সোমবার, ২০ মার্চ, ২০১৭ ০০:০০ টা

রিভিউ খারিজ ফাঁসিতে ঝুলতে হবে মুফতি হান্নানকে

নিজস্ব প্রতিবেদক

সাবেক ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরীর ওপর সিলেটে হামলার ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলায় মৃত্যুদণ্ড পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) চেয়ে হরকাতুল জিহাদ নেতা মুফতি আবদুল হান্নানসহ তিনজনের আবেদন খারিজ হয়েছে। শুনানি শেষে গতকাল প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ এ রায় দেয়। এখন রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদন না করলে এই তিন আসামির মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের ক্ষেত্রে আইনগত  কোনো বাধা নেই। অন্য দুই আসামি হলেন শরীফ শাহেদুল আলম ওরফে বিপুল ও দেলোয়ার ওরফে রিপন। আসামিরা কাশিমপুর কারাগারে। আদালতে আসামিপক্ষে আইনজীবী নিখিল কুমার সাহা ও রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। অ্যাটর্নি জেনারেল সাংবাদিকদের বলেন, আসামিদের আপিল নিষ্পত্তি হওয়ার পরই মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল। কিন্তু রিভিউ আবেদন করায় তা স্থগিত ছিল। এখন যেহেতু রিভিউ আবেদন খারিজ হয়েছে, তাই মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করতে আর কোনো বাধা নেই। আইনজীবী নিখিল কুমার সাহা বলেন, প্রাণভিক্ষা চাইবেন কিনা তা তাদের সিদ্ধান্ত। এ বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারব না। এর আগে ২৩ ফেব্রুয়ারি আপিলে বহাল থাকা মৃত্যুদণ্ডের রায় পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) চেয়ে আবেদন করেন মুফতি হান্নান। ৭ ডিসেম্বর আপিল খারিজ করে আপিল বিভাগ। এ মামলার বাকি দুই আসামি মহিবুল্লাহ ও আবু জান্দালকে হাই কোর্ট যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছিল। আপিল না করায় ওই সাজাই বহাল থাকে।

রিভিউ শুনানিতে আসামিপক্ষের আইনজীবী নিখিল কুমার সাহা বলেন, মুফতি হান্নান, শরীফ শাহেদুল আলম ওরফে বিপুল ও দেলোয়ার ওরফে রিপন গত ১০ বছর ধরে কারাভোগ করছেন। সুতরাং তাদের মৃত্যুদণ্ড পরিবর্তন করে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হোক। এ সময় আদালত বলে, তারা পূর্বপরিকল্পিতভাবে অপরাধ করেছেন। ব্রিটিশ কূটনীতিবিদ ও তার সফরসঙ্গীদের হত্যা করার জন্যই এ হামলা হয়েছিল। এ অভিযোগের দায় থেকে তাদের মুক্তি দেওয়া যায় না। তাছাড়া মামলা নিষ্পত্তিতে দেরি হওয়ার কারণে এবং তাদের জেলে থাকার কারণে আসামিদের মৃত্যুদণ্ড কমিয়ে যাবজ্জীবন দণ্ড দেওয়ার আইনগত ভিত্তি নেই। ২০০৪ সালের ২১ মে সিলেটে হজরত শাহজালালের (রহ.) মাজারে তৎকালীন ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরীর ওপর গ্রেনেড হামলা হয়। এতে আনোয়ার চৌধুরী, সিলেট জেলা প্রশাসকসহ অর্ধশতাধিক ব্যক্তি আহত এবং পুলিশের দুই কর্মকর্তাসহ তিনজন নিহত হন। ওই ঘটনায় ওইদিন কোতোয়ালি থানায় অজ্ঞাতপরিচয় আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা করে পুলিশ। তদন্ত শেষে ২০০৭ সালের ৭ জুন আদালতে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। ৫৬ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে ২০০৮ সালের ২৩ ডিসেম্বর সিলেটের দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক সামীম মো. আফজাল রায় ঘোষণা করেন। আসামিদের মধ্যে মুফতি হান্নান, বিপুল ও রিপনকে মৃত্যুদণ্ড এবং মহিবুল্লাহ ও আবু জান্দালকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। ওই রায়ের বিরুদ্ধে আসামিপক্ষের আপিল ও ডেথ রেফারেন্সের (মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন) শুনানি শেষে ২০১৫ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি রায় দেয় হাই কোট।

হাই কোর্টের রায়ে আসামিদের আপিল খারিজ করে মুফতি হান্নানসহ তিন আসামির মৃত্যুদণ্ড এবং দুজনের যাবজ্জীবন দণ্ড বহাল রাখা হয়। ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন হান্নান ও বিপুল। আর দেলোয়ারের পক্ষে রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে আইনজীবী নিয়োগ করা হয়। গত বছরের ৭ ডিসেম্বর আপিল বিভাগ মুফতি হান্নানসহ ওই তিন আসামির মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখে। ইতিমধ্যে গত ৩ ফেব্রুয়ারি গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগারে আসামিদের মৃত্যু পরোয়ানা পড়ে শোনানো হয়।

সর্বশেষ খবর