রবিবার, ৫ মার্চ, ২০১৭ ০০:০০ টা
কুমিল্লা সিটি নির্বাচন

সাক্কুর সম্পদ বেশি সীমার শিক্ষা

মহিউদ্দিন মোল্লা, কুমিল্লা

কুমিল্লা সিটি করপোরেশন (কুসিক) নির্বাচনে মেয়র পদে বিএনপি প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কুর সম্পদ বেড়েছে। এদিকে সাক্কুর চেয়ে আওয়ামী লীগ প্রার্থী আঞ্জুম সুলতানা সীমার শিক্ষা বেশি, তিনি বিএ, বিএড। তবে প্রার্থীদের মধ্যে বেশি লেখাপড়া স্বতন্ত্র প্রার্থী মেজর (অব.) মামুনুর রশীদের। তার শিক্ষাগত যোগ্যতা এমবিএ। মেয়র পদে পাঁচ প্রার্থীর মধ্যে বিএনপির মনিরুল হক সাক্কু এসএসসি পাস, পেশা ব্যবসা। সীমার পেশা শিক্ষকতা। মামুনের পেশা ওষুধের ব্যবসা। জাসদের (জেএসডি-রব) শিরিন আক্তার এসএসসি পাস, পেশা ব্যবসা। প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক দলের (পিডিপি) প্রার্থী অ্যাড. সোয়েবুর রহমানের শিক্ষাগত যোগ্যতা এলএলবি, তিনি পেশায় আইনজীবী। ২ মার্চ রিটার্নিং কর্মকর্তা ও কুমিল্লার আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তার কাছে প্রার্থীদের জমা দেওয়া হলফনামা থেকে এ তথ্য জানা গেছে। সূত্র জানায়, হলফনামা অনুসারে সম্পদের দিক থেকে এগিয়ে বিএনপির সাক্কু। গত ৫ বছরে তার সম্পদ বেড়েছে। সাক্কুর স্ত্রীর এবং সীমার স্বামী দুজনের সোনার পরিমাণ সমান সমান। তবে বেশি সোনা জাসদের শিরিন আক্তারের। সাক্কু ছাড়া অন্য প্রার্থীদের বিরুদ্ধে মামলা নেই, তার বিরুদ্ধে দুটি মামলা রয়েছে।

সাক্কুর সম্পদ : সদ্যবিদায়ী মেয়র সাক্কুর চেয়ে তার স্ত্রী আফরোজা জেসমিন টিকলীর সম্পদ বেশি। বাড়ি ভাড়া থেকে পান ৭২ হাজার টাকা, ব্যাংক সুদ ২ লাখ ১২ হাজার টাকা ও সম্মানী ভাতা ১১ লাখ ৩৪ হাজার টাকা। অস্থাবর সম্পত্তির মধ্যে নগদ রয়েছে ৮৭ লাখ ৭৭ হাজার টাকা। তার স্ত্রীর নামে নগদ আছে ৫৫ লাখ ৮৬ হাজার টাকা ও ব্যাংকে জমা ৮৭ হাজার টাকা। সঞ্চয়পত্র বাবদ সাক্কুর রয়েছে ২ লাখ টাকা। তার স্ত্রীর এ খাতে আছে ২৯ লাখ ৮৬ হাজার টাকা। তার গাড়ি আছে দুটি। দুজনের সোনা আছে ১০ তোলা করে। তার স্ত্রী ব্যবসায় পুঁজি খাটিয়েছেন ২ কোটি ১২ লাখ ৩৪ হাজার টাকা। স্থাবর সম্পদের মধ্যে সাক্কুর অকৃষি জমি দশমিক ০৯২৩ একর। তার স্ত্রীর দশমিক ০৫ একর। তার স্ত্রীর আবাসিক ও বাণিজ্যিক সম্পদের মধ্যে কুমিল্লা নগরীর রেসকোর্স এলাকায় সেল নিশা টাওয়ারে রয়েছে তিনটি বাণিজ্যিক দোকান, দ্বিতীয় তলায় ১২টি দোকান, তৃতীয় ও চতুর্থ তলার ৭ হাজার ২৫৬ বর্গফুটের দুটি স্পেস, ফাতেমা জাহানারা টাওয়ারে ষষ্ঠ ও সপ্তম তলায় দুটি ফ্ল্যাট এবং ৩ হাজার ২২৯ বর্গফুটের স্পেস। সাক্কুর বিরুদ্ধে ঢাকার রমনা থানায় দুর্নীতি দমন কমিশনের একটি এবং আয়কর আইনে কুমিল্লায় অপর একটি মামলা রয়েছে।

সীমার সম্পদ : সীমার বাড়ি ও দোকান ভাড়া থেকে আয় ৫৪ হাজার টাকা। তিনি শিক্ষকতা করে আয় করেন আড়াই লাখ টাকা এবং অন্যান্য খাত থেকে ২ লাখ ৪৫ হাজার টাকা। অস্থাবর সম্পদের মধ্যে রয়েছে নগদ ৫০ হাজার টাকা, ব্যাংকে জমা ৪৬ লাখ টাকা, সঞ্চয়পত্র বাবদ ২০ লাখ টাকা ও সোনা ৩০ তোলা। এ ছাড়া তার স্বামী নিসার উদ্দিন আহমেদের রয়েছে ৩০ তোলা সোনা। সীমার স্থাবর সম্পদের মধ্যে আছে অকৃষি জমি ১০ শতক ও টিনশেড দালান। তার স্বামীর অকৃষি জমি আছে ২০ শতক, ২ হাজার বর্গফুটের দ্বিতলবিশিষ্ট আবাসিক দালান ও ১ হাজার ২০০ বর্গফুট তিনতলা আবাসিক দালান।

জাসদের শিরিন আক্তারের অস্থাবর সম্পদের মধ্যে নগদ রয়েছে ৩ লাখ ২০ হাজার টাকা, সোনা ৩০ ভরি ও ঋণপত্র ৫০ হাজার টাকা। আর তার স্থাবর সম্পদ আছে ১৪ শতক জমি।

পিডিপি প্রার্থী অ্যাড. সোয়েবুর রহমানের পেশা থেকে আয় ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা। তার অস্থাবর সম্পদের মধ্যে আছে নগদ ১ লাখ টাকা ও ব্যাংকে জমা ২ লাখ টাকা। স্বতন্ত্র প্রার্থী মামুনুর রশীদের বাড়ি ভাড়া থেকে আয় ৩ লাখ ২০ হাজার টাকা। এ ছাড়া তার স্ত্রীর শিক্ষকতা পেশা থেকে আয় ৬০ হাজার টাকা এবং অন্যান্য খাত থেকে দেড় লাখ টাকা। মামুনুর রশীদের অস্থাবর সম্পদ রয়েছে নগদ ১ লাখ টাকা, স্ত্রীর নামে ২ লাখ টাকা ও স্ত্রীর সোনা ৬ লাখ ৩০ হাজার টাকার। আর স্থাবর সম্পদের মধ্যে কৃষি জমি ১১ শতক, অকৃষি জমি ৬০ শতক ও স্ত্রীর একটি বাড়ি। সুজন কুমিল্লা শাখার সাধারণ সম্পাদক আলী আকবর মাসুম বলেন, প্রার্থীদের হলফনামা সব সময় প্রকৃত তথ্য উঠে আসে না। প্রকৃত তথ্য দেওয়া প্রত্যেক প্রার্থীর নৈতিক দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. রকিব উদ্দিন মণ্ডল বলেন, হলফনামায় সবার সঠিক তথ্য দেওয়া উচিত। হলফনামার তথ্যে গরমিল প্রমাণিত হলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। উল্লেখ্য, ৫ ও ৬ মার্চ মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই। ১৪ মার্চ প্রত্যাহার। ১৫ মার্চ প্রতীক বরাদ্দ। ৩০ মার্চ কুমিল্লা সিটি নির্বাচন।

সীমার পক্ষে ১৪  দলকে মাঠে নামানোর চেষ্টা শামিমের : এদিকে সিটি নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী আঞ্জুম সুলতানা সীমার পক্ষে স্থানীয় ১৪ দলকে মাঠে নামানো এবং সমর্থন পেতে গতকাল কুমিল্লায় গিয়ে নেতাদের সঙ্গে কথা বলেছেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এনামুল হক শামীম। ১৪ দলের নেতারা আওয়ামী লীগ প্রার্থীর পক্ষে মাঠে নামবেন বলে জানিয়েছেন। তরীকত ফেডারেশন ী জাতীয় পার্টির নেতারা সীমার পক্ষে কাজ করবেন বলে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক শামীম। গতকাল রাতে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ সহযোগী সংগঠনের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। এনামুল হক শামীম ছাড়াও এতে উপস্থিত ছিলেন প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা আফজল খান, কেন্দ্রীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক আবদুস সবুর, জেলা পরিষদের সাবেক প্রশাসক ওমর ফারুক, দলীয় প্রার্থী আঞ্জুম সুলতানা সীমা, শফিকুল ইসলাম শিকদার, নুর উর রহমান মাহমুদ তানিম, সাজ্জাদ হোসেন, আবদুল কাশেম রওশন, সাজ্জাদ হোসনে স্বপন, পার্থ সারথি দত্ত, চিত্তরঞ্জন ভৌমিক, কবির সিকদার, আনিসুর রহমান মিঠু প্রমুখ।

এ সময় এনামুল হক শামীম বলেন, নৌকার পক্ষে কাজ করতে হবে। সরকারের চলমান উন্নয়নকে এগিয়ে নিতে এবং জননেত্রী শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করতে হলে সব ভেদাভেদ ভুলে আমাদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার বিকল্প নেই। আওয়ামী লীগ যখনই ঐক্যবদ্ধ হয়েছে, তখনই বিজয় এসেছে। ঐক্যবদ্ধ থাকুন—বিজয় আমাদের হবেই।

সর্বশেষ খবর