সোমবার, ২০ মার্চ, ২০১৭ ০০:০০ টা
জঙ্গি সন্দেহে আটকের পর মৃত্যু

২০ দিন আগে নিখোঁজ হয় হানিফ

বরগুনা প্রতিনিধি

ঢাকার আশকোনায় র‌্যাবের অভিযানে জঙ্গি সন্দেহে আটকের পর মৃত্যু হওয়া আবু হানিফ মৃধা ২০ দিন আগে নিখোঁজ হয়। আবু হানিফের পরিবারের  পক্ষ থেকে এ তথ্য জানানো হয়। আবু হানিফ মৃধার গ্রামের বাড়ি বরগুনার আমতলী উপজেলার কুকুয়া ইউনিয়নের আমড়াগাছিয়া গ্রামে। হানিফের বাবা আবদুস সোবহান জানান, আবু হানিফ ১৫ থেকে ১৬ বছর আগে কাজের জন্য ঢাকায় পাড়ি জমায়। প্রথমে ফুটপাথে ব্যবসা পরে যাত্রীবাহী বাসের হেলপার, কন্টাক্টর ও ড্রাইভার হিসেবে চাকরি করে। পরে নিজে তিনটি বাস ও একটি প্রাইভেট কারের মালিক হয়। ঢাকার বিভিন্ন রুটে বাস ও প্রাইভেট কার ভাড়ায় চলছে। তিনি বলেন, গত ফেব্রুয়ারি মাসে চরমোনাই হুজুরের মাহফিলে আসে হানিফ। মাহফিল শেষে ২৭  ফেব্রুয়ারি ঢাকার উদ্দেশে রওনা হয়। পরে ঢাকা থেকে এক লোক তার বাড়িতে ফোন করে জানায়, হানিফকে পাওয়া যাচ্ছে না। এমন খবর শুনে হানিফের মা ও ছোট ভাই আবদুল হালিম ঢাকায় গিয়ে খোঁজাখুঁজি করেন। এ সময় তার প্রাইভেট কারের ড্রাইভার থেকে জানতে পারে কাঁচপুর ব্রিজের ওপর থেকে হানিফের গাড়িতে একদল লোক ওঠে বসে। কিছু পথ যাওয়ার পর ড্রাইভারকে মারধর করে রাস্তায় ফেলে গাড়িসহ হানিফকে নিয়ে যায়।

নিখোঁজের জিডি উধাও : এদিকে বিডি নিউজ জানিয়েছে, সন্দেহভাজন হিসেবে র‌্যাবের হাতে গ্রেফতারের পর মারা গেছেন যে যুবক, তিনি নিখোঁজ দাবি করে যে জিডিটি পরিবার করেছিল, তা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। হানিফ মৃধা নামে ওই যুবক ও তার এক বন্ধুকে গত ২৭ ফেব্রুয়ারি ডিবি পরিচয়ে তুলে নেওয়া হয়েছিল দাবি করে কয়েক দিন পর নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছিল তার পরিবার। ঢাকার মোহাম্মদপুরের বাসিন্দা হালিম মৃধার সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় করা জিডির নম্বর ১৩৫। জিডি হলে তা তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় একজন পুলিশ কর্মকর্তাকে। এই জিডির তদন্তের দায়িত্ব পেয়েছিলেন সিদ্ধিরগঞ্জ থানার এসআই  মো. রাসেল। এসআই রাসেল বলেন, জিডি হয়েছিল, আমি এতটুকু আপনাদের বলতে পারব। এর বেশি কিছু আমি বলতে পারব না। অন্যদিকে ৪ মার্চ করা ওই জিডির বক্তব্য অনুযায়ী, গত ২৭ ফেব্রুয়ারি রাত ৮টা ২০ মিনিটে প্রাইভেট কারে মোহাম্মদপুরের বাসায় ফেরার পথে কাঁচপুর এলাকা থেকে হানিফ মৃধা ও তার বন্ধু সোহেল মন্টুকে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে তুলে নেওয়া হয়।

জিডি তদন্ত করে কী পেলেন— জানতে চাইলে এসআই রাসেল বলেন, ‘আমরা মাঠ পর্যায়ে তদন্ত করলেও সেসব বিষয়ে বক্তব্য দেন আমাদের ঊর্ধ্বতন অফিসাররা। আপনারা তাদের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলেন।’ ওসির বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘জিডির বই পাওয়া না গেলে এ বিষয়ে আমি কীভাবে বলব?’ এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে চাইলে নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার মঈনুল হক রবিবার রাতে বলেন, ‘জিডির বই হারিয়ে গেছে, এই প্রথম আমি আপনার কাছ থেকে শুনলাম।

 বিষয়টি আমি জানি না। এ বিষয়ে খোঁজখবর নেওয়া হবে।’

শনিবার তার ময়নাতদন্তের পর ঢাকা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান অধ্যাপক সোহেল মাহমুদ  বলেছিলেন, প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তার মৃত্যু হয়েছে। তবে ভিসেরা পরীক্ষার জন্য নমুনা সংরক্ষণ করা হয়েছে।

কে বা কারা নিয়েছে তা বলতে পারছে না তার পরিবারের সদস্যরা। তার বাবা বলেন, হানিফ তার দ্বিতীয় স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে ঢাকার রায়েরবাজার এলাকায় বসবাস করছে। এ ছাড়া তার প্রথম স্ত্রী লাইলি বেগম তিন সন্তান নিয়ে বাড়িতে আছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আবু হানিফের রিরুদ্ধে একটি নারী নির্যাতন মামলা রয়েছে। তবে পরিবারের কেউ মামলা সম্পর্কে অবহিত নয় বলে জানান। আবু হানিফের প্রথম স্ত্রী লাইলি বেগম বলেন, আমার স্বামীর দ্বিতীয় বিয়ের পর থেকে আমার সঙ্গে সম্পর্ক ভালো নয়। গত দুই বছরে তার সঙ্গে আমার কোনো কথা হয়নি এবং সে আমার ভরণ-পোষণও দেয় না। আমি আমার শ্বশুরের সংসারে আছি, আমার শ্বশুর আমার ও সন্তানদের সবকিছু চালাচ্ছেন।

সর্বশেষ খবর