বুধবার, ২২ মার্চ, ২০১৭ ০০:০০ টা

সীমার ২৯ দফা, সাক্কুর পক্ষে মাঠে নেতারা

কুমিল্লা সিটি নির্বাচন

মহিউদ্দিন মোল্লা

সীমার ২৯ দফা, সাক্কুর পক্ষে মাঠে নেতারা

সীমা - সাক্কু

আসন্ন কুমিল্লা সিটি করপোরেশন (কুসিক) নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আঞ্জুম সুলতানা সীমা ২৯ দফা ইশতেহার ঘোষণা করেছেন। গতকাল দুপুরে নগরীর রামঘাটলায় দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের সামনে ১৩ পৃষ্ঠার ইশতেহারে তিনি নগরীতে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম করার প্রতিশ্রুতি দেন। এ জন্য পাঁচ তারকা হোটেলের জমি বন্দোবস্ত দেওয়া, বিনোদন ও সংস্কৃতি চর্চার জন্য সর্বাধুনিক মিলনায়তন ও বোটানিক্যাল গার্ডেনে মুক্তমঞ্চ স্থাপনের কথাও বলেন। বিএনপির প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কুও শিগগিরই ইশতেহার দেবেন। গতকালও তার পক্ষে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা স্থানীয়দের সঙ্গে নিয়ে গণসংযোগ করেছেন।

ইশতেহার পাঠের সময় আঞ্জুম সুলতানা সীমার সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও মেয়র নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান সমন্বয়ক কাজী জাফর উল্লাহ, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক একেএম এনামুল হক শামীম, কুমিল্লা জেলা পরিষদের সাবেক প্রশাসক ওমর ফারুক, কুমিল্লা দক্ষিণ উপজেলার চেয়ারম্যান গোলাম সারওয়ার ও মহানগর আওয়ামী লীগ নেতা আরফানুল হক রিফাত প্রমুখ। এরপর তারা নগরীর বিভিন্ন স্থানে গণসংযোগ করেন। ইশতেহারে সীমা উল্লেখ বলেন, নির্বাচিত হলে তিনি ২৯টি ক্ষেত্রে উন্নয়ন করবেন। যানজট জলাবদ্ধতা নিরসনসহ কুমিল্লাকে আধুনিক নগরী হিসেবে ঘোষণা করা হবে। একশ বছরের পরিকল্পনা সামনে রেখে আগামী ৫ বছর কাজ করার আকাঙ্ক্ষা ব্যক্ত করে সীমা বলেন, কুমিল্লা নগরী এখন মৃত্যু পথযাত্রী। তিনি বলেন এই নগরীকে প্রাণের ছোঁয়া দিতে চাই। আঞ্জুম সুলতানা সীমা জানান, আমি আমার ১৫ বছরের অভিজ্ঞতা দিয়ে নগরীকে সাজাতে চাই। পাঁচ বছরের জন্য বর্ধিত কোনো করের বোঝা জনগণের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হবে না। অতি দরিদ্রদের হোল্ডিং কর মওকুফ করা হবে। জলাবদ্ধতা নিরসন হবে আমার প্রথম অগ্রাধিকার। নগর পরিকল্পনাবিদ ও বিশেষজ্ঞ মতামতের ভিত্তিতে বাস্তবমুখী ও কার্যকর পদক্ষেপ নিয়ে নগরীকে জলাবদ্ধতা মুক্ত করব। নগরের অসহনীয় যানজট নিরসনে জনসচেতনতা বৃদ্ধি, সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব। প্রয়োজনে ফ্লাইওভার, ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণ করা হবে। ফুটপাথ সমূহ জনগণের চলাচল উপযোগী করা হবে। তিনি বলেন, কুমিল্লা সিটি করপোরেশন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অবদান। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনাক্রমে রূপকল্প ২০২১ মাথায় রেখে কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের জন্য উন্নয়নের মাস্টার প্ল্যান প্রণয়ন করা হবে। সেই পরিকল্পনা পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়ন করা হবে। শিক্ষা প্রসার নিয়ে নিজের পরিকল্পনা তুলে ধরে সীমা বলেন, সিটি করপোরেশনের তত্ত্বাবধানে দুটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হবে। এগুলো হবে মান সম্মত এবং অলাভজনক। কর্মজীবী তরুণ-তরুণীদের কথা বিবেচনায় রেখে একটি নৈশ মহাবিদ্যালয় চালু করা হবে। সিটি করপোরেশনের পূর্বাঞ্চলে মেয়েদের জন্য একটি মানসম্মত মাধ্যমিক বিদ্যালয় স্থাপন করা হবে।  গণসংযোগে আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় ও সহযোগী সংগঠনের নেতাদের মধ্যে ছিলেন, সুজিত রায় নন্দী, আবদুল হাই বাবলু, লিয়াকত শিকদার, বদিউজ্জামান সোহাগ, অজয় কর খোকন, মাহফুজুল হায়দার চৌধুরী রোটন, মো. সাইফুর রহমান, শাহজাদা মহিউদ্দিন, মাহমুদা বেগম ক্রিক, সমীর চন্দ চন্দ্র, আজহার উদ্দিন, ফরিদুন্নাহার লাইলী, অ্যাডভোকেট আফজাল হোসেন, দেলোয়ার হোসেন, হারুনুর রশিদ, শামসুন্নাহার চাপা, অসীম কুমার উকিল, নজিবুল্লাহ হিরু, আমিনুল ইসলাম আমিন, এবিএম রিয়াজুল কবির কাওছার, গোলাম কবির রাব্বানী চিনু, আনোয়ার হোসেন, ইকবাল হোসেন অপু, মারুফা আক্তার পপি, পনিরুজ্জামান তরুণ, শেখ ফয়সল আমীনসহ ছাত্রলীগ, জাহাঙ্গীর আলম সরকার, মোহাম্মদ আলী সুমন, পৌর মেয়র নাঈম ইউসুফ সেইন, জেলা পরিষদ সদস্য মনির হোসেন সরকার প্রমুখ।

সাক্কুর পক্ষে মাঠে কেন্দ্রীয় নেতারা : গতকাল দিনভর বিএনপির প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কুর পক্ষে কেন্দ্রীয় নেতারা কুমিল্লা নগরীতে গণসংযোগ করেন।  কুমিল্লাস্থ ফেনী সমিতির সঙ্গে মতবিনিময় সভায় বক্তব্য রাখেন বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ও কেন্দ্রীয় প্রধান নির্বাচন সমন্বয়ক নজরুল ইসলাম খান।

সভায় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুর রহমান শামীম, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাক মিয়া, আবদুল আউয়াল খান, সহ-দফতর সম্পাদক বেলাল আহম্মেদ, মশিউর রহমান বিপ্লব এবং ফেনী সমিতির সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার বক্তব্য দেন। পরে তিনি নগরীর বধূয়া কমিউনিটি সেন্টারে কুমিল্লায় বসবাসকারী চৌদ্দগ্রামের নাগরিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করেন। নজরুল ইসলাম খান বলেন, আওয়ামী লীগ মুখে গণতন্ত্রের কথা বলে, বাস্তবে গণতন্ত্র হরণই হচ্ছে তাদের প্রধান কাজ। ৮ বছরে দেশে গণতন্ত্র হরণ করে ভোটাধিকারসহ দেশের সাধারণ জনগণের মৌলিক অধিকার হরণ করেছে তারা। তিনি বলেন, কুমিল্লার জনগণ অত্যন্ত সচেতন। এবারের নির্বাচনে কুমিল্লাবাসী সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে কোনো ধরনের ভুল করবে না বলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস। আর সেজন্যই তারা তাদের নগর অভিভাবক নির্বাচনে ধানের শীষের প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কুকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবেন। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া মনোনীত প্রার্থী সাক্কুকে ধানের শীষে ভোট দিয়ে জনগণ তাদের সচেতনতা ও যোগ্যতার প্রমাণও দেবেন ইনশাল্লাহ। অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে বিএনপি প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কু বলেন, আমি কুমিল্লবাসীর সুখ দুঃখে সঙ্গে থাকার চেষ্টা করেছি। সিটি মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর কোনো আয়কর বাড়াইনি। নাগরিক সুবিধা বাড়িয়েছি। নতুন সিটি করপোরেশন হিসেবে কুমিল্লা নগরীকে সুন্দর, সুশৃঙ্খল, আধুনিক এবং নিরাপদ করতে সাধ্যমতো চেষ্টা করেছি। অসমাপ্ত  কাজ সমাপ্ত করতে আগামী নির্বাচনে নির্ভয়ে ভোট কেন্দ্রে গিয়ে ধানের শীষে ভোট দিতে সবার প্রতি অনুরোধ জানাই। চৌদ্দগ্রাম থানা বিএনপির আহ্বায়ক কামরুল হুদার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে হাজী আমিন উর রশিদ ইয়াছিন, কর্নেল (অব.) আনোয়ারুল আজিম, শামসুদ্দিন দিদার, ইঞ্জিনিয়ার শাহ আলম, খোরশেদ কবির খোকন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। ২১ নম্বর ওয়ার্ডে সাক্কুর পক্ষে গণসংযোগ করেন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু। তিনি বলেন, কুমিল্লায় বিএনপির প্রার্থী সবচেয়ে জনপ্রিয়, প্রতীকও জনপ্রিয়। দলও ঐক্যবদ্ধ। তাই কুমিল্লা সিটি নির্বাচনে বিএনপির বিজয় সুনিশ্চিত। বিএনপির বিজয় সুনিশ্চিত ভেবে ক্ষমতাসীন দল কুমিল্লায় সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানে বাধা সৃষ্টি করছে। বিএনপি ভাইস চেয়ারম্যান শওকত মাহমুদ ৩ নম্বর ওয়ার্ডের রেইসকোর্স, কাঠেরপুল, ধানমন্ডি রোডসহ বিভিন্ন স্থানে গণসংযোগ করেন। এ সময় কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন ভূইয়া শিশির সঙ্গে ছিলেন। বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদিন ফারুক ২৪ নম্বর ওয়ার্ডে গণসংযোগ করেন। বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, যুবদলের কেন্দ্রীয় সিনিয়র সহ-সভাপতি মোরতাজুল করিম বাদরু নগরীর টমছম ব্রিজ, হালুয়াপাড়া, ইপিজেড গেট, পোস্ট অফিসসহ বিভিন্ন স্থানে শ্রমিক, কর্মচারীসহ সাধারণ মানুষের কাছে ধানের শীষ প্রতীকে ভোট প্রার্থনা করেন।

সর্বশেষ খবর