শনিবার, ২৫ মার্চ, ২০১৭ ০০:০০ টা

স্বীকৃতির অপেক্ষায় ওরা ৬ জন

মাসুদ হাসান বাদল, শেরপুর ও সাইফুল ইসলাম, নালিতাবাড়ী

স্বীকৃতির অপেক্ষায় ওরা ৬ জন

শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার সোহাগপুর বিধবাপল্লীতে ১৯৭১ সালে নির্যাতনের শিকার ১৪ বীরাঙ্গনার মধ্যে ইতিমধ্যে ছয়জনকে মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি দিয়েছে সরকার। বাকিরা স্বীকৃতির অপেক্ষায় প্রহর গুনছেন। এর মধ্যে একজন স্বীকৃতি পাওয়ার অপেক্ষায়     থেকে মৃত্যুবরণও করেছেন। এখন তার ছেলে মরণোত্তর মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি চেয়ে আবেদন করেছেন। বীরাঙ্গনাদের মুখে একটাই কথা—মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পেয়ে মরতে চাই। এই বীরাঙ্গনারা স্বীকৃতির আশায় বুক বেঁধে আছেন। স্বীকৃতি পেতে তারা সম্প্রতি মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে আবেদনও করেছেন। স্বীকৃতি নিয়ে তারা জীবনের শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করার ইচ্ছার কথা জানিয়েছেন বাংলাদেশ প্রতিদিনের কাছে। এরা হলেন সোহাগপুর গ্রামের করফুলি বেওয়া, হাজেরা বেওয়া, আমেনা বেওয়া, অজুফা বেওয়া ও কাকরকান্দি গ্রামের হাছনে আরা। এ ছাড়া মৃত জরিতন বেওয়ার ছেলে আজগর আলী মায়ের মরণোত্তর মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি চেয়েছেন। এর আগে যারা স্বীকৃতি পেয়েছেন তারা হলেন—জোবেদা খাতুন, জোবেদা বেওয়া, আছিরন নেছা, হাছেনা বানু, হাফিজা বেওয়া ও সমলা বেওয়া। এলাকাবাসী ও নির্যাতিত বীরাঙ্গনাদের পরিবার সূত্রে জানা গেছে, ১৯৭১ সালে ২৫ জুলাই পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী সোহাগপুর গ্রামে গণহত্যা চালায়। সে সময় ১৮৭ জন গ্রামবাসীকে হত্যা করা হয়। তখন ৬২ জন নারী বিধবা হন। তাদের মধ্যে ১৪ জন নারী পাকহানাদার বাহিনী ও এ দেশীয় রাজাকারদের হাতে নির্যাতনের শিকার হন। তাদের মধ্যে দুজন মারা গেছেন। বেঁচে আছেন ১২ জন নারী। এর মধ্যে ছয়জনকে সরকার নারী মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি দিয়েছে। বাকিরা স্বীকৃতির আশায় মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছেন। এদের মধ্যে করফুলি বেওয়া আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে সাক্ষীও দিয়েছিলেন। আবেদকারী করফুলি বেওয়া বলেন, ‘গণহত্যায় আমার স্বামীসহ পরিবারের তিনজনরে হারাইছি। আমগোর উপর যে অত্যাচার অইছে। এইডা ভাষায় কওয়ার মতন না। বুকের মধ্যে সব সুমু আগুন চাপা দিয়া কষ্ট করছি। নির্যাতনের ঘটনার বর্ণনা দিয়া ট্রাইব্যুনালে সাক্ষী দিছি। ছয়জনের স্বীকৃতি সরকার দিছে। আমরা আবেদন করছি। আমগোরে স্বীকৃতি দিলে শেষ বয়সে একটু শান্তি লইয়া মরবার পাইতাম।’ আবেদনকারী অজুফা বেওয়া বলেন, ‘আমি চোখে দেহি না। কোনো কামকাজ করবার পাই না। গণহত্যায় আমার স্বামী ও শ্বশুররে হত্যা করা হয়ছিল। সেই দিন আমি নির্যাতনের শিকার অইছি। স্বাধীনতার ৪৬ বছর পরেও মানুষ আমগো দূর দূর ছেই ছেই করছে। পাঁচ ছেলে-মেয়ে লইয়া বাড়ি বাড়ি গুরছি। কেও জায়গা দিচ্ছে না। অহন ছেলের লগে থাকছি। সরকার ছয়জনরে মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতি দিছে। অহন আমরা আবেদন করছি। স্বীকৃতি পাইলে একটু স্বস্তি লইয়া মরবার পাইরতাম।’

সোহাগপুর শহীদ পরিবার কল্যাণ সমিতির সভাপতি মো. জালাল উদ্দিন বলেন, ইতিমধ্যে সরকার ছয়জনকে নারী মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতি দিয়েছে। বাকিরা সরকারের কাছে আবেদন করেছেন। আমরা চাই সরকার তাদের স্বীকৃতি দিয়ে শেষ বয়সের আশা পূরণ করবে।

সর্বশেষ খবর