শিরোনাম
শনিবার, ১৮ মার্চ, ২০১৭ ০০:০০ টা

ধর্ম কাউকে খুনের অধিকার দেয়নি : প্রধানমন্ত্রী

শ্রদ্ধা ভালোবাসায় জাতির পিতাকে স্মরণ

নিজস্ব প্রতিবেদক ও গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি


ধর্ম কাউকে খুনের অধিকার দেয়নি : প্রধানমন্ত্রী

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৯৭তম জন্মবার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবসে গতকাল রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ টুঙ্গিপাড়ায় সমাধিতে শ্রদ্ধা জানানো শেষে মন্তব্য বইয়ে স্বাক্ষর করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ সময় উপস্থিত ছিলেন —পিআইডি

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, প্রত্যেক ধর্মেরই মর্মবাণী হলো, শান্তির বাণী প্রচার করা। কাজেই যে যে ধর্মই গ্রহণ করুক না কেন, সবাইকে মাথায় রাখতে হবে যার যার ধর্ম সে সে পালন করবে। ধর্মে সব সময় শান্তি, ভ্রাতৃত্বের, সৌহার্দ্যের কথা বলা হয়েছে। সেটা সবাইকে মেনে চলতে হবে। আমাদের ধর্ম ইসলাম অত্যন্ত পবিত্র ধর্ম, শান্তির ধর্ম। ধর্ম কাউকে খুন করার অধিকার দেয়নি। তিনি বলেন, আমরা শিক্ষা নয়, ধর্মীয় শিক্ষাকেও বাধ্যতামূলক করেছি। কিন্তু ধর্মান্ধতা যেন না আসে। বঙ্গবন্ধুর ৯৭তম জন্মবার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবস উপলক্ষে টুঙ্গিপাড়ায় এক শিশু সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান   শৈশব থেকেই পরোপকারী ছিলেন জানিয়ে সমাবেশে আসা শিশুদের তা অনুসরণ করতে বলেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, আদর্শ নিয়ে বড় হতে হবে। দেশের মানুষকে ভালোবাসতে হবে। একদিন তোমরা দেশের কর্ণধার হবে। আমার মতো প্রধানমন্ত্রীও হতে পার। সেই আত্মবিশ্বাস নিয়ে বড় হতে হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, শিশুরা যেন বিপথে না যায় সে বিষয়ে অভিভাবকসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে বিশেষ নজর দিতে হবে এবং তারা শ্রেণিকক্ষে অনুপস্থিত থাকছে কী না- সে বিষয়ে খোঁজ রাখতে হবে। আজকের শিশুদের বাবার হাত ধরে স্কুলে যাওয়ার কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা কিন্তু বাবার হাত ধরে স্কুলে যেতে পারিনি। আমরা তার সঙ্গে জেলখানায় দেখা করতে যেতাম। তিনি বাংলার মানুষের অধিকারের কথা বলতেন। বঙ্গবন্ধুকে বার বার কারাগারে নিক্ষেপ করলেও সংগ্রামের পথ থেকে তিনি ‘দমে যাননি’ বলে মন্তব্য করেন শেখ হাসিনা।

জাতির পিতা শিশুদের অত্যন্ত ভালোবাসতেন মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি যে শিক্ষা দিয়েছেন, তার পদাঙ্ক অনুসরণ করেই আমরা কাজ করে যাচ্ছি। জাতির পিতা বলতেন, যদি সোনার বাংলা গড়তে চাই তাহলে সোনার ছেলে-মেয়ে চাই। সবার জন্য শিক্ষা নিশ্চিত করার লক্ষ্যের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, একটা শিশুও যেন শিক্ষার বাইরে না থাকে। একটা শিশুও পথশিশু থাকবে না, টোকাই বলে কিছু থাকবে না। একটা শিশুও রাস্তায় ঘুরবে না। বঙ্গবন্ধু সব মানুষকে ‘সমানভাবে ভালোবাসতেন’ মন্তব্য করে শেখ হাসিনা অনুষ্ঠানে আসা শিশুদের সামনে তার বাবার শৈশবের বিভিন্ন ঘটনার কথা তুলে ধরেন। ছোটবেলা থেকেই তিনি পারোপকার করতেন। নিজের বই দিয়ে দিতেন। স্কুলের সহপাঠী, বন্ধুদের বাড়িতে নিয়ে আসতেন, খাবার খাওয়াতেন। সকালে টুঙ্গিপাড়ায় এসে বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরে প্রধানমন্ত্রী সমাধি প্রাঙ্গণে বইমেলার উদ্বোধন করেন এবং ‘খোকা থেকে বঙ্গবন্ধু’ শীর্ষক আলোকচিত্র প্রদর্শনী ঘুরে দেখেন। সেখানেই বিকাল সাড়ে ৩টায় শিশু সমাবেশ ও আলোচনা সভার আয়োজন করে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়। পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী উপমা বিশ্বাসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে শিশুদের পাশাপাশি অভিভাবকরাও অংশ নেন। অন্যদের মধ্যে মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।

শ্রদ্ধা-ভালোবাসায় জাতির পিতাকে সঙ্গরণ : বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে যথাযোগ্য মর্যাদায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৯৮তম জন্মদিন উদ্যাপিত হয়েছে। একই সঙ্গে জাতি দিনটিকে জাতীয় শিশু দিবস হিসেবেও পালন করেছে। গতকাল দিবসটি উপলক্ষে জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ, কেক কাটা, দোয়া ও মিলাদ মাহফিল, মোনাজাত, প্রার্থনা, আলোচনা সভা, শোভাযাত্রা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, বইমেলা, স্বেচ্ছায় রক্তদান, বিনামূল্যে চিকিৎসা, পুরস্কার বিতরণ, প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়।

ভোর সাড়ে ৬টায় জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন দল ও সংগঠনের কর্মসূচি শুরু হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সকাল ৭টায় ধানমন্ডির বঙ্গবন্ধু ভবনের সামনে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। পরে দলীয় প্রধান হিসেবে নেতা-কর্মীদের নিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

এ সময় শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন, দলের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সাংগঠনিক সম্পাদক এনামুল হক শামীম, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, প্রচার সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ, দফতর সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। পরে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন এবং জাসদ সাধারণ সম্পাদক শিরিন আখতারের নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় ১৪ দলের পক্ষ থেকে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। এ সময় সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া, আওয়ামী লীগের মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক মৃণালকান্তি দাস প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধু ভবন এলাকা ত্যাগ করার পর বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে তার স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এদিকে বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন উপলক্ষে সকাল ১০টায় গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এ সময় বাংলাদেশ সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর একটি চৌকস দল গার্ড অব অনার প্রদান করে। পরে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু ও ১৫ আগস্টে শহীদদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে মোনাজাতে অংশ নেন। বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন এবং জাতীয় শিশু দিবস উপলক্ষে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রুহের মাগফিরাত কামনা করে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে সকাল ১০টায় বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে কোরআনখানি, মিলাদ ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে।

এ ছাড়া বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন উপলক্ষে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মসজিদভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রম প্রকল্পের আওতায় প্রাক্-প্রাথমিক, বয়স্ক ও সহজ কোরআন শিক্ষার মোট ৫৯ হাজার ৯৬৮টি কেন্দ্রে এবং ইসলামিক মিশনের আওতায় ১৯টি ইবতেদায়ি মাদ্রাসা ও ৩৯৫টি মক্তবসহ সারা দেশে ৬০ হাজার ৩৮২ স্থানে সকাল ৯টায় অনুরূপ কোরআনখানি, মিলাদ ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। এদিকে বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন ও জাতীয় শিশু দিবস উপলক্ষে বেলা সাড়ে ১১টায় ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে বিশেষ প্রার্থনা সভার আয়োজন করা হয়। এতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আত্মার শান্তি ও সদগতি কামনা করা হয়। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন ও জাতীয় শিশু দিবসে পথশিশুদের মাঝে খাবার, পানি ও বিভিন্ন শিক্ষা উপকরণ বিতরণ করেন ছাত্রলীগ সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ। গতকাল দুপুরে রাজধানীর পরীবাগে দুই শতাধিক পথশিশুর মাঝে এসব বিতরণ করা হয়। বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন উপলক্ষে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের পক্ষ থেকে জাতীয় প্রেস ক্লাবে স্থাপিত বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন ও জাতীয় শিশু দিবস উদ্যাপিত হয়েছে। এর মধ্যে ছিল সকালে বঙ্গবন্ধুর প্রতকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ, আলোচনা সভা, শিশু চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, সংগীতানুষ্ঠান প্রভৃতি। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র মিলনায়তনে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক সভাপতিত্ব করেন। এ ছাড়া কেন্দ্রীয় মসজিদসহ আবাসিক হল, হোস্টেল, মসজিদ ও উপাসনালয়ে দোয়া ও প্রার্থনা করা হয়। চারুকলা অনুষদের উদ্যোগে সকালে ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের ক্যাফেটেরিয়ায় চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়।

এ উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু গবেষণা পরিষদ ধানমন্ডির বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে র‍্যালি ও সমাবেশের আয়োজন করে। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক স্টার সিনেপ্লেক্সে বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন উপলক্ষে কেক কেটে প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন। গেন্ডারিয়ার ফজলুল হক মহিলা বিশ্ববিদ্যালয় কলেজেও বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন পালিত হয়।

সর্বশেষ খবর