সোমবার, ২০ মার্চ, ২০১৭ ০০:০০ টা

চাই শিল্পপার্ক ও ব্যাংক স্থাপন

মনোয়ারা হাকিম আলী

নিজস্ব প্রতিবেদক


চাই শিল্পপার্ক ও ব্যাংক স্থাপন

নারী উদ্যোক্তাদের জন্য শিল্পপার্ক ও নারী ব্যাংক প্রতিষ্ঠাই এখন উদ্যোক্তাদের প্রধান দাবি। আর এর বাস্তবায়ন হলে নারীর ক্ষমতায়নের যাত্রা আরও সমৃদ্ধ হবে। এমনকি সামাজিকভাবেও নারী উদ্যোক্তারা এখন বেশ সম্মানিত। এ বিষয়ে নারীদের আগের চেয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি পেয়েছে। মেয়েরাও এখন বুঝতে পেরেছে যে, অলস বসে না থেকে তার পরিবার ও দেশের জন্য তাকে কিছু করতে হবে। এর ধারাবাহিকতায় ঢাকার বাইরে পার্বত্য এলাকাসহ মোট ১১টি জেলায় নারী উদ্যোক্তাদের চেম্বার গড়ে তোলা হয়েছে। ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআইসি) পরিচালক ও  চট্টগ্রাম উইম্যান চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের প্রতিষ্ঠাতা মনোয়ারা হাকিম আলী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, আশার কথা হচ্ছে এবার ইন্দোনেশিয়া সফরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে যে নারী উদ্যোক্তারা গিয়েছিলেন তাদের কাছে তিনি নারীদের জন্য আলাদা একটি ব্যাংক তৈরির ব্যাপারে আশ্বাস দিয়েছেন। এ ব্যাপারে আমরা বেশ আশাবাদী। এ ছাড়া শিল্প মন্ত্রণালয় থেকে আমাদের জন্য ১০০ একর জমি বরাদ্দ করা হয়েছে। বিসিক থেকেও আমাদের প্লট দেওয়া হবে। এফবিসিসিআইসির পরিচালক বলেন, নারী উদ্যোক্তারা নিজ সংসারের সচ্ছলতা আনতে এবং দেশের অর্থনীতিতে বহুদিন ভূমিকা রেখে এলেও তাদের সেভাবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। তারা সমাজে বিক্ষিপ্তভাবে ছিল। সমাজে তাদের তেমন কোনো প্রভাব ছিল না। প্রথমদিকে শহরের হাতে গোনা কয়েকজন নারী টুকটাক ব্যবসা করতেন। কেউ কেউ তাদের বাবা ও স্বামীর ব্যবসা সামাল দিয়েছেন। অর্থাৎ সে অর্থে এই নারীদের বেশির ভাগই তাদের পারিবারিক ব্যবসা সামলেছেন। আবার কেউ নিজের আগ্রহ থেকেও হয় তো ব্যবসা করেছেন। তবে সত্যিকারের নারী উদ্যোক্তারা গ্রাম পর্যায় থেকে উঠে আসছেন। তারা তিলে তিলে অল্প পুঁজি দিয়ে নিজেদের ব্যবসা দাঁড় করাচ্ছেন। কিন্তু গ্রামীণ এই নারীরা তাদের কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে যে সরকার ও দেশের উন্নয়নের জন্য কাজ করছেন সে বিষয়ে সচেতন ছিলেন না। যেহেতু নারী উদ্যোক্তারা বিষয়টির সঙ্গে পরিচিত ছিল না এ জন্য তাদের জন্য কোনো ব্যাংক ঋণের ব্যবস্থাও ছিল না। ধীরে ধীরে বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠনের মাধ্যমে নারীরা, উদ্যোক্তা হিসেবে নিজেদের অবস্থান শক্ত করেন। বিভিন্ন সমস্যা ও দাবিদাওয়া সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে তুলে ধরেন। এর মাধ্যমে নারী উদ্যোক্তারা ক্রমেই সমৃদ্ধ হয়ে ওঠেন। মনোয়ারা হাকিম আলী বলেন, একজন নারী, তার উৎপাদিত পণ্যসামগ্রীর মাধ্যমে ঘরে ও বাইরে উভয় জায়গায় যে আর্থিক সহায়তা করছেন তা এক সময় সমাজ উপলব্ধি করে। সরকারও উদ্যোক্তা হিসেবে নারীদের গুরুত্ব বুঝতে পারে। গ্রামে বহু নারী মাছ চাষ, গবাদি পশু পালন ও কৃষিকাজের সঙ্গে জড়িত। এর মাধ্যমে তারা ঘরে-বাইরে অর্থনৈতিকভাবে অবদান রাখলেও তার গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতন ছিলেন না। যদিও বিভিন্ন এনজিওর কাছ থেকে টাকা ঋণ নিয়ে তারা এসব কর্মকাণ্ড করতেন। কিন্তু সে সময় শুধু খেয়ে-পরে বেঁচে থাকার জন্য নারীরা এনজিও থেকে ঋণ নিতেন। কিন্তু কৃষিকাজের মাধ্যমেও যে উন্নয়ন সম্ভব, একজন উদ্যোক্তা হিসেবে নিজেকে তৈরি করা সম্ভব এই গ্রামীণ নারীরা তা উপলব্ধি করতে পারেননি। এ ছাড়া তাদের যথাযথ প্রশিক্ষণেরও অভাব ছিল। আর গ্রামের অনেক নারীই ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়ার বিষয়টি ভালোভাবে বুঝতে পারেন না। ফলে তাদের অনেকে ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়ার সাহসও করতে পারেন না। তিনি বলেন, যে নারীরা ব্যবসার সঙ্গে জড়িত তাদের সাহসী হতে হবে। কারণ ব্যবসা করার জন্য তাদের অর্থ, বাজার, কারখানা ও সমর্থন প্রয়োজন। যা দীর্ঘ সময় পর্যন্ত সমাজ নারীদের দিতে প্রস্তুত ছিল না। কিন্তু বর্তমান সরকার নারী উদ্যোক্তাদের জন্য পলিসি তৈরি করেছে, ব্যাংক থেকে ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রেও তাদের ছাড় দেওয়া হচ্ছে। সব মিলিয়ে কাজ করার ক্ষেত্রে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। এর ফলে বহু আগ্রহী নারী সাহস করে এখন ব্যবসায় আসছেন। ব্লক ও বুটিকের কাজ ছাড়াও এখন তারা বিভিন্ন ক্ষেত্রে কাজ করছেন। আর এটি বর্তমান সরকারের নারী নীতির কারণে সম্ভব হয়েছে। একই সঙ্গে সরকার নারীদের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করে দেওয়ায় এবং নারীর নিরাপত্তায় উদ্যোগ নেওয়ায় আগের চেয়ে নারী উদ্যোক্তারা কাজের ক্ষেত্রে উৎসাহ পাচ্ছেন। বিশেষ করে বাজেটে নারী উদ্যোক্তাদের জন্য অর্থ বরাদ্দের মাধ্যমে সরকার নারী উদ্যোক্তাদের উৎসাহিত করেছে। এ জন্য পুরুষের পাশাপাশি এখন নারীরাও সমানতালে ব্যবসা করে যাচ্ছেন। আশা করছি আগামী পাঁচ বছরে আরও নারী উদ্যোক্তা তৈরি হবে। তবে নারী উদ্যোক্তাদের উন্নয়নের জন্য শিল্পায়নে সম্পৃক্ত হতে হবে তবেই নারীর প্রকৃত ক্ষমতায়ন হবে।

সর্বশেষ খবর