শনিবার, ১১ মার্চ, ২০১৭ ০০:০০ টা

কমছে খেলাপি বেড়েছে প্রভিশন ঘাটতি

মোট বকেয়া ঋণ ৬ লাখ ৭৩ হাজার ৯২০ কোটি টাকা

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর শ্রেণিকৃত ঋণ, বকেয়া ও খেলাপি সংক্রান্ত যে পারফরম্যান্স রিপোর্ট সম্প্রতি সরকারের কাছে পাঠানো হয়েছে, সে অনুযায়ী খেলাপি ঋণের পরিমাণ কিছু কমলেও বেড়ে গেছে প্রভিশন ঘাটতি। গত বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত তিন মাসেই কেবল প্রভিশন ঘাটতি বেড়ে হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে গত ২ মার্চ এই প্রতিবেদনটি অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে পাঠানো হয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শ্রেণিকৃত ও খেলাপি ঋণ কমার বিষয়টি ব্যাংকিং খাতের জন্য সুখবর হলেও প্রভিশন ঘাটতি বেড়ে যাওয়ার বিষয়টি উদ্বেগের। কারণ এই ঘাটতি অতীতে কেবলমাত্র রাষ্ট্র মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোতেই হয়েছে। দেশি-বিদেশি বেসরকারি ব্যাংকগুলোর প্রভিশন ঘাটতি দেখা যায়নি। বরং অনেক ব্যাংকের প্রভিশন উদ্বৃত্ত দেখা গেছে। এ ছাড়া খেলাপি ঋণ কমিয়ে দেখানোর হিসাবে কোনো কারসাজি রয়েছে কি-না সেটিও খতিয়ে দেখা উচিত। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ বলেন, ডিসেম্বর শেষে ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে যে প্রতিবেদনটি দেওয়া হয়েছে, সেটি কিছুটা অসামঞ্জস্যপূর্ণ বলে মনে হচ্ছে। কারণ শ্রেণিকৃত ঋণের সঙ্গে প্রভিশন ঘাটতির বিষয়টি সম্পর্কযুক্ত। অনেক ক্ষেত্রে পারফরম্যান্স ভালো দেখানোর জন্যও শ্রেণিকৃত ঋণের হিসাব কম উল্লেখ করার প্রবণতা দেখা যায় ব্যাংকগুলোর মধ্যে। যাই হোক,  শ্রেণিকৃত ঋণ কমার পরও কেন প্রভিশন ঘাটতি বেড়ে যাচ্ছে এটি খতিয়ে দেখা উচিত বাংলাদেশ ব্যাংকের। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী গত বছরের সেপ্টেম্বরে ব্যাংকিং খাতে মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৫৮ হাজার ৮৭৭ কোটি টাকা। তিন মাস পর ৩১ ডিসেম্বর শেষে বাংলাদেশ ব্যাংক যে হিসাব দেখাচ্ছে, তাতে খেলাপি ঋণ কমে ৫৬ হাজার ৯৫৬ কোটি টাকায় নেমে এসেছে। দেখা যাচ্ছে, তিন মাসে খেলাপির পরিমাণ কমেছে ১ হাজার ৯২০ কোটি টাকা। শতকরা হিসাবে গত সেপ্টেম্বরে ব্যাংকিং খাতে মোট শ্রেণিকৃত ঋণের হার ছিল ৯ দশমিক ২৬ শতাংশ, যা ডিসেম্বর শেষে ৮ দশমিক ৪৫ শতাংশে নেমে এসেছে। প্রতিবেদনে খেলাপি ঋণের পাশাপাশি শ্রেণিকৃত ঋণের হারও কমার চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী ৩১ ডিসেম্বর শেষে ব্যাংকিং খাতের মোট বকেয়া ঋণের পরিমাণ ৬ লাখ ৭৩ হাজার ৯২০ কোটি টাকা, যার মধ্যে শ্রেণিকৃত ঋণ ৬২ হাজার ১৭২ কোটি টাকা। তিন মাস আগে গত বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর শেষে শ্রেণিকৃত ঋণের পরিমাণ ছিল ৬৫ হাজার ৭৩১ কোটি টাকা। এ হিসাবে তিন মাসে ব্যাংকিং খাতে শ্রেণিকৃত ঋণ কমেছে ৩ হাজার ৫৫৮ কোটি টাকা। প্রতিবেদনে এরপরেই প্রভিশন ঘাটতির হিসাব বেড়ে যাওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়। প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী গত সেপ্টেম্বরে ব্যাংকগুলোর প্রভিশন ঘাটতি ছিল প্রায় ৪ হাজার ৩৮২ কোটি টাকা। এই ঘাটতি বেড়ে ৩১ ডিসেম্বর শেষে ৫ হাজার ৪৭০ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। এ হিসাবে তিন মাসে প্রভিশন ঘাটতি বেড়েছে এক হাজার ৮৮ কোটি টাকা। প্রতিবেদন অনুযায়ী অবশ্য সরকার মালিকানাধীন তিন ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতির পরিমাণ ৬ হাজার ৮০ কোটি টাকা। তবে এর মধ্যে বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংক এবং সরকারি বিডিবিএল-এর প্রভিশন উদ্বৃত্ত থাকার পাশাপাশি অগ্রণী ও জনতা ব্যাংকে প্রভিশন ঘাটতি না থাকায় সামগ্রিক হিসাবে ঘাটতির পরিমাণ কিছুটা কমেছে।

সর্বশেষ খবর