শুক্রবার, ৩ মার্চ, ২০১৭ ০০:০০ টা

কোচিং সেন্টারের সুনাম বাড়াতে প্রশ্নফাঁস

গ্রেফতার ৮ শিক্ষক তিন দিনের রিমান্ডে

নিজস্ব প্রতিবেদক

নিজ নিজ কোচিং সেন্টারের সুনাম বাড়াতে পরীক্ষা শুরু হওয়ার দেড় থেকে দুই ঘণ্টা আগে প্রশ্নপত্র ফাঁস করছেন কতিপয় শিক্ষক। মাত্র ১০ মিনিটের মধ্যেই সেই প্রশ্নপত্রের উত্তর সঠিক করে তাদের নিজস্ব লিংক, ভুয়া ফেসবুক আইডি ও মেসেঞ্জারের মাধ্যমে সারা দেশে ছড়িয়ে দিচ্ছেন তারা। বুধবার এসএসসির     ভুয়া প্রশ্নপত্র ফাঁস চক্রের আট সদস্যকে গ্রেফতারের পর এমন তথ্য পেয়েছেন গোয়েন্দা কর্মকর্তারা। গ্রেফতার ব্যক্তিরা হলেন— রফিকুল ইসলাম, জহিরুল ইসলাম ওরফে শুভ, লিটন মিয়া, রমন হোসেন ওরফে মাহির, রাজীব আলী, আরিফুল ইসলাম ওরফে আরিফ, তারিকুজ্জামান হিমেল ওরফে আবির ও অন্তর। ঢাকা, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, ময়মনসিংহ, জামালপুর, বাগেরহাট ও কুষ্টিয়া জেলায় অভিযান পরিচালনা করে তাদের গ্রেফতার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি)। গতকাল তাদের আদালতে পাঠিয়ে সাত দিনের রিমান্ডের আবেদন করা হলে আদালত তিন দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন। গতকাল দুপুরে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে যুগ্ম-কমিশনার (ডিবি) আবদুল বাতেন বলেন, ‘বিভিন্ন পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা তদন্ত করতে গিয়ে ধারণা করছি, তিনটি জায়গা থেকে প্রশ্ন ফাঁস হতে পারে। প্রথমত, যারা প্রশ্নপত্র প্রণয়নের সঙ্গে জড়িত সেখান থেকে। দ্বিতীয়ত, বিজি প্রেস থেকে এবং সর্বশেষ পরীক্ষার প্রশ্ন বিভিন্ন জেলার কেন্দ্রে যাওয়ার পর সাব সেন্টারে পাঠানোর সময়।’ তবে চক্রের গ্রেফতার সদস্যরা জেলা প্রশাসকের কেন্দ্র থেকে সাব সেন্টারে যাওয়ার সময় প্রশ্ন ফাঁস করে আসছিলেন। এদের মধ্যে কমলাপুর শের-ই-বাংলা রেলওয়ে উচ্চবিদ্যালয়ের ইংরেজির শিক্ষক রফিকুল ইসলাম ‘জ্ঞানকোষ’ নামে একটি কোচিং সেন্টার চালান। পরীক্ষার দিন রফিকুল তার ঘনিষ্ঠ সহযোগী জহিরুলকে প্রশ্নপত্র সংগ্রহ করতে পাঠান। প্রশ্নপত্র জেলা প্রশাসকের কেন্দ্র থেকে সাব সেন্টারে নেওয়ার সময় জহিরুল প্রশ্নের ছবি তুলে তা ১০ মিনিটের মধ্যে সমাধান করে নিজেদের লিংকগুলোতে ছড়িয়ে দেন। যারা তাদের ওই লিংকে থাকেন, তারা বিকাশের মাধ্যমে এক থেকে পাঁচ হাজার টাকা দিয়ে সেখানে আগে থেকেই যুক্ত হন। এসএসসির গণিত পরীক্ষার প্রশ্ন এক দিন আগে কীভাবে ফাঁস হলো এবং ওই চক্রের কেউ গ্রেফতার আছে কি না এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘এর আগে গ্রেফতার চক্রের একজনের বিজি প্রেসের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে। এ বিষয়ে মন্ত্রণালয় একটি কমিটিও গঠন করেছে। তারা ব্যবস্থা নেবে। আমরাও তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছি। তবে লেটেস্ট তথ্য অনুযায়ী, গ্রেফতার চক্রের কাছ থেকে উদ্ধার প্রশ্নের সঙ্গে ইংরেজি প্রশ্নপত্রের মিল পাওয়া গেছে।’ প্রসঙ্গত, চলতি বছর এসএসসিতে বিভিন্ন পরীক্ষার আগের রাতে হোয়াটসঅ্যাপসহ বিভিন্ন মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে প্রশ্নপত্র পাওয়া যাচ্ছে, যা পরদিন পরীক্ষায় হুবহু মিলে যাচ্ছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে ১৪ ফেব্রুয়ারি ‘ভুয়া’ প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে রাজধানী থেকে ছয়জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

সর্বশেষ খবর