বুধবার, ১৫ মার্চ, ২০১৭ ০০:০০ টা

পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ মেহেরপুরে চারজন নিহত

মেহেরপুর প্রতিনিধি

মেহেরপুর সদর উপজেলায় পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ চার যুবক নিহত হয়েছেন। নিহতরা হলেন সদর  উপজেলার  টুঙ্গি গ্রামের মনিরুল ইসলামের ছেলে সোহাগ হোসেন (২৩), পিরোজপুর গ্রামের কামাল হোসেনের ছেলে কামরুজ্জামান কানন (২৫), সোনাপুর গ্রামের কর্মকারপাড়ার ভাদু হোসেনের ছেলে সাদ্দাম হোসেন (২৬) ও রসময় কর্মকারের ছেলে রমেশ কর্মকার (২৩)।

পুলিশ জানিয়েছে, সোমবার দিবাগত ভোররাত ৩টার দিকে সদর উপজেলার নূরপুর মোড়ের আকামতের লিচুবাগানে এ বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটে। নিহতদের মধ্যে রমেশ ছাড়া বাকি তিনজনের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে। এ বন্দুকযুদ্ধে সহকারী পুলিশ সুপার (সার্কেল) আহসান হাবিবসহ পুলিশের সাত সদস্য আহত হয়েছেন। আহত অন্য পুলিশ সদস্যরা  হলেন এসআই তারিক আজিজ, রফিকুল ইসলাম, কনস্টেবল আবদুল মান্নান, আবদুল ওয়াহেদ, মিথান সরকার ও শহিদুল ইসলাম। ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ একটি রিভলবার, একটি কাটারাইফেল, ১১টি বোমা, দুটি ছোরা, দুটি রামদা উদ্ধার করেছে। নিহতরা কোনো চরমপন্থি দলের সদস্য নয়। তবে পুলিশ ধারণা করছে, চরমপন্থি দলের সদস্যরা তাদের বিভিন্ন অপরাধমূলক কাজে ব্যবহার করতে পারে। তারা ৬ মার্চ সদর উপজেলার সোনাপুর গ্রামে দুই আওয়ামী লীগ কর্মী আবদুল মজিদ ও আশাদুল ইসলাম হত্যাকাণ্ডে সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করেছে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন পুলিশ সুপার। এদিকে বন্দুকযুদ্ধে চারজন নিহত হওয়ার ঘটনায় পিরোজপুর ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য ওয়াহেদুর রহমান ডাবলুর লোকজন আনন্দ-উল্লাস করে মিষ্টিমুখ করেছে। তবে নিহতদের প্রতিবেশীদের মধ্যে শোকের ছায়া বিরাজ করতে দেখা গেছে। ইউপি সদস্য ওয়াহেদুর রহমান ডাবলু বলেন, ‘পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে চার সন্ত্রাসী নিহত হওয়ায় আমরা এলাকায় শান্তিতে ঘুমাতে পারব।’ অন্যদিকে নিহত কামরুজ্জামান কাননের প্রতিবেশীরা জানান, দীর্ঘদিন ধরে কানন এলাকাছাড়া ছিলেন। তিনি একমুহূর্তের জন্য বাড়িতে এলে তার পিছু নিয়ে পুলিশ তাকে ধরতে আসত। পুলিশের ভয়ে তিনি বাড়িতেই থাকতে পারতেন না। সোনাপুর গ্রামে নিহত সাদ্দামের হোসেনের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, সাদ্দামের স্ত্রী শোকে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন। স্বামীর শোকে তিনি পাগলপ্রায়। মা আকলিমা খাতুন ছেলের শোকে মাটিতে আছড়িয়ে পড়ে আহাজারি করছেন। আকলিমা খাতুন জানান, সাদ্দাম ঢাকায় রাজমিস্ত্রির কাজ করত। মাঝেমধ্যে মোবাইলে কথা হতো। গতকাল তাকে পুলিশ কাজ করা অবস্থায় ঢাকা থেকে ধরে নিয়ে এসে মেরে ফেলেছে। চার যবকের হত্যার বিষয় নিয়ে এলাকায় চাপা উত্তেজনা বিরাজ করছে। বেশির ভাগ গ্রামবাসী মনে করছেন, বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা পুলিশের সাজানো নাটক। গ্রামবাসী এটিকে হত্যা বলে দাবি করেন। এদিকে এ ঘটনায় জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে গতকাল বেলা ১১টায় পুলিশ সুপারের সম্মেলন কক্ষে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার আনিছুর রহমান ঘটনার বিবরণ দেন। পুলিশ সুপার বলেন, মেহেরপুর সদর থানার একটি দল ঢাকার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে ৬ মার্চ সদর উপজেলার কাঁঠালপোঁতা গ্রামে আবদুল মজিদ ও আসাদুল ইসলাম হত্যা মামলার সন্দিগ্ধ আসামি সাদ্দাম হোসেন, রমেশ কর্মকার, কামরুজ্জামান কানন ও সোহাগকে প্রেপ্তার করে মেহেরপুরে নিয়ে আসে। জিজ্ঞাসাবাদে আসামিরা হত্যার কথা স্বীকার করেছে।স্বীকারোক্তি অনুযায়ী সহযোগী আসামিদের গ্রেপ্তার, অবৈধ অস্ত্র ও বোমা উদ্ধারে তাদের নিয়ে পুলিশ নূরপুর গ্রামে যায়। এ সময় তাদের সহযোগীরা পুলিশের ওপর গুলি ছোড়ে। পুলিশ তখন আত্মরক্ষায় পাল্টা গুলি ছুড়লে উভয় পক্ষে বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটে। এতে আসামিদের সহযোগীদের ছোড়া গুলিতে ওই চারজন গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যায়।

সর্বশেষ খবর