শুক্রবার, ২৪ মার্চ, ২০১৭ ০০:০০ টা

চট্টগ্রামে বাসা ভাড়ার নাম করে যুবক হত্যা

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম

বাসা ভাড়া নেওয়ার নাম করে ঘরে ঢোকেন এক তরুণীসহ চারজন। বাড়ির তত্ত্বাবধায়ককে জানান, বাসা তাদের পছন্দ হয়েছে। এখন থেকেই থাকতে চান তারা। রাজি হয়ে যান তত্ত্বাবধায়ক। ঘটনার শুরু এভাবেই। এর তিন ঘণ্টার মধ্যে একে একে বাসা থেকে বেরিয়ে যান তরুণীসহ তিনজন। চতুর্থজনের লাশ পাওয়া যায় বাসার টয়লেটে হাত-পা বাঁধা অবস্থায়।

এমন ঘটনা ঘটেছে চট্টগ্রামে। ঘটনার শুরু বুধবার বিকালে। নিহত যুবকের পরিচয় মিলেছে। তার নাম মো. আলাউদ্দিন (২৪)। পড়তেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে। পুলিশের ধারণা, প্রেমঘটিত কারণে তাকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে।

নগরের অক্সিজেন মোড় থেকে এক কিলোমিটার পূর্ব দিকে পশ্চিম শহীদনগরে রাস্তার পাশে চার তলা বাড়ি। বুধবার বিকাল সাড়ে ৫টায় সেখানে হাজির হন ওই চারজন। নিচতলায় তত্ত্বাবধায়ক হাসিনা আক্তারের সঙ্গে কথা বলেন তারা। তৃতীয় তলার খালি ফ্ল্যাটটি দেখতে চান। বাসা দেখে পছন্দ হওয়ার কথা জানান তারা। চারজনের পরিচয়ও দেন। দুজন স্বামী-স্ত্রী। বাকি দুজন বন্ধু। থাকবেন স্বামী-স্ত্রী। হাসিনা আক্তার গতকাল বিকালে বলেন, ভাড়া নিতে আসা যুবকদের একজন জানান, ওই তরুণী অন্তঃসত্ত্বা। তারা পাশের এলাকা হামজারবাড়ের একটি ভাড়া বাসায় থাকেন। সেখানে সমস্যা হচ্ছে, যে কারণে আজই এ বাসায় উঠতে চান। মালামাল পরে আনবেন। মাসে ভাড়া সাড়ে সাত হাজার টাকা। এরপর তিনি রাজি হন। তাদের একজন বাসা পরিষ্কার করার জন্য তার কাছ থেকে বালতিও চেয়ে নেন। হাসিনা আক্তার বলেন, সন্ধ্যা ৭টার দিকে তিন যুবকের মধ্যে একজন বাসার নিচতলায় তার কাছে বালতি ফেরত দিয়ে বেরিয়ে যান। এর কিছুক্ষণ আগে পাশের দোকান থেকে প্রয়োজনীয় বাজার করার জন্য বেরিয়ে যান স্বামী-স্ত্রী। রাত ৮টার দিকে তিনি নিচতলা থেকে তৃতীয় তলায় গিয়ে দেখেন, ফ্ল্যাটটির দরজা খোলা। কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে ভিতরে ঢোকেন। দেখেন, বাসার টয়লেটের ভিতর হাত-পা বাঁধা লাশ। সঙ্গে সঙ্গে তিনি স্বামীকে খবর দেন। পরে পুলিশ এসে লাশ উদ্ধার করে। ঘটনার পর থেকে হাসিনা আক্তার ও তার স্বামী জাহাঙ্গীর আলমকে থানায় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে বায়েজীদ বোস্তামী থানা পুলিশ। তার স্বামী বাসার পাশে একটি পানের দোকান চালান।

জাহাঙ্গীর আলম বলেন, বাড়ির মালিক ফটিকছড়ির বাসিন্দা ওমানপ্রবাসী আবু সৈয়দ। তার অবর্তমানে বাড়িটি দেখাশোনার দায়িত্ব পালন করছেন তারা। নিহত আলাউদ্দিনের বাড়ি হাটহাজারী উপজেলার ফতেপুর গ্রামে। তার বাবা শাহ আলম আগে দুবাই ছিলেন। চার বছর আগে দেশে ব্যবসা শুরু করেছেন।

 তিনি বলেন, আলাউদ্দিন কুলগাঁও এলাকায় বন্ধু সাদেকের বাসায় যাওয়ার কথা বলে বুধবার বিকালে বাড়ি থেকে বের হয়। রাত ১২টা পর্যন্ত বাড়ি না ফেরায় এবং মুঠোফোন বন্ধ থাকায় তিনি দুশ্চিন্তা শুরু করেন। পরে রাতেই কুলগাঁও চলে আসেন। তাদের বাড়ি থেকে কুলগাঁও ৬ কিলোমিটার দূরে। সাদেকের বাসায় এসে জানতে পারেন, আলাউদ্দিন আসেনি। তিনি বলেন, কেন তার ছেলেকে মেরে ফেলা হয়েছে তিনি বুঝতে পারছেন না।

বন্ধু সাদেক হোসেন বলেন, কলেজে পড়ার সময় এক মেয়ের সঙ্গে আলাউদ্দিনের প্রেম ছিল। পরে ওই মেয়ের বিয়ে হয়। আবার স্বামীর সঙ্গে ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। পরে দুজনের আবার সম্পর্ক গড়ে ওঠে।

এ বিষয়ে বায়েজিদ বোস্তামী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মুহসীন বলেন, এটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। খুনিরা পূর্বপরিচিত। কী কারণে আলাউদ্দিনকে খুন করা হয়েছে তা তদন্ত করা হচ্ছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর