বুধবার, ২২ মার্চ, ২০১৭ ০০:০০ টা

সরকারের সঙ্গে থাকলে প্রশ্ন থেকে যায়

——— কাজী ফিরোজ রশিদ

সরকারের সঙ্গে থাকলে প্রশ্ন থেকে যায়

সরকারে থেকে সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের নেতৃত্বে জোট হলে এর নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন থেকে যাবে বলে মন্তব্য করেছেন সাবেক মন্ত্রী ও জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য অ্যাডভোকেট কাজী ফিরোজ রশীদ। তিনি বলেন, আমাদের সবকিছু সামনে রেখেই এগোতে  হবে। মন্ত্রিপরিষদ থেকে বের হওয়াসহ জোট গঠনের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা পার্টির চেয়ারম্যানকে দেওয়া হয়েছে। তিনি যা ভালো মনে করবেন তাই হবে। গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় তিনি একথা বলেন। কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, জাতীয় পার্টির সাংগঠনিক অবস্থা বর্তমানে অনেক ভালো। জাতীয় নির্বাচনে জাতীয় পার্টি একটি ফ্যাক্টর। জাতীয় পার্টি নির্বাচনমুখী দল। জাতীয় পার্টি বিশ্বাস করে সরকার পরিবর্তনের একমাত্র পথ নির্বাচন। তাই শত প্রতিকূলতার মধ্যেও আমরা দলের চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদের নেতৃত্বে সবসময় নিজস্ব প্রতীক লাঙ্গল নিয়ে নির্বাচনে অংশ নিয়ে আসছি। সাধারণ মানুষের কাছে জাতীয় পার্টি একটি জনপ্রিয় দল। অতীতে আমরা যে ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্যদিয়ে নির্বাচনে অংশ নিয়েছি অন্য কোনো দলের পক্ষে তা সম্ভব নয়। কারাগার থেকে নির্বাচনে অংশ নিয়ে এইচ এম এরশাদ ৫টি আসন থেকে বিজয়ী হয়েছেন। জাতীয় পার্টিকে নিয়ে অতীতে অনেক ষড়যন্ত্র হয়েছে। বর্তমানেও থেমে নেই। ষড়যন্ত্র বাইরে থেকে যেমন হয়েছে। দলের অভ্যন্তর থেকেও হয়েছে। রাজনৈতিক ফায়দা লুটতে পার্টির অনেক নেতা ব্যক্তি স্বার্থে দলকে ব্যবহার করেছেন। এতে গুটিকয়েক নেতার ভাগ্যের পরিবর্তন হয়েছে। আগামীতে ব্যক্তি স্বার্থে কেউ দলকে ব্যবহার করতে না পারে সেজন্য পার্টির চেয়ারম্যানকে সতর্ক থাকতে হবে। পার্টির চেয়ারম্যানের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করছে দলের এবং নেতা-কর্মীদের ভবিষ্যৎ। তিনি বলেন, আগামী যেকোনো নির্বাচনের জন্য জাতীয় পার্টি প্রস্তুত। আর নির্বাচনে এইচ এম এরশাদ একটি ফ্যাক্টর। কোনো সরকারই সাবেক এ রাষ্ট্রপতির প্রতি সুবিচার করেননি। আমরা কারও কাছ থেকে নিরপেক্ষ আচরণ পাইনি। ফিরোজ রশীদ বলেন, সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আগে হওয়ার সুযোগ নেই। তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা আমরা কখনোই মেনে নেয়নি। কারণ জাতীয় পার্টিকে ক্ষমতার বাইরে রাখার জন্য তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা সৃষ্টি করা হয়েছিল।

 প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর প্রসঙ্গে বীর মুক্তিযোদ্ধা কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, ভারত আমাদের বন্ধুপ্রতিম দেশ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আসন্ন ভারত সফরে দুই দেশের সুম্পর্ক বজায় রেখে দ্বিপক্ষীয় আলোচনার মাধ্যমে অমীমাংসিত সমস্যাগুলোর সমাধান হবে বলে আশা করি। জঙ্গিবাদ প্রসঙ্গে বলেন, বাংলাদেশে জঙ্গিবাদ উত্থানের সম্ভাবনা কম। দেশের মানুষ শান্তিপ্রিয়। যতটা না জঙ্গিবাদ কার্যক্রম হচ্ছে তার চেয়ে বেশি প্রচার হচ্ছে।

জঙ্গিবাদের চেয়ে ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছে মাদক। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা পর্যন্ত মাদকে আসক্ত হয়ে পড়ছে। এভাবে চলতে থাকলে পাঁচ বছর পর দেশ কোথায় যাবে আল্লাহই ভালো জানেন। এর লাগাম টেনে ধরতে হবে। নইলে পরবর্তী প্রজন্ম হবে মেধাহীন, দুর্বল। শিশু অপহরণ বন্ধ করতে হবে। আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে এদিকে নজর আরও বাড়াতে হবে। তিনি বলেন, মানুষ চায় দেশ শান্ত থাকুক। অর্থনীতির উন্নয়ন হোক। কিন্তু তা হচ্ছে না। এজন্য সব দলের ঐক্য প্রয়োজন। ঐক্য থাকলে দেশে শান্তি বিরাজ করত। দেশ আরও উন্নত হতো। এজন্য দায়ী আমরা রাজনীতিবিদরা। ১৬ কোটি মানুষের মধ্যে রাজনীতির নীতি নির্ধারণী পর্যায়ে গুটিকয়েক মানুষ। রাজনীতিবিদদের ক্ষমতার মোহের কারণে দেশবাসীকে এর খেসারত দিতে হয়। বিএনপির রাজনীতি সম্পর্কে কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন হবে। তাদের সামনে দুটি পথ খোলা। হয় আন্দোলন না হয় নির্বাচনে অংশ নেওয়া। নির্বাচনে অংশ না নিয়ে আন্দোলনের পথকে বেছে নিলে আর আন্দোলন সফল না হলে দলের পরিণতি কী হবে তা সবারই জানা।

সর্বশেষ খবর