রবিবার, ৫ মার্চ, ২০১৭ ০০:০০ টা

রোগী জিম্মি করে ইন্টার্নদের ধর্মঘট, চরম দুর্ভোগ

প্রতিদিন ডেস্ক

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে এবার ধর্মঘটে নেমেছে ইন্টার্ন চিকিৎসকরা। রোগীদের জিম্মি করে গতকাল দেশের বিভিন্ন স্থানে মেডিকেল কলেজের ইন্টার্ন চিকিৎসরা ধর্মঘট-মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে। বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের চার ইন্টার্ন চিকিৎসকের বিরুদ্ধে নেওয়া শাস্তিমূলক ব্যবস্থার প্রতিবাদে গত ২ মার্চ থেকে ধর্মঘট শুরু করেন ওই প্রতিষ্ঠানের ইন্টার্নরা। গতকাল এ কর্মসূচির  প্রতি সমর্থন জানিয়ে দেশের আরও কয়েকটি মেডিকেলে ইন্টার্নিরা ধর্মঘটে নেমেছেন। হাসপাতালে রোগীদের চিকিৎসা না দিয়ে রাস্তায় নেমে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করছেন। কোনো নোটিস ছাড়াই রোগীদের জিম্মি করে তারা রাস্তায় নেমে আসেন। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের গৃহীত সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে তারা ৭ দফা দাবি আদায়ের ঘোষণা দিয়েছেন। নিজস্ব প্রতিবেদক বগুড়া জানান, বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (শজিমেক) শিক্ষানবিস চিকিৎসকদের কর্মবিরতি অব্যাহত রয়েছে। ২ মার্চ থেকে শুরু হওয়া এই কর্মবিরতির সূত্র ধরে গতকাল সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত শজিমেকের প্রধান ফটকে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছেন শিক্ষানবিস চিকিৎসকরা। এ সময় তারা সাত দফা দাবি পেশ করেন। তাদের সাত দফা দাবিতে বলা হয়, ‘সকল চিকিৎসকের নিরাপত্তা বিধান, রোগীর লোক যারা ঘটনা ঘটিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ, হাসপাতালের নিরাপত্তা নিশ্চিত, অতিরিক্ত আনসার মোতায়েন, হাসপাতালের পুলিশ ফাঁড়িতে একজন সাব ইন্সপেক্টর নিয়োগ, মেডিকেলে কোনো ঘটনা ঘটলে কর্তৃপক্ষকে নিজ উদ্যোগে মামলা করতে হবে এবং ব্যর্থ হলে কর্তৃপক্ষকে দায়ভার নিয়ে পদত্যাগ করতে হবে। দাবিগুলো মেনে না নিলে কঠোর কর্মসূচি ঘোষণার কথা জানানো হয়। শিক্ষানবিস চিকিৎসকরা কর্মবিরতিতে যাওয়ায় হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের চিকিৎসাসেবা অব্যাহত রাখতে বিশেষ ব্যবস্থায় একটি টিম গঠন করে তার মাধ্যমে চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

নিজস্ব প্রতিবেদক বরিশাল জানান, বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেও সকালে দায়িত্বে থাকা সব ইন্টার্ন চিকিৎসক কর্মবিরতি পালন করেন। তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, এখানে ১৯৯ জন ইন্টার্ন চিকিৎসক রয়েছেন। তাদের মধ্যে অনেকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে যোগ দেওয়ার জন্য বতর্মানে ঢাকায় অবস্থান করছেন। যারা বরিশালে আছেন, তারা কর্মবিরতির মধ্যে রয়েছেন। তারা জানান, দুপুর ১২টার পর কর্মবিরতিতে যান ইন্টার্ন চিকিৎসকরা। যদিও ইন্টার্ন চিকিৎসকদের কর্মবিরতিতে তেমন প্রভাব পড়েনি বলে জানিয়েছেন হাসপাতালের পরিচালক ডা. এস এম সিরাজুল ইসলাম। কারণ ইন্টার্ন চিকিৎসকদের অধিকাংশ আগে থেকেই ছুটিতে আছেন। পরিচালক ডা. এস এম সিরাজুল ইসলাম জানিয়েছেন, ইন্টার্ন চিকিৎসকদের কর্মবিরতি না করার জন্য অনুরোধ করেছিলেন তিনি। গতকাল সকাল থেকে যথারীতি দায়িত্ব পালন করলেও দুপুর ১২টার পর কর্মবিরতি শুরু করেন তারা। মধ্যম পর্যায়ের চিকিৎসকদের দিয়ে বাড়তি পরিশ্রম করিয়ে চিকিৎসা ব্যবস্থা স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।

নিজস্ব প্রতিবেদক রাজশাহী জানান, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসকরা গতকাল সকাল ৮টা থেকে কাজে যোগ দেননি। রামেক হাসপাতাল ইন্টার্ন চিকিৎসকদের মুখপাত্র আবু রায়হান সাংবাদিকদের এ তথ্য নিশ্চিত করেন। তারা দুপুর ১২টার দিকে হাসপাতালের সামনে বিক্ষোভ করেছেন।

নোয়াখালী প্রতিনিধি জানান, নোয়াখালীতে মেডিকেল ইন্টার্নিদের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন আধুনিক হাসপাতালের চিকিৎসকরা। তারা রোগীদের পুরোপুরি জিম্মি করে রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ ও কর্মবিরতি পালন করেন। হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেছে, কোনো রোগীর কাছেই সকাল থেকে কোনো চিকিৎসক আসেননি। নোয়াখালী আবদুল মালেক উকিল মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও জননেতা নুরুল হক আধুনিক হাসপাতালে ইন্টার্নি ডাক্তার পরিষদ গতকাল হাসপাতাল সম্মুখে মানববন্ধন করে। তারা সাত দফা দাবি মেনে নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।

রোগী জিম্মি করে ধর্মঘট অত্যন্ত দুঃখজনক : রোগীর স্বজনদের মারধরে চার সহকর্মীর শাস্তির প্রতিক্রিয়ায় শিক্ষানবিস চিকিৎসকদের কর্মবিরতির কঠোর সমালোচনা করেছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম। রোগীদের জিম্মি করে যে কোনো ধরনের ধর্মঘট অত্যন্ত দুঃখজনক বলে মন্তব্য করেছেন তিনি। গতকাল বিকালে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে নবনির্মিত কিডনি ডায়ালাইসিস সেন্টার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘এটি অত্যন্ত দুঃখজনক। আমাদের ইন্টার্ন, যাদের জন্য আমি ভাতা বাড়িয়ে দিয়েছি। ১৫ হাজার টাকা করেছি। একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে বগুড়ায় রোগীর স্বজনরা আক্রান্ত হয়েছিল। তাদের জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হয়। আশা করি তারা ভুল বুঝতে পারবে, এর পুনরাবৃত্তি হবে না।’ বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এক রোগীর স্বজনকে মারধর ও কান ধরে উঠ-বস করানোর ছবি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক সমালোচনা হয়। ওই ঘটনা তদন্তের ভিত্তিতে চার ইন্টার্ন চিকিৎসককে শাস্তি দিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। বৃহস্পতিবার দুপুরে তাদের শাস্তির ঘোষণা আসার পর সরকারি এই হাসপাতাল থেকে চলে যান শিক্ষানবিস চিকিৎসকরা। তিনদিনেও কাজে ফেরেনি তারা। চার সহকর্মীর শাস্তি বাতিলসহ সাতটি দাবিতে গতকাল মানববন্ধন করেন ইন্টার্ন চিকিৎসকরা। 

সর্বশেষ খবর