, মহিউদ্দিন ইমন, স্বাধীন আল মাহমুদ ও কাজী রাশেদুল ইসলাম ওরফে রনিকে গ্রেফতার করে রিমান্ডে নেওয়া হয়। আসামিরা ‘ভুয়া আইডি’ থেকে ফেসবুকে বিভিন্ন ধরনের পেজ খুলে ভুয়া প্রশ্নপত্র পরীক্ষার্থীদের কাছে সরবরাহ করতেন বলে মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রশ্নপত্র ফাঁসের আশ্বাস দিয়ে টাকা হাতিয়ে নেওয়া অ্যাকাউন্ট, গ্রুপ ও পেজ বন্ধ না হওয়ার ব্যাপারে পুলিশ সদর দফতরের এআইজি (মিডিয়া) সহেলী ফেরদৌস বলেন, এ বিষয়ে পুলিশ সতর্ক রয়েছে। এ ধরনের কোনো অভিযোগ পেলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যে প্রশ্নফাঁস চক্রের কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

সর্বশেষ খবর