শিরোনাম
সোমবার, ৬ মার্চ, ২০১৭ ০০:০০ টা

বিচার হলো না ১৮ বছরেও

উদীচী ট্র্যাজেডি

নিজস্ব প্রতিবেদক, যশোর

যশোরের উদীচী হত্যাযজ্ঞের ১৮তম বার্ষিকী আজ। ১৯৯৯ সালের এই দিন মধ্যরাতে যশোর টাউন হল মাঠে (মুন্সী মেহেরুল্লাহ ময়দান) উদীচীর দ্বাদশ জাতীয় সম্মেলনের শেষ দিনের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে পর পর দুটি শক্তিশালী বোমা বিস্ফোরণে নিহত হন ১০ জন। আহত হন আড়াই শতাধিক মানুষ। নৃশংস এই রক্তাক্ত হামলার ১৮ বছর পার হলেও বিচারের মুখোমুখি করা যায়নি এর সঙ্গে জড়িত ঘাতকদের। এমনকি আসলে কারা এই জঘন্য ঘটনা ঘটিয়েছিল তাও উদঘাটন হয়নি আজও। জঘন্য এই হত্যাকাণ্ডের বিচার চাইতে চাইতে হতাশ হয়ে পড়েছেন নিহতের স্বজন, আহত ও সাংস্কৃতিক কর্মীরা। প্রতিবছর এই দিনে শহীদদের স্মরণে আলোচনা, স্মরণসভা, শহীদ স্মারকে  মোমবাতি প্রজ্বালন আর বিচারের একই দাবি করে আসছেন স্বজন বন্ধু ও সাংস্কৃতিক কর্মীরা। উদীচী ট্র্যাজেডিতে নিহত নূর ইসলাম, নাজমুল হুদা তপন, সন্ধ্যা রানী ঘোষ, ইলিয়াস মুন্সী, শাহ আলম বাবুল, বাবুল সূত্রধর, শাহ আলম, বুলু, রতন রায় এবং রামকৃষ্ণের পরিবারের সদস্যদের দীর্ঘশ্বাস কেবল বাড়ছেই। এমন একটি বর্বর ঘটনার বিচার এবং ঘাতকদের শাস্তি না হওয়ায় এক বুক যন্ত্রণা নিয়ে দিন কাটাচ্ছেন বোমা হামলায় আহতরা। উদীচী যশোর ও আদালত সূত্র জানায়, সিআইডির ত্রুটিপূর্ণ চার্জশিটের কারণে ২০০৬ সালের ৩০ মে আদালত থেকে খালাস পেয়ে যায় এই মামলার সব আসামি। পরে সরকার ওই রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করলে মামলাটি পুনরুজ্জীবিত হয়। কিন্তু এরপর থেকেই তা আটকে আছে আইনের বেড়াজালে। বিচারের এই দীর্ঘ বিড়ম্বনায় ক্ষুব্ধ যশোরের মানুষ এখন দ্রুত এ মামলা চালু করার দাবি জানান। উদীচী ট্র্যাজেডিতে নিহত তপনের বোন নাজমুস সুলতানা বিউটি বলেন, বর্তমান সরকারের আমলে অনেক বিচার হচ্ছে। কিন্তু দীর্ঘদিনেও উদীচী ট্র্যাজেডির বিচার হচ্ছে না। আমার মা বার্ধক্যে পড়েছেন। মৃত্যুর আগে সন্তান হত্যার বিচার দেখে যেতে চান। প্রধানমন্ত্রীর কাছে দাবি দ্রুত উদীচী হত্যা মামলার বিচার সম্পন্ন করে দোষীদের সর্বোচ্চ শাস্তি দেওয়া হোক। উদীচী ট্র্যাজেডিতে দুই পা হারানো নাহিদ বলেন, দুঃসহ যন্ত্রণা নিয়ে বেঁচে আছি। প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন হামলাকারীদের বিচার দেখতে চাই। বোমা হামলায় এক পা হারানো সুকান্ত দাস বলেন, ‘একের পর এক বছর চলে যাচ্ছে। কিন্তু উদীচী হামলার ঘটনায় জড়িতদের বিচারের মুখোমুখি করা সম্ভব হয়নি। প্রকৃত অপরাধীদের শাস্তি চাই, সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। এ জন্য সরকারের আন্তরিকতা প্রয়োজন। ১৯৯৯ সালে উদীচী ট্র্যাজেডির সময় আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় ছিল। বতর্মানেও আওয়ামী লীগের সরকার ক্ষমতায় রয়েছে। তাহলে উদীচী ট্র্যাডেজির বিচার কেন বিলম্বিত হচ্ছে। অবিলম্বে উদীচী হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবি করছি।’ উদীচী যশোরের সভাপতি ডিএম শাহিদুজ্জামান বলেন, সাংস্কৃতিক সংগঠন হিসেবে রাজনৈতিক শক্তির বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই করা সম্ভব নয়। তারপরও উদীচী বোমা হামলার ঘটনার বিচার দাবিতে আমরা সোচ্চার আছি। যশোরের মানুষ এ হত্যাকাণ্ড মেনে নেয়নি। আমরা প্রকৃত অপরাধীদের শাস্তি দাবি করছি। যশোরের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) রফিকুল ইসলাম পিটু জানান, বর্তমানে মামলাটি উচ্চ আদালতে বিচারাধীন। ২৩ আসামির মধ্যে দুজন নিহত এবং একজন মৃত্যুবরণ করেছেন। বাকিরা জামিনে রয়েছেন।

সর্বশেষ খবর