শনিবার, ১১ মার্চ, ২০১৭ ০০:০০ টা

পাটের বৈচিত্র্যময় সমাহার

নিজস্ব প্রতিবেদক

পাটের বৈচিত্র্যময় সমাহার

মেলায় ঢুকতেই চোখ আটকে যায় নান্দনিকতায় সজ্জিত একটি ঘরের দিকে। ঘরের ভিতরে ঢুকলেই দেখা যায় বিছানায় পাতা দৃষ্টিনন্দন চাদর এর সঙ্গে মিলিয়ে পাশে রাখা একটি সোফা। আর এগুলোর সঙ্গে ম্যাচিং করে সোফার কুশন কভার, ঘরের পর্দা, কোনায় ঝোলানো ফুলের টব দিয়ে সাজানো সুশ্রী বাসগৃহ। কিন্তু এর ভিন্নতা হলো সব কিছুই তৈরি করা হয়েছে পাট থেকে। একটি স্টলে পাট দিয়ে তৈরি করা হয়েছে জাতির পিতার আবক্ষ মূর্তি যা তাক লাগিয়ে দেয় মেলায় আসা দর্শনার্থী ও ক্রেতাদের।

মানুষের মনে একটা ধারণা তৈরি হয়েছিল যে পাট দিয়ে বস্তা ছাড়া আর কিছুই তৈরি করা যায় না। সেই ধারণাকে ভুল প্রমাণ করে সোনালি আঁশের গৌরব ফিরিয়ে আনতে পাট দিয়ে তৈরি বাহারি পণ্য নিয়ে মেলায় এসেছিলেন উদ্যোক্তারা। রাজধানীর খামারবাড়ী কৃষিবিদ ইনস্টিটিউটে আয়োজিত পাটজাত পণ্য মেলার দ্বিতীয়  দিনে ক্রেতার ভিড়ে সরব ছিল মেলা প্রাঙ্গণ। গতকাল সকাল ১০টা থেকে শুরু হয়ে মেলা চলে রাত ৯টা পর্যন্ত। সারা দিনই মেলায় ছিল উপচেপড়া ভিড়। মেলা ঘুরে দেখা যায়, উদ্যোক্তারা নিত্যদিনের প্রয়োজনীয় উপকরণ থেকে শৌখিন সামগ্রী কিছুই বাদ যায়নি পাট দিয়ে তৈরি পণ্যের তালিকা থেকে। পাট দিয়ে তৈরি হচ্ছে শাড়ি, শার্ট, পলিথিন, পাঞ্জাবি, জিন্স, ব্লেজার, জ্যাকেট, সালোয়ার-কামিজ, ফ্রক, বিছানার চাদর, সোফা ও কুশনের কভার, ফুলের টব, পাপোশ, ফুলের বিভিন্ন ধরনের টব, শিশুদের খেলনা পুতুল, বল, স্যান্ডেল, ফাইল, বক্স, ঝুড়ি, রকমারি ব্যাগসহ নানান পণ্য। মেলায় ১০০টি স্টলে চলছে জমজমাট বেচাবিক্রি। নিজের দেশের পণ্যকে আপন করে নিয়ে শখ এবং প্রয়োজনীয়তার কথা মাথায় রেখে বাহারি পণ্যে ব্যাগ ভর্তি করছেন ক্রেতারা। কেনাকেটার বিষয়ে জানতে চাইলে পল্লবীর বাসিন্দা আবির মাহমুদ বলেন, পরিবারের সদস্যরা সবাই মিলে ছুটির দিনে ঘুরতে এবং কিছু কিনতে এসেছিলাম। কিন্তু পাট থেকে যে পলিথিন তৈরি করা সম্ভব এটা কখনো স্বপ্নেও ভাবিনি। পাট দিয়ে যদি দৃষ্টিনন্দন ও স্বাস্থ্যসম্মত পণ্য তৈরি করা যায় তাহলে প্লাস্টিক আর বিদেশি পণ্য দিয়ে ঘর ভর্তি করার কোনো মানেই হয় না। বাংলাদেশ পাট করপোরেশন, জুট ডাইভারসিফিকেশন প্রোমোশন সেন্টার (জেডিপিসি) এবং ৬৫ জন উদ্যোক্তার আয়োজনে জমে উঠেছে এ মেলা। খুলনার এক উদ্যোক্ত বলেন, আমরা পাট নিয়ে অনেক দিন ধরেই কাজ করছি। কিন্তু মানুষকে এই পণ্যগুলোর ব্যাপারে জানানো প্রয়োজন ছিল। আমরা এতদিন পাটজাত পণ্য রপ্তানি করার চিন্তা করছিলাম কিন্তু এখানে এসে দেখছি দেশের মানুষের যে পরিমাণ চাহিদা তা পূরণ করতেই আমাদের হিমশিম খেতে হবে। মেলায় বিভিন্ন রকমের থ্রি-পিস, কামিজ এবং রকমারি ফেব্রিক্স সামগ্রী নিয়ে স্টল দিয়েছেন এক ডিজাইনার। তিনি বলেন, আমি এই মেলাতে পণ্য বিক্রি করতে আসিনি বরং ক্রেতাদের মতামত নিতে এবং এ ধরনের পণ্য যে পাট থেকে তৈরি করা যায় তা জানাতে এসেছি। আর ক্রেতাদের ব্যাপক সাড়া পেয়েছি যা আমাদের অনুপ্রাণিত করেছে। মেলায় কেনাকাটা করতে আসা এক কোরিয়ান নাগরিক বলেন, পাট দিয়ে যে এত পণ্য তৈরি হতে পারে এটা আমি এর আগে কখনো দেখিনি। পণ্যগুলো যেমন দৃষ্টিনন্দন তেমনি প্রয়োজনীয়।

সর্বশেষ খবর