রবিবার, ২৬ মার্চ, ২০১৭ ০০:০০ টা

চমক আওয়ামী লীগে, ব্যস্ততায় বিএনপি প্রচারণা প্রত্যাহার মনিরুলের

কুমিল্লা সিটি নির্বাচন

নিজস্ব প্রতিবেদক ও কুমিল্লা প্রতিনিধি

চমক আওয়ামী লীগে, ব্যস্ততায় বিএনপি প্রচারণা প্রত্যাহার মনিরুলের

কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের বাকি আর মাত্র তিন দিন। নির্বাচন ঘনিয়ে আসায় অবিরাম প্রচার-প্রচারণায় ছুটে চলেছেন হেভিওয়েট দুই প্রার্থী। নিজ নিজ দলের প্রার্থীদের বিজয়ী করতে ঘরে ঘরে যাচ্ছেন দুই দলের শীর্ষ নেতারা। চমক দিয়েই গতকাল প্রচারণা শুরু করে আওয়ামী লীগ। সকালে দলের মেয়র প্রার্থী আফজল খান-কন্যা আঞ্জুম সুলতানা সীমা প্রচারণায় বের হন সদর আসনের এমপি আ ক ম বাহারউদ্দীন বাহার-কন্যা তাহসিন বাহার সূচনা ওরফে সূচিকে সঙ্গে নিয়ে। উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের নির্বাচনী টিম সমন্বয়ক ও প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফরউল্লাহ, সদস্যসচিব এ কে এম এনামুল হক শামীম, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, কেন্দ্রীয় নেতা এস এম কামাল হোসেনসহ সাবেক ছাত্রনেতারা। এ সময় স্থানীয় নেতা-কর্মীদের মধ্যে উৎসবের আমেজ দেখা গেছে। এরপর যুবলীগের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ওমর ফারুক চৌধুরী কুমিল্লা টাউন হলে জেলা যুবলীগের সর্বস্তরের নেতা-কর্মী নিয়ে বর্ধিত সভা করেন। এ ছাড়া সীমার পক্ষে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স চেয়ারপারসন নাফিসা কামাল এবং রেলমন্ত্রীর স্ত্রী হনুফা আক্তার রিক্তাও গণসংযোগ করেন।

সাক্কুর প্রচারণা থেকে সরে দাঁড়ালেন মনিরুল : বিএনপি প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কুর নির্বাচনী প্রচারণা থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মনিরুল হক চৌধুরী। বিকালে নগরীর নোয়াগ্রামের বাসায় তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিএনপির প্রার্থী মেয়র মনিরুল হক সাক্কু আজ পর্যন্ত নির্বাচনের বিষয়ে আমার সঙ্গে কোনো কথা বলেননি। আমি সাক্কুর প্রচারণায় মাঠে নামলে তার ভোট কমবে বলেও তার কিছু নেতা মাঠে অপপ্রচার চালাচ্ছেন। তাই আমি সাক্কুর নির্বাচনের বিজয়ের স্বার্থে প্রচার ও গণসংযোগ থেকে সরে দাঁড়ালাম।’ শুক্রবারও সাক্কু তার নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণার সময় দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে নিয়ে মনিরুল হক ছিলেন। কিন্তু হঠাৎ করে গতকাল বিএনপির এই কেন্দ্রীয় নেতার প্রচারণা থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণায় সাক্কুর ভোটের মাঠে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে বলে সচেতন মহলের অভিমত। এ বিষয়ে একাধিকবার মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করেও মেয়র প্রার্থী সাক্কুর প্রতিক্রিয়া জানা সম্ভব হয়নি।

চমক নিয়েই গণসংযোগ : স্থানীয়রা জানিয়েছেন, কুমিল্লার রাজনীতিতে আওয়ামী লীগের আফজল খান ও আ ক ম বাহারউদ্দীন বাহার গ্রুপ বিভক্ত ছিল দীর্ঘদিন। সিটি করপোরেশন নির্বাচনের আগেও সেই বিভেদ দেখা দেয়। তবে দলীয় সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ ও কেন্দ্রীয় নেতাদের চেষ্টায় সে দূরত্ব নিরসন হয়েছে। আওয়ামী লীগ প্রার্থীর অবস্থান আগে যে কোনো সময়ের চেয়ে ভালো। দলের সকল পর্যায়ের নেতা-কর্মী এখন ঐক্যবদ্ধ। ব্যক্তিস্বার্থের চেয়ে তারা ‘নৌকা’ নিয়েই এখন ভাবছেন। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত নেতারা ছুটে চলেছেন ভোটারদের বাড়ি বাড়ি। গতকাল সকালে সবচেয়ে বড় চমক ছিল সদর আসনের এমপি আ ক ম বাহারউদ্দীন বাহারের মেয়ে তাহসিন বাহার সূচনা আওয়ামী লীগ প্রার্থী সীমার সঙ্গে নৌকার প্রচারণায় মাঠে নামেন। বাহারকন্যাসহ আওয়মাী লীগ নেতারা নৌকায় ভোট প্রার্থনার পাশাপাশি প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন, আগামীতে একটি সুন্দর নগরী উপহার দেবেন তারা। এদিকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খানের নেতৃত্বে দলের একটি টিম নির্বাচনী মাঠ চষে বেড়াচ্ছে। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে তাদের প্রার্থী সাক্কু পুনরায় মেয়র নির্বাচিত হবেন বলে তারা আশাবাদী। কুমিল্লা টাউন হলে জেলা যুবলীগের সর্বস্তরের নেতা-কর্মী নিয়ে বর্ধিত সভায় যুবলীগ প্রেসিডিয়াম সদস্য মো. আতাউর রহমানের সভাপতিত্বে ও এম শাহাদাৎ হোসাইন তছলিমের পরিচালনায় বক্তৃতা করেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা আলাউদ্দীন আহমেদ চৌধুরী নাসিম, সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, কেন্দ্রীয় নেতা এস এম কামাল হোসেন, যুবলীগ সাধারণ সম্পাদক মো. হারুনুর রশীদ, প্রেসিডিয়াম সদস্য শহীদ সেরনিয়াবাত, মো. ফারুক হোসেন, মাহবুবুর রহমান হিরণ, আবদুস সাত্তার মাসুদ, অধ্যাপক এ বি এম আমজাদ হোসেন, ইঞ্জিনিয়ার নিখিল গুহ, শাহজাহান ভূঁইয়া মাখন, মো. জাকির হোসেন খান, আনোয়ারুল ইসলাম, যুগ্ম-সম্পাদক মহিউদ্দিন আহম্মেদ মহি, সুব্রত পাল, সাংগঠনিক সম্পাদক মো. আজাহার উদ্দিন, ঢাকা মহানগর যুবলীগ উত্তর সভাপতি মাইনুল হোসেন খান নিখিল, সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল হোসেন প্রমুখ। এ সময় যুবলীগ চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ওমর ফারুক চৌধুরী নান্দনিক ও সুন্দর নগরী গড়ে তুলতে নৌকার প্রার্থী সীমাকে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানান। যুবলীগ চেয়ারম্যান সংগঠনের স্থানীয় নেতাদের উদ্দেশে বলেন, ‘৩০ মার্চ ভোটের দিন সকালে ভোটারদের কেন্দ্রে নিয়ে আসবেন। তারা যেন নৌকায় ভোট দেন সেভাবে ভোট প্রার্থনা করবেন।’ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কৃষি ও সমবায় সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলী মহিলা লীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাফিয়া খাতুন, সাধারণ সম্পাদক মাহমুদা বেগমকে সঙ্গে নিয়ে চষে বেড়াচ্ছেন কুমিল্লার সিটি করপোরেশনের মাঠ। ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের নিয়ে রাতদিন প্রচার-প্রচারণা ও গণসংযোগে রয়েছেন ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও কেন্দ্রীয় উপকমিটির সাবেক সহ-সম্পাদক লিয়াকত শিকদার, ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক অজয় কর খোকন, ছাত্রলীগের বর্তমান সভাপতি মো. সাইফুর রহমান সোহাগ ও সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসাইন। এ ছাড়া যুবলীগ লীগের নেত্রীদের নিয়ে প্রচারণার শুরু থেকেই মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন সংগঠনের সভাপতি নাজমা আক্তার ও সাধারণ সম্পাদক অপু উকিল। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে গতকাল ভোট প্রার্থনা করেন অসীম কুমার উকিল, আফজাল হোসেন, দেলোয়ার হোসেন, প্রকৌশলী আবদুস সবুর, শামসুন্নাহার চাঁপা, ডা. রোকেয়া সুলতানা প্রমুখ। এ ছাড়া মাঠে আছেন কৃষক লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক সমীর কুমার চন্দ্র চন্দ, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শেখ সোহেল রানা টিপু প্রমুখ। বিএনপি নেতাদের জোর প্রচারণা : বিএনপি প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কুর সমর্থনে গতকাল বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, বিএনপি নেতা সেলিমা রহমান, শামসুজ্জামান দুদু, শওকত মাহমুদ, অ্যাডভোকেট নিতাই রায় চৌধুরী, জয়নুল আবদিন ফারুক, সঞ্জীব চৌধুরী, হাবিবুর রহমান হাবিব, অ্যাডভোকেট বোরহান উদ্দিন, ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, ফজলুল হক মিলন, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, কর্নেল (অব.) আনোয়ারুল আজিম, শিরিন সুলতানা, শামীমা বরকত লাকী, হাবিবুল ইসলাম হাবিব, অ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়া, অমলেন্দু দাস অপু, শামসুদ্দিন দিদার, যুবদলের মোরতাজুল করিম বাদল, মাসুদ রানা, ছাত্রদলের ঢাকা মহানগর (উত্তর) সভাপতি মিজানুর রহমান রাজ কুমিল্লা মহানগীর বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগ চালান এবং প্রচারপত্র বিতরণ করেন। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট নিতাই রায় চৌধুরীর নেতৃত্বে একটি টিম নগরীর চকবাজার, কাপড়িয়াপট্টি, ঋষিপাড়া, কাঁচাবাজার, ইপিজেডের ৩ নম্বর গেটে প্রচারণা চালায়। এ ছাড়া বিভিন্ন উঠান বৈঠকে অংশ নেন বিএনপির কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতারা। ১২ নম্বর ওয়ার্ডের হোচ্ছামিয়া হাইস্কুলের সামনে উঠান বৈঠকে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেন, ‘ভয়ভীতি দেখিয়ে জনগণের হৃদয় জয় করা যায় না।

গণতন্ত্র নির্বাসনে পাঠিয়ে, দুর্নীতি, লুটপাট, সন্ত্রাস চালিয়ে, জাতীয় স্বার্থ বিকিয়ে দিয়ে আপনারা দেশকে ধ্বংসের শেষ প্রান্তে নিয়ে গেছেন।’ তিনি কুমিল্লাবাসীর প্রতি ৩০ মার্চ কেন্দ্রে গিয়ে ধানের শীষে ভোট দিয়ে আওয়ামী দুঃশাসনের প্রতিবাদ জানিয়ে গণতন্ত্রের সংগ্রাম জোরদার করার আহ্বান জানান।

সর্বশেষ খবর