শুক্রবার, ৩ মার্চ, ২০১৭ ০০:০০ টা

রাজউকের সাবেক প্রধান প্রকৌশলী গ্রেফতার

নিজস্ব প্রতিবেদক

অবৈধ সম্পদ অর্জনের একটি মামলায় রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) সাবেক প্রধান প্রকৌশলী মো. এমদাদুল ইসলামকে গ্রেফতার করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গতকাল বেলা সাড়ে ১১টার দিকে তাকে রাজধানীর বনানী থেকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারের পরই রাজউকের সাবেক ওই কর্মকর্তাকে আদালতে হাজির করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও দুদকের উপসহকারী পরিচালক মোহাম্মদ সাইদুজ্জামান। এ সময় এমদাদের জামিন চেয়ে একটি আবেদন করেন তার আইনজীবী সৈয়দ রেজাউর রহমান ও আবুল কালাম আজাদ। আবেদনের ওপর শুনানি শেষে তা নাকচ করে এমদাদুলকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন ঢাকার মহানগর হাকিম আমিরুল হায়দার চৌধুরী।

জামিন শুনানিতে আসামি পক্ষের আইনজীবীরা বলেন, তাদের মক্কেল সম্পদের সঠিক তথ্যবিবরণী দিয়েছেন। তার বিরুদ্ধে দুদক যে অভিযোগ এনেছে তা ভিত্তিহীন। এমদাদুল রাজউক ও দুদকের কয়েকজন ষড়যন্ত্রের শিকার। ২৩ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর রমনা থানায় এমদাদুলের বিরুদ্ধে সম্পদের তথ্য গোপনের এ মামলা করেন দুদক কর্মকর্তা সাইদুজ্জামান। ওই মামলায় রাজউকের সাবেক প্রধান প্রকৌশলী এমদাদুল ইসলামের বিরুদ্ধে এক কোটি ১৮ লাখ টাকার সম্পদের তথ্য গোপন ও জ্ঞাত আয়বহির্ভূত আরও ৮৭ লাখ টাকার সম্পদ অর্জনের অভিযোগে আনা হয়েছে। আরও অভিযোগ রয়েছে, এমদাদ বিদেশ সফররত অবস্থায় প্রতিদিনই আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে দেখা করার নামে সেখানে ডলার রেখে আসতেন। অথচ হাজার হাজার ডলার বিদেশে নিয়ে যাওয়া-সংক্রান্ত কোনো তথ্য তার পাসপোর্টে এনডোর্সমেন্ট ছিল না। এ ছাড়া ক্ষমতার অপব্যবহার, জাল দলিল তৈরি ও পরিবেশ আইন ভঙ্গ করাসহ আরও তিনটি মামলা তার বিরুদ্ধে করা হয়। দুদকের মামলা ছাড়াও অপর দুই মামলা তদন্ত করা হয় মিরপুর থানা এবং সিআইডিতে। রাজধানীর মিরপুরের হোল্ডিং নম্বর ৫/১০, বসতি প্রপার্টিজ লিমিটেড, বড়বাগ, মিরপুর-২ এই ঠিকানায় নিজ পরিবারের নামে পাঁচ কাঠা জমি কেনা রয়েছে তার। ওই জমি কেনা হয়েছে এমদাদুল ইসলামের খালাতো ভাই এম জি রহমান বুলুর নামে। সেখানে নির্মাণ করা হয়েছে পাঁচতলা ভবন। ভবনটি আবাসিক হিসেবে রাজউকের অনুমোদন নেওয়া হলেও বর্তমানে তা বাণিজ্যিকে পরিণত হয়েছে। ওই ভবনে গড়ে তোলা হয়েছে আরমিন সোয়েটার লিমিটেড নামের একটি তৈরি পোশাক কারখানা। এমদাদুল অবসরে যাওয়ার আগে রাজউকের ই-টেন্ডারিং আটকে রেখে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।

প্লট জালিয়াতি : এমদাদুল ইসলাম স্ত্রী সামিনা ইসলামের নামে ১০ কাঠার প্লট বরাদ্দ নেন ২০০৩ সালে। উত্তরার সেক্টর ১১, রোড ২০৪-এর ৩০ নম্বর প্লট বরাদ্দ পাওয়ার পর ১০ কাঠা আয়তনের প্লট বাবদ সমুদয় অর্থ পরিশোধ করেন তিনি। ২০১৩ সালের ৮ মে জমি দখলের সময় ওই প্লটের আয়তন হয়ে দাঁড়ায় ১২ কাঠা ২ ছটাক ১১ বর্গফুট।

২০১৩ সালের ১১ আগস্ট সামিনা ইসলামের কাছ থেকে ১২ লাখ ৮৪ হাজার ১৬৭ টাকা আদায় সাপেক্ষে এ বরাদ্দের বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়। একই মাসে বর্ধিত জমিসহ সামিনা ইসলামকে প্লটের দখল দেওয়া হয়েছে।

উত্তরা ১১ ও ১৪ নম্বর সেক্টরে পরিবারের অন্য সদস্যদের নামেও একাধিক প্লট রয়েছে তার। সেক্টর ১১, রোড ২বি, প্লট ৮বি-এর মালিক সাইদা হামিদ। তিনি সম্পর্কে এমদাদের নিকটাত্মীয়। সেখানে পার্ক কেটে এ প্লটটি সৃষ্টি করা হয়েছিল।

মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেওয়া : পছন্দের ব্যক্তিদের নানা পদে বসিয়ে নানা প্রকল্প থেকে বিপুল অর্থ কমিশন নিয়েছেন এমদাদুল। রাজউক নির্মাণাধীন তিনটি আবাসিক প্রকল্প—পূর্বাচল নতুন শহর, উত্তরা তৃতীয় পর্ব ও ঝিলমিল আবাসিক প্রকল্প থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন রাজউকের সাবেক এই প্রধান প্রকৌশলী। সরকারের ১৭টি বাড়ি রাজউকের মাধ্যমে বিক্রি করার ক্ষেত্রে ব্যাপক দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগে ২০০৭ সালের ২৯ মার্চ বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে দুদকের মামলায় এমদাদুল ইসলাম জেল খাটেন। পরে তিনি জামিনে মুক্তি পান।

সর্বশেষ খবর