বৃহস্পতিবার, ২৩ মার্চ, ২০১৭ ০০:০০ টা

ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম চার ঘণ্টায়!

সাইদুল ইসলাম, চট্টগ্রাম

এখন মাত্র পাঁচ থেকে সোয়া পাঁচ ঘণ্টায় ট্রেনে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম যেতে পারছেন যাত্রীরা। লাকসাম থেকে আখাউড়া পর্যন্ত চলমান ডাবল লাইনের কাজ শেষ হলে চার থেকে সোয়া চার ঘণ্টায় ঢাকা-চট্টগ্রাম যাতায়াত সম্ভব হবে। অবকাঠামো উন্নয়ন ও নতুন সময়সূচি চালু হওয়ায় যাত্রা সময় কমেছে। একই সঙ্গে ট্রেন ভ্রমণে যাত্রীরা নিরাপদে গন্তব্যে যেতে পারছেন বলে জানান যাত্রীসহ রেলওয়ে সংশ্লিষ্টরা। রেলওয়ে সূত্রে জানা যায়, ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটসহ দেশের রেলওয়ের বিভিন্ন অবকাঠামোগত উন্নয়নের সুফল শুরু হয়েছে। দ্রুত কাজ চলছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অগ্রাধিকার প্রকল্প কক্সবাজার-ঘুমদুম-দোহাজারি রেললাইন স্থাপন। ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট ও ময়মনসিংহ বিভাগ নিয়ে গঠিত পূর্বাঞ্চল রেলের অধীনে মোট ৪৬টি আন্তঃনগর ট্রেন চলাচল করে। এ অঞ্চলে ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথের দূরত্ব ৩৪৬ কিলোমিটার। বর্তমানে এ রেলপথের বিরতিহীন আন্তঃনগর সুবর্ণ এক্সপ্রেসের দুটি ট্রেনের ঢাকা ও চট্টগ্রামের মধ্যে চলাচল করতে সময় লাগে ৬ ঘণ্টার বেশি। একইভাবে নতুন সময়সূচি অনুযায়ী ভ্রমণ সময় কমেছে বিরতিহীন অন্য ট্রেন সোনার বাংলারও। এভাবেই রেলওয়ের ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগের ১১৬টি যাত্রীবাহী ট্রেনের মধ্যে ৮৬টির ভ্রমণ সময়ই কমছে। গত ১ মার্চ থেকে সর্বোচ্চ ‘এক ঘণ্টা’ সময় কার্যকরের বিষয়ে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ সময়সূচি সংশোধনসহ একটি সার্কুলারও জারি করে। রেলপথ সচিব ফিরোজ সালাউদ্দিন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ডাবল লাইনের সুফল আমরা পেতে শুরু করেছি। যে অংশটুকুতে ডাবল লাইনের কাজ চলছে তা সম্পন্ন হলে আমরা পুরোপুরি সুফল পাব। ডাবল লাইনের কারণে ট্রেনের সংখ্যাও বেড়ে গেছে। নতুন সময়সূচিতে বেশিরভাগ ট্রেনের ভ্রমণ সময় কমছে। তিনি বলেন, রেল পথে বিপুল বিনিয়োগের সুফল পাবে দেশবাসী। প্রথম ধাপে ১ মার্চ থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে ট্রেনের রানিং টাইম গড়ে পাঁচ থেকে সাড়ে পাঁচ ঘণ্টায় নামিয়ে আনা হয়েছে। ওয়ার্কিং টাইমটেবিল নম্বর ৫১ কার্যকরের মাধ্যমে রেলের ইতিহাসে পূর্বাঞ্চলে প্রথমবারের মতো একযোগে বেশির ভাগ ট্রেনের ভ্রমণ সময় কমছে বলে জানান পূর্বাঞ্চল রেলওয়ের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) প্রকৌশলী আবদুল হাই। এতে সেবার মানের পাশাপাশি যাত্রীর সংখ্যাও বাড়বে বলে জানান তিনি। একই কথা বললেন চট্টগ্রাম বিভাগীয় বাণিজ্য কর্মকর্তা (ডিসিও) মিজানুর রহমানও। রেলওয়ে সূত্রে জানা যায়, বর্তমান সরকারের আমলে বিশেষ করে ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকার উন্নয়নকাজ হচ্ছে। এর মধ্যে বেশির ভাগ কাজ ইতিমধ্যে শেষ হয়েছে। ৩৪৬ কিলোমিটার রেলপথের মধ্যে লাকসাম থেকে আখাউড়া পর্যন্ত ৭১ কিলোমিটার ছাড়া বাকি অংশ ডাবল লাইন হয়েছে। এ কারণেই নতুন সময়সূচিতে এই পথে ডাবল লাইনে ট্রেন চলাচল করবে। লাকসাম থেকে আখাউড়া পর্যন্ত অংশটি ডাবল লাইন হয়ে গেলে আগামী বছর থেকে বিরতিহীন ট্রেনগুলো আরও প্রায় এক ঘণ্টা কমে চার থেকে সোয়া চার ঘণ্টার মধ্যে ঢাকা-চট্টগ্রাম যাতায়াত করতে পারবে। রেলওয়ে সূত্রে জানা যায়, ২০১৪ সালের ১৫ জুন ওয়ার্কিং টাইমটেবিল ৫০ কার্যকর হয়। এই টাইমটেবিল অনুযায়ী পূর্বাঞ্চল রেলে সব পথে ট্রেন চলাচল শুরু করে। এরপর গত বছর ৭ জানুয়ারি টাইমটেবিল ৫০-এর সংশোধনী অনুযায়ী ট্রেন চলাচল শুরু হয়। চলতি বছরের ১ ফেব্রুয়ারি থেকে টাইমটেবিল ৫১ অনুযায়ী পূর্বাঞ্চলে নতুন সময়সূচিতে ট্রেন চলাচলের নির্দেশনা দেয় রেল ভবন। এতে দেখা যায়, পূর্বাঞ্চলের ৪৬টি আন্তঃনগর ট্রেনের মধ্যে ৪৩টির ভ্রমণ সময় ৫ মিনিট থেকে সর্বোচ্চ ১ ঘণ্টা ১০ মিনিট পর্যন্ত কমবে। চট্টগ্রাম-ঢাকা পথের বিরতিহীন আন্তঃনগর ট্রেন (নম্বর ৭০২) ‘সুবর্ণ এক্সপ্রেস’ ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম আসতে ৬ ঘণ্টা ২০ মিনিট লাগছে। সুবর্ণ এক্সপ্রেসের অন্য ট্রেনটি (৭০১ নম্বর) চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা যেতে ৬ ঘণ্টা ১০ মিনিট সময় লাগছে। নতুন সময়সূচিতে ট্রেনটি চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা পৌঁছবে ১ ঘণ্টা এবং ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম পৌঁছবে ১ ঘণ্টা ১০ মিনিট কম সময়ে। একই পথে গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে চালু হওয়া দ্বিতীয় বিরতিহীন আন্তঃনগর (নম্বর ৭৮৭ ও ৭৮৮) সোনার বাংলা এক্সপ্রেসের দুটি ট্রেনের ভ্রমণ সময় কমে আসছে। এর মধ্যে ৭৮৭ নম্বর ট্রেনটি ভ্রমণ সময় ৩০ মিনিট কমে ৫ ঘণ্টা ১০ মিনিটে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় পৌঁছবে। একইভাবে অন্যান্য ট্রেনের সময়সূচিও কম-বেশি সময় কমে আসছে।

সর্বশেষ খবর