আগামী ৬ মার্চের উপজেলা নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ করতে সব ধরনের ব্যবস্থা নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। আজ মধ্যরাতে শেষ হচ্ছে নির্বাচনের প্রচার-প্রচারণা। এ নির্বাচনের তিনটি পদে দলীয় ভোট হওয়ায় আওয়ামী লীগ-বিএনপিসহ অন্যান্য দলের নেতা-কর্মীদের ঘাম ঝরাতে হচ্ছে নিজ নিজ প্রার্থীকে জয়ী করতে।

এদিকে নির্বাচনী এলাকায় শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখতে ভোটের দুই দিন আগে আজ মাঠে নামছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। তারা ভোটের পরদিন পর্যন্ত নির্বাচনী এলাকায় মাঠে থাকবেন। এ ছাড়া সুষ্ঠু ভোট গ্রহণের নির্দেশনা দিতে সিইসিসহ অন্য নির্বাচন কমিশনাররা বিভিন্ন নির্বাচনী এলাকায় সফরও করেছেন।

ইসির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, যেসব উপজেলায় উপনির্বাচন আছে, সেগুলোয় দুজন এক্সিকিউটিভ ও একজন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ করা হয়েছে। এ ছাড়া তিন উপজেলার সাধারণ নির্বাচনে প্রত্যেক উপজেলার জন্য চারজন এক্সিকিউটিভ ও একজন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ করা হয়েছে। অন্যদিকে সাধারণ ভোট কেন্দ্রের জন্য ১৫ এবং গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রের জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ১৬ জন সদস্য নিয়োজিত থাকবেন। এদিকে প্রথমবারের মতো দলীয়ভাবে অনুষ্ঠিত উপজেলা নির্বাচনের ভোট গ্রহণের জন্য প্রস্তুতি নিয়েছে নতুন নির্বাচন কমিশন (ইসি)। দলভিত্তিক এ নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ অন্য দলের প্রার্থীরা অংশ নিচ্ছেন। নির্বাচলী এলাকায় জমজমাট প্রচারণা চলাচ্ছেন প্রার্থীরা। আজ শেষ হচ্ছে সেই প্রচারণা। উপজেলা পরিষদের তিন পদে দলীয় নির্বাচন হওয়ায় দলের বিজয়ী নিশ্চিত করতে ঘাম ঝরাতে হচ্ছে প্রার্থীদের। নতুন নির্বাচন কমিশন নিয়ে সমালোচনা করলেও দলভিত্তিক প্রথম উপজেলা নির্বাচনে অংশ নিয়েছে বিএনপি। এতে নির্বাচন কমিশনের দায়িত্বটাও যেন বেড়ে গেছে। নিজেদের নিরপেক্ষতা প্রমাণ করতে নির্বাচনে বাড়তি নজর দিতে হচ্ছে নতুন ইসিকে।

উপজেলা নির্বাচনের প্রস্তুতির বিষয়ে সিলেটের জ্যেষ্ঠ জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মনির হোসেন গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, দলীয় এ উপজেলা নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ করতে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। আজ মধ্যরাতে প্রচারণা শেষ হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও মাঠে নামবে। সিলেটে শান্তিপূর্ণ ভোট গ্রহণে সব ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

নির্বাচন বিশ্লেষকরা বলছেন, নতুন ইসির অধীনে দলীয় এ নির্বাচন কতটা সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ হয় তাও নির্ভর করছে ইসির কঠোর অবস্থানের ওপর। তারা বলছেন, বিগত ইসির সময় অনুষ্ঠিত উপজেলা-পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন নিয়ে নানা বিতর্ক থাকায় সাধারণ মানুষের মধ্যে ভোট নিয়ে হতাশা সৃষ্টি হয়েছে। তাই বিগত ইসির দুর্নাম ঘুচিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠান নতুন ইসির জন্য চ্যালেঞ্জ। তাই তাদের সামনে নির্বাচনী পরীক্ষা। দলীয় উপজেলা নির্বাচনে নিজেদের নিরপেক্ষতা ধরে রাখাতেও পরীক্ষার মুখোমুখি হতে হবে তাদের। তবে নতুন ইসি কেমন হবে ৬ মার্চের উপজেলা নির্বাচনের পরই বোঝা যাবে। ইসি সচিবালয় জানিয়েছে, কে এম নূরুল হুদা নেতৃত্বাধীন ইসির অধীন ৬ মার্চ ভোট হবে ১৮ উপজেলায়। এ ছাড়া ৪ পৌরসভায় উপনির্বাচন রয়েছে। এ উপজেলার ভোটে চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদেই দলীয় প্রতীকে ভোট হবে। ইসির কর্মকর্তারা বলেছেন, দলীয় এ উপজেলা নির্বাচনে তিনটি পদেই আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টিসহ অন্যান্য দলের প্রার্থীরা রয়েছেন। স্থানীয় সরকারের এ নির্বাচনে তিনটি পদেই দলীয় প্রার্থী থাকছে। এ কারণে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন হবে। সুষ্ঠু ভোটের লক্ষ্যে সব ধরনের প্রস্তুতি চলছে। ইসি সচিবালয় জানিয়েছে, সিলেটের ওসমানীনগর, খাগড়াছড়ির গুইমারা ও সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলায় তিন পদে (সাধারণ নির্বাচন) ভোট হচ্ছে। এ ছাড়া চেয়ারম্যান পদে ভোট হচ্ছে কুড়িগ্রাম সদর, পাবনার সুজানগর, বরিশালের বানারীপাড়া, গৌরনদী, ঝালকাঠির কাঁঠালিয়া, পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী, কুমিল্লার আদর্শ সদর, নাটোরের বড়াইগ্রাম, কিশোরগঞ্জের হোসেনপুরে। এ ছাড়া ভাইস চেয়ারম্যান পদে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম, নীলফামারীর জলঢাকা, সাতক্ষীরার কলারোয়া ও বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ এবং নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে পাবনার ঈশ্বরদী, কুমিল্লা সদর দক্ষিণে ভোট হবে। একই দিন গলাচিপা পৌরসভায় (পটুয়াখালী) মেয়র পদে উপনির্বাচন ও তিন পৌরসভার তিন ওয়ার্ডে কাউন্সিলর উপনির্বাচন হবে।