সোমবার, ১৩ মার্চ, ২০১৭ ০০:০০ টা

নতুন নেতৃত্বের পথ রুদ্ধ রাখা হয়েছে

—— খায়রুল কবির খোকন

নিজস্ব প্রতিবেদক

নতুন নেতৃত্বের পথ রুদ্ধ রাখা হয়েছে

বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও ডাকসুর সাবেক সাধারণ সম্পাদক খায়রুল কবির খোকন ডাকসু নির্বাচন না দেওয়ার সমালোচনা করে বলেছেন, এই নির্বাচন না দিয়ে নতুন নেতৃত্ব তৈরির পথ রুদ্ধ করে রাখা হয়েছে। নব্বইয়ের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের সাহসী এই ছাত্রনেতা বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে আলাপের সময় আক্ষেপ করে বলেন, ১৯৯০ সালের ৬ জুন অনুষ্ঠিত ডাকসু নির্বাচনে সাধারণ সম্পাদক (জিএস) নির্বাচিত হয়েছিলাম। সে নির্বাচনের পর এখন পর্যন্ত আর ডাকসু নির্বাচন হয়নি। তাই মানুষ এখনো আমাকে ডাকসুর জিএস হিসেবে মনে করে। কিন্তু আমি এটাকে এখন অনেকটা অভিশাপ বলে মনে করি। কারণ আমি আমৃত্যু এই উপাধি ধারণ করে যেতে চাই না। আমি চাই, অবিলম্বে ডাকসু নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন নতুন নেতৃত্ব তৈরির দ্বার উন্মোচিত হোক। তবে এ নির্বাচনের আগে দেশের শিক্ষাঙ্গনগুলোতে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ ও সব ছাত্র সংগঠনের সহাবস্থান নিশ্চিত করতে হবে। ছাত্র সমাজ, রাজনৈতিক নেতা ও সুশীল সমাজসহ সবাইকেই এগিয়ে আসতে হবে। রাষ্ট্রপতির এ সংক্রান্ত সাম্প্রতিক বক্তব্যে আমরা খুবই খুশি হয়েছি। তবে তার সরকার ও দল যদি আরও আগে এ উদ্যোগ নিত তাহলে ভালো হতো। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানের ভাষণে রাষ্ট্রপতির ‘ডাকসু নির্বাচনের আয়োজনকে অনিবার্য’ মন্তব্যের প্রতি শতভাগ সমর্থন জানান খায়রুল কবির খোকন। তিনি বলেন, শুধু রাষ্ট্রপতিই নন, দেশের সব মহলই চাচ্ছেন অবিলম্বে ডাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক। আর ডাকসু নির্বাচনের সঙ্গে সঙ্গে অন্যান্য সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নির্বাচনের ব্যবস্থাও করতে হবে। কিন্তু দুঃখের সঙ্গে বলতে হয়, নব্বইয়ের পর এ পর্যন্ত যত সরকারই ক্ষমতায় এসেছে- তাদের সবাই ছিল ডাকসু নির্বাচন নিয়ে উদাসীন। আমরা ’৯৮ সাল পর্যন্ত কমিটিতে ছিলাম। এর মধ্যে চেয়েছিলাম নতুন নির্বাচন দিয়ে বিদায় নিতে। কিন্তু পারিনি। অথচ বিগত ২৭ বছরে ২৭টি না হলে অন্তত ২০টি নির্বাচন হলেও ভিপি ও জিএস দুজন করে ৪০ জন নতুন নেতা তৈরি হতো। যারা দেশের রাজনীতিতে ভূমিকা রাখতে পারত। বিদ্যমান রাজনৈতিক নেতৃত্বের অভাবও পূরণ হতো। কিন্তু সেটি বন্ধ করে রেখেছে আমাদের দেশের সরকারগুলো। কারণ এ নির্বাচন দিলে ছাত্র সংগঠনগুলো সক্রিয় ও সংগঠিত হবে। সরকারের জন্য তা ভীতির কারণ হবে। এমনকি সরকারবিরোধী আন্দোলনও তৈরি হতে পারে। এসব কথা চিন্তা করেই ডাকসু নির্বাচন নিয়ে সরকারগুলোর যত অনীহা। কিন্তু নেতৃত্ব শূন্যতার এই নেতিবাচক প্রভাব ধীরে ধীরে সমগ্র দেশ ও রাজনীতিকেই গ্রাস করে চলেছে। অযোগ্য, মেধাহীন ও দেশপ্রেমহীন নেতৃত্ব যেভাবে বেড়ে চলেছে- তা অব্যাহত থাকলে পুরো জাতিকেই একদিন তার খেসারত দিতে হবে। খোকন আরও বলেন, এ পর্যন্ত যত গণতান্ত্রিক আন্দোলন হয়েছে এবং তার মাধ্যমে বৃহৎ যত অর্জন এসেছে- তার সবকিছুর সঙ্গেই ডাকসুর নেতৃত্ব জড়িত। বিশেষ করে নব্বইয়ের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে ডাকসুর শক্তিশালী ভূমিকা সম্পর্কে সমগ্র জাতি অবহিত। একই বছরের ৬ জুন অনুষ্ঠিত নির্বাচনের মাধ্যমে ডাকসু গঠনের কিছু দিনের মধ্যেই নাজিমুদ্দিন জিহাদের মৃত্যুর পর তার লাশকে সামনে রেখে সব ছাত্র সংগঠনের নেতারা শপথ নিয়ে যে বৃহৎ ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তুলেছিলাম- ডা. শামছুল আলম মিলনের মৃত্যুর পর সে আন্দোলন আরও বেগবান হয়। এর পেছনে মুখ্য অবদান ছিল ডাকসুরই। তাই সুশীল সমাজসহ ছাত্র ও রাজনৈতিক সংগঠনগুলোর প্রতি আমার অনুরোধ— সবাই সোচ্চার হয়ে সরকারকে ডাকসু নির্বাচনের জন্য সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরি করে সে নির্বাচনের ব্যবস্থা করুন।

সর্বশেষ খবর