শুক্রবার, ২৪ মার্চ, ২০১৭ ০০:০০ টা
স্বাধীনতা পদক পেলেন ১৭ জন

পদ্মায় শিক্ষা হয়েছে, আর ষড়যন্ত্র করতে পারবে না : প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

পদ্মায় শিক্ষা হয়েছে, আর ষড়যন্ত্র করতে পারবে

না : প্রধানমন্ত্রী

স্বাধীনতা সংগ্রামে অসামান্য অবদানের জন্য বিশিষ্টজনদের হাতে গতকাল স্বাধীনতা পুরস্কার তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা —বাংলাদেশ প্রতিদিন

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশকে আর কেউ অবহেলা করতে পারবে না, পদ্মায় আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো শিক্ষা পেয়ে গেছে। যেসব সংস্থা কথায় কথায় মিথ্যা দোষারোপ করে; তাদের কাছে নতজানু করে রাখতে চায়, তারা আর কেউ বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করতে পারবে না। গতকাল দুপুরে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে ২০১৭ সালের স্বাধীনতা পদক বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, পদ্মা সেতু নির্মাণ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল এবং অভিযোগ এনেছিল বিশ্বব্যাংক। কানাডার ফেডারেল কোর্ট যার রায়েও বলেছে, এসব মিথ্যা, ভুয়া, বানোয়াট। এখানে অভিযোগের কোনো সত্যতা খুঁজে পাওয়া যায়নি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ একটি স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে কখনই কোনো বিদেশি রাষ্ট্র বা দাতাগোষ্ঠীর কাছে মাথা নত করবে না। কারণ বাংলাদেশ কাঙ্ক্ষিত উন্নয়নের জন্য কারও ওপর নির্ভরশীল নয়। তিনি বলেন, ঘোষণা দিয়েছিলাম নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করব। নিজস্ব অর্থায়নে এই সেতু নির্মাণ করা শুরু করেছি। এই সিদ্ধান্তের ফলে আন্তর্জাতিক বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়েছে।

এ বছর ১৫ জন বিশিষ্ট ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠান হিসেবে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীকে স্বাধীনতা পদক ২০১৭-তে ভূষিত করা হয়। মুক্তিযুদ্ধ, সাহিত্য, সংস্কৃতি এবং উন্নয়নসহ জাতীয় জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে অসামান্য অবদানের জন্য এই পদক প্রদান করা হয়। পুরস্কার হিসেবে প্রত্যেককে ৩ লাখ টাকার চেক, ১৮ ক্যারেট স্বর্ণের একটি পদক ও সনদপত্র প্রদান করা হয়।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ এ বছর স্বাধীনতা পদকে ভূষিত হয়েছেন গ্রুপ ক্যাপ্টেন (অব.) শামসুল আলম বীরউত্তম, স্বাধীন বাংলা বেতারের কর্মকর্তা আশরাফুল আলম, শহীদ মো. নাজমুল হক, সাবেক মন্ত্রী সৈয়দ মহসিন আলী (মরণোত্তর), শহীদ এন এম নাজমুল আহসান (মরণোত্তর), শহীদ ফয়জুর রহমান আহমেদ (মরণোত্তর), চিকিৎসাশাস্ত্রে অধ্যাপক ডা. এ এইচ এম তৌহিদুল আনোয়ার চৌধুরী, সাহিত্যে রাবেয়া খাতুন ও গোলাম সামদানী কোরায়শী (মরণোত্তর), সংস্কৃতি ক্ষেত্রে প্রফেসর ড. এনামুল হক, নৃত্যকলায় ওস্তাদ বজলুর রহমান বাদল, সমাজকল্যাণে খলিল কাজী, গবেষণা ও প্রশিক্ষণে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান ও অধ্যাপক ড. ললিত মোহন নাথ (মরণোত্তর) এবং জনপ্রশাসনে অধ্যাপক মো. আসাদুজ্জামান।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন এবং স্বাধীনতা পদক বিজয়ীদের সাইটেশন পাঠ করেন। পদকপ্রাপ্তদের পক্ষে অধ্যাপক ড. এনামুল হক নিজস্ব অনুভূতি ব্যক্ত করে বক্তব্য দেন। পদকপ্রাপ্তরা প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পদক গ্রহণ করেন। বিমানবাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল আবু এসরার বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর পক্ষে প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে স্বাধীনতা পদক গ্রহণ করেন।

মরণোত্তর পদকের ক্ষেত্রে শহীদ মো. নাজমুল হকের পক্ষে ছেলে ইঞ্জিনিয়ার শহীদুল ইসলাম হক, সৈয়দ মহসিন আলীর পক্ষে স্ত্রী সৈয়দা সায়রা মহসিন এমপি, শহীদ এন এম নাজমুল আহসানের পক্ষে ছোট ভাই এম এন সদরুল আহসান, শহীদ ফয়জুর রহমান আহমেদের পক্ষে কন্যা মিসেস সুফিয়া খাতুন, মরহুম গোলাম সামদানী কোরায়শীর পক্ষে পুত্র গোলাম ইয়াজদানী কোরায়শী এবং প্রয়াত অধ্যাপক ড. ললিত মোহন নাথের পক্ষে স্ত্রী আরতি নাথ প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে স্বাধীনতা পদক গ্রহণ করেন। প্রধানমন্ত্রী পদক বিজয়ীদের সঙ্গে ফটোসেশনেও অংশগ্রহণ করেন।

 

স্বাধীনতা পুরস্কারপ্রাপ্তদের অভিনন্দন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘স্বাধীনতা পুরস্কার’ দেশের সর্বোচ্চ জাতীয় পুরস্কার। যারা স্বাধীনতা পুরস্কারপ্রাপ্ত সম্মানিত সুধীবৃন্দ, আমি মনে করি স্বাধীনতার চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে জাতীয় জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে গৌরবোজ্জ্বল ও কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তারা পুরস্কার পেয়েছেন। যারা পুরস্কার অর্জন করেছেন, আপনারা সমাজের অনুকরণীয় ব্যক্তিত্ব। আমাদের সমাজে যারা নিজেদের জীবনকে উন্নত করে গড়ে তুলতে চায়, তারা আপনাদের পথ অনুসরণ করবে। আপনাদের মেধা-মনন দিয়ে একটি প্রগতিশীল সমাজ আমরা গড়ে তুলতে চাই।

শেখ হাসিনা বলেন, আমরা চাই আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মও এভাবে একটি আদর্শ নিয়ে গড়ে উঠবে এবং স্ব স্ব কর্মক্ষেত্রে কৃতিত্বের সঙ্গে অবদান রাখবে। একই সঙ্গে আপনাদের পদাঙ্ক অনুসরণ করে দেশকে উন্নত সমৃদ্ধ করে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা রাখবে, এটাই আমাদের প্রত্যাশা।

শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধু গ্রেফতারের পূর্বমুহূর্তে ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। তার ডাকে সাড়া দিয়ে বাঙালি জাতি নয় মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর চূড়ান্ত বিজয় অর্জন করে। তিনি বলেন, ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি পাকিস্তানের কারাগার থেকে দেশে ফিরে বঙ্গবন্ধু যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠনে আত্মনিয়োগ করেন। তিন মাসের মধ্যে ভারতীয় মিত্রবাহিনীর সৈন্যদের দেশে ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা করেন। বিশ্বের প্রায় সব দেশের স্বীকৃতি আদায় করেন এবং সমগ্র জাতিকে একটি সংবিধান উপহার দেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, অবকাঠামোগত উন্নয়নসহ একটি দেশকে এগিয়ে নিতে যা যা প্রয়োজন তার সবই একে একে করছি। যার শুভফল দেশের মানুষ পাচ্ছে। ২০০৯ থেকে ২০১৭ সাল এই আট বছর নিরলস পরিশ্রমের মাধ্যমে আজকে বাংলাদেশকে বিশ্বমর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়েছি। সরকার বার্ষিক উন্নয়নের ৯০ শতাংশই নিজস্ব অর্থায়নে করতে সক্ষম হয়েছে। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ ২০২১ সালের মধ্যে মধ্য আয়ের দেশ হবে। ২০৪১ সালের মধ্যে দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশ হবে উন্নত দেশ। আগামী দিনে যারা দেশের জন্য কাজ করবে, আমি আশা করছি, তারা আমাদের কাজকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। আমরা দেশকে ক্ষুধামুক্ত ও দরিদ্রমুক্ত দেশ হিসেবে গড়ে তুলব।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর