বুধবার, ২২ মার্চ, ২০১৭ ০০:০০ টা

রাজনৈতিক মেরুকরণে সব দরজা খোলা

————— জিয়াউদ্দিন বাবলু

রাজনৈতিক মেরুকরণে সব দরজা খোলা

সরকারের পরামর্শে জাতীয় পার্টির নেতৃত্বাধীন জোট হচ্ছে না বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য সাবেকমন্ত্রী জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু। তিনি বলেন, একদিকে এইচ এম এরশাদ ৩০০ আসনের প্রার্থী দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। অন্যদিকে জোট গঠনের প্রক্রিয়া শুরু করেছেন। এটাকে আপাতদৃষ্টিতে স্ববিরোধী কর্মকাণ্ড মনে হতে পারে। কিন্তু আমাদের প্রিয় নেতা এইচ এম এরশাদ রাজনৈতিক মেরুকরণে সব দরজা খোলা রেখেছেন। বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় একথা বলেন তিনি। জাতীয় পার্টির সাবেক মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু বলেন, রাজনৈতিক দল তার রাজনৈতিক এবং সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে বাস্তব অবস্থার নিরিখে চলমান রাখতে চায়। আগামী বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে সংবিধান অনুযায়ী। এ লক্ষ্যে জাতীয় পার্টি প্রস্তুতি গ্রহণ করছে। যেকোনো প্রাজ্ঞ ও অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদ একটি জায়গায় দলতে সীমাবদ্ধ না রেখে দলের রাজনৈতিক পরিধি বিস্তৃতির প্রচেষ্টা চালাবে এটাই স্বাভাবিক। উদাহরণ টেনে সাবেক এ মন্ত্রী বলেন, সম্প্রতি ভারতের উত্তর প্রদেশে নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। কেউ কোনোদিন ভাবতে পারেনি কংগ্রেসের সঙ্গে অখিলেশের সমাজবাদী পার্টির নির্বাচনী মোর্চা হবে। কিন্তু বাস্তবতার নিরিখে তারা তা করেছে। রাজনীতিতে বাস্তব অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে এইচ এম এরশাদ অত্যন্ত বিচক্ষণতার সঙ্গে আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে এগোচ্ছেন। এটা তার রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা দৃঢ়তা এবং প্রজ্ঞা। তিনি বলেন, জাতীয় পার্টি নির্বাচনে বিশ্বাসী। নির্বাচন গণতন্ত্রের অন্যতম উপাদান। নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার পরিবর্তন সম্ভব। জাতীয় পার্টি জন্মলগ্ন থেকেই সব নির্বাচনে অংশ নিয়ে আসছে। আমরা জ্বালাও-পোড়াও সন্ত্রাসের রাজনীতিতে বিশ্বাসী নই। নির্বাচনী জোট গঠনের আগে জাতীয় পার্টি মন্ত্রিপরিষদ থেকে বের হয়ে আসবে কিনা জানতে চাইলে সাবেক এ মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের প্রবীণতম রাজনীতিবিদ এইচ এম এরশাদ। সবার কাছে গ্রহণযোগ্য করার জন্য যা করার দরকার এরশাদ জোট করলে তা নিশ্চয় এমনভাবে করবেন যেন সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হয়। তিনি জানান, এ জোট গঠনের পেছনে সরকারের সঙ্গে জাতীয় পার্টির কোনো সম্পর্ক নেই। জঙ্গিবাদ প্রসঙ্গে জিয়াউদ্দিন বলেন, বাংলাদেশ একটি কঠিন এবং ইতিহাসের ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। জঙ্গিবাদ সভ্যতার শত্রু। মানবতার শত্রু। গণতন্ত্রের শত্রু। জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাস আমাদের সামাজিক আঙ্গিনায় অস্থিরতা সৃষ্টির অপচেষ্টা চালাচ্ছে। জাতীয় পার্টি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে জঙ্গিবাদ সন্ত্রাস মাদক এসব কিছুকে রাজনীতির ঊর্ধ্বে রাখতে হবে। এসব সমগ্র জনগোষ্ঠীর শত্রু। জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাস দমনে জনগণের ঐক্যবদ্ধ প্রয়াস ছাড়া আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষে একা লড়াই করে সম্পূর্ণভাবে জয়লাভ করা সম্ভব হবে না। আর সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে এ আন্দোলনে শরিক করার উদ্যোগ সরকারকেই নিতে হবে। দেশে অর্থনীতি প্রসঙ্গে জিয়াউদ্দিন বাবলু বলেন, দেশে নতুন দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ নেই। গ্যাস বিদ্যুৎ না পাওয়ায় নতুন শিল্পকারখানা গড়ে উঠছে না। মধ্যপ্রাচ্যে অস্থিতিশীলতার কারণে শ্রমবাজার বিস্তৃত হচ্ছে না। নতুন শ্রমবাজার খোঁজা জরুরি।

শিক্ষা প্রসঙ্গে বলেন, প্রতিনিয়ত প্রশ্নফাঁস হচ্ছে। গোল্ডেন জিপিএ পাওয়া শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পাচ্ছে না। এশিয়ার সেরা ১০০ বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম নেই। অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নেই, ভবন নেই। এ অবস্থায় ২০২১ সালের মধ্যে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়া কঠিন হয়ে পড়বে। ডাকসুসহ সব বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্বাচনের দাবি জানান ডাকসুর সাবেক এই সম্পাদক। বিএনপির রাজনীতি প্রসঙ্গে বলেন, দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে অশনিসংকেত বিএনপি। তারা মুখে গণতন্ত্রের কথা বললেও বাস্তবে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত থাকে। কানাডার আদালত ইতিমধ্যে বিএনপিকে সন্ত্রাসী দল হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। দেশে জঙ্গিবাদের উত্থান হয়েছিল বিএনপি আমলে। বিএনপি গণতান্ত্রিক কর্মকাণ্ডে ফিরে আসতে চাইলে তাদের জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাস পরিত্যাগ করতে হবে। বিএনপি যুদ্ধাপরাধীদের গাড়িতে শহীদের রক্তে রঞ্জিত জাতীয় পতাকা তুলে দিয়েছে। তিনি বলেন, সংবিধান অনুযায়ী আগামী বছরের ডিসেম্বরে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। বিএনপি চেয়ারপারসনের বিরুদ্ধে অনেকগুলো মামলা চলমান রয়েছে। আদালতের রায় যাই হোক না কেন, বিএনপিকে রাজনীতিতে টিকে থাকতে হলে আগামী নির্বাচনে অংশ নিতে হবে। এটাই রাজনৈতিক বাস্তবতা। নইলে তাদের নিবন্ধনও বাতিল হবে।

সর্বশেষ খবর