সোমবার, ২৭ মার্চ, ২০১৭ ০০:০০ টা
বিএসটিআইর সনদহীন কারখানা

মানহীন কাগজ কেনার পাঁয়তারা এনসিটিবির

আকতারুজ্জামান

আগামী শিক্ষাবর্ষে বিভিন্ন শ্রেণির বই ছাপার জন্য ২৪ হাজার ৭০০ টন কাগজ কিনছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। এর মধ্যে ব্যক্তিমালিকানাধীন পেপার মিল থেকে কাগজ কেনা হবে ২১ হাজার ৫০০ টন। এই কাগজের জন্য ইতিমধ্যে বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে টেন্ডার আহ্বান করা হয়েছে। আগামীকাল ২৮ মার্চ এ দরপত্র উন্মুক্ত করা হবে। অভিযোগ উঠেছে, বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশনের (বিএসটিআই) সার্টিফিকেশন মার্কস (সিএম) সনদ নেই এমন পেপার মিলের কাছ থেকে কাগজ কেনার পাঁয়তারা করছে এনসিটিবি। টেন্ডার আহ্বানের সময়ও বিএসটিআই সনদের বাধ্যবাধকতা রাখেননি সরকারি এ প্রতিষ্ঠানটির কর্তারা। অথচ দরপত্রের মাধ্যমে কাগজ ক্রয়ের সময় এর গুণগত মান যাচাইসহ বিএসটিআইর সিএম লাইসেন্স জমাদানের শর্ত আরোপের তাগিদ দিয়েছিলেন বিএসটিআইর মহাপরিচালক। অভিযোগ উঠেছে, মানহীন কাগজ উৎপাদনকারী মিলকে কাজ পাইয়ে দিতেই এনসিটিবি-সংশ্লিষ্টরা সিএম লাইসেন্সের বাধ্যবাধকতা রাখেননি। অনৈতিক সুবিধা নিয়েই তারা এই বড় ফাঁকফোকর রেখে দিয়েছেন বলেও অভিযোগ অনেকের। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, লেখা ও ছাপার কাগজের জন্য বিএসটিআই থেকে সার্টিফিকেশন মার্কস (সিএম) লাইসেন্স গ্রহণ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। সিএম লাইসেন্স ছাড়াই কাগজ পণ্যের বিক্রি, বিতরণ ও বাণিজ্যিক বিজ্ঞাপন প্রচার বিএসটিআই অর্ডিন্যান্স, ৩৭ (১৯৮৫) এবং বিএসটিআই (অ্যামেন্ডমেন্ড) অ্যাক্ট, ২০০৩ অনুযায়ী আইনত নিষিদ্ধ ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এই বিধান অমান্যকারীদের কারাদণ্ড অথবা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করার বিধান রয়েছে। অথচ কিছু উৎপাদনকারী, আমদানিকারক বা বিক্রেতা এখনো বিএসটিআইর সিএম লাইসেন্স গ্রহণ না করে গুণগত মান যাচাই ছাড়াই অবৈধভাবে লেখা ও ছাপার কাগজ বিক্রি করে আসছেন। এতে নিম্নমানের কাগজের আধিক্য লক্ষ করা গেছে। পাশাপাশি সরকারও প্রতিবছর বিপুল পরিমাণ রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। বিএসটিআইর মহাপরিচালক ইকরামুল হক (সাবেক) একটি চিঠির মাধ্যমে গত বছর এনসিটিবির চেয়ারম্যানকে জানান, এনসিটিবির বিভিন্ন কাজে ব্যবহৃত কাগজ গুণগত মান অনুযায়ী হওয়া প্রয়োজন। দরপত্রের মাধ্যমে কাগজ ক্রয়ের সময় এর গুণগত মান যাচাইসহ বিএসটিআইর সিএম লাইসেন্স জমাদানের শর্ত আরোপের তাগিদ দেন তিনি। তবে কাগজ ক্রয়ের জন্য টেন্ডার আহ্বানের ক্ষেত্রে এ শর্ত এড়িয়ে গেছে এনসিটিবি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এনসিটিবির একটি সূত্র জানায়, ২০১৭ শিক্ষাবর্ষের বই ছাপার কাজের জন্য কাগজ কিনতে গত বছর টেন্ডার আহ্বানের পর বিএসটিআই একটি পত্রের মাধ্যমে সিএম সনদের শর্ত জুড়ে দেওয়ার ব্যাপারে তাগিদ দেয়। তবে আগেই টেন্ডার বিজ্ঞপ্তি দেওয়ার কারণে এ শর্ত দেওয়া সম্ভব হয়নি। কিন্তু আগামী শিক্ষাবর্ষের বই ছাপার জন্য টেন্ডারের ক্ষেত্রেও রহস্যজনক কারণে এ শর্ত জুড়ে দেয়নি এনসিটিবি। সিএম সনদহীন, মানহীন কারখানার কাছ থেকে কাগজ কেনার মাধ্যমে এনসিটিবির একটি সংঘবদ্ধ চক্র মোটা অঙ্কের বাণিজ্য করতে মরিয়া বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এদিকে বাংলাদেশ পেপার মিলস অ্যাসোসিয়েশন (বিপিএমএ) ২১ মার্চ শিল্পমন্ত্রী বরাবর একটি লিখিত আবেদন জমা দেন। অর্থমন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রী ও বিএসটিআই মহাপরিচালকের কাছেও এর অনুলিপি পাঠানো হয়েছে। আবেদনে উল্লেখ করা হয়, এনসিটিবি আইনের তোয়াক্কা না করে বিএসটিআই মান ছাড়াই কাগজ ও মুদ্রিত বই ক্রয় করে চলেছে। এতে একদিকে আইন অমান্য করা হচ্ছে। একই সঙ্গে মুদ্রিত বইয়ের গুণগত মান বজায় থাকছে না। শিক্ষার্থীরা মানসম্মত বই না পাওয়ায় বই উৎসবের মতো সফল অর্জন সঠিকভাবে মূল্যায়ন হচ্ছে না। একই সঙ্গে ভাবমূর্তিও নষ্ট হচ্ছে সরকারের। বিএসটিআই অনুমোদনহীন মিলের কাছ থেকে কাগজ কেনায় সরকারও রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। টেন্ডার আহ্বানের ক্ষেত্রে বিএসটিআই সনদ বাধ্যতামূলক করতে বিপিএম একাধিকবার এনসিটিবির কাছে আবেদন জানালেও এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি। শিক্ষা মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট বিভাগকে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ জানান অ্যাসোসিয়েশনের নেতারা। টেন্ডার আহ্বানের ক্ষেত্রে সনদের শর্ত জুড়ে না দেওয়ার কারণ জানতে এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক নারায়ণ চন্দ্র সাহার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে বলেন, কাগজ কেনার ক্ষেত্রে পেপার মিলের বিএসটিআইর সনদ থাকতে হবে এটা বাধ্যতামূলক নয়। দরপত্রের মাধ্যমে কাগজ ক্রয়ের সময় সিএম লাইসেন্স জমাদানের শর্ত আরোপের ব্যাপারে বিএসটিআই মহাপরিচালকের চিঠির ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘এটা আমার মানতে হবে এমন কোনো কথা নেই।’

সর্বশেষ খবর