মঙ্গলবার, ২৮ মার্চ, ২০১৭ ০০:০০ টা

জঙ্গি নিধন চলবে, উন্নয়নও হবে

স্বাধীনতা দিবসের আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

জঙ্গি নিধন চলবে, উন্নয়নও হবে

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জঙ্গি-সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে অভিযানও চলবে, দেশের উন্নয়ন-অগ্রগতির চাকাও সচল রাখা হবে। বাংলাদেশের মাটিতে জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসের স্থান হবে না।

মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে গতকাল রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় সভাপতির ভাষণে তিনি এ কথা বলেন। গণহত্যা দিবসে বিএনপির কর্মসূচি না থাকায় দলটির তীব্র সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি-জামায়াত গণহত্যা দিবস পালন করেনি। এতে স্পষ্ট হয়েছে যে তারা যেমন বাংলাদেশের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না, তেমনি যুদ্ধাপরাধী, গণহত্যাকারী, অগ্নিসংযোগকারী ও মেয়েদের ইজ্জত লুণ্ঠনকারীদের এরা আপন মনে করে। জনগণকে এটা মনে রাখতে হবে। শেখ হাসিনা বলেন, গণহত্যা দিবস আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। জাতিসংঘ ৯ ডিসেম্বরকে গণহত্যা দিবস ঘোষণা করেছে। কিন্তু যে দেশে যেদিন গণহত্যা শুরু হয়, সে দেশে সেদিন দিবসটি পালনের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। জাতীয় সংসদে  আলোচনার পর ২৫ মার্চ গণহত্যা দিবস পালনের সিদ্ধান্ত পাস হয়েছে। এরপর মন্ত্রিসভা বৈঠকেও এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হয়েছে। মন্ত্রিসভায় যখন সিদ্ধান্ত হয়েছে, তখন এটা সবার জন্য প্রযোজ্য। তিনি বলেন, বিএনপি-জামায়াত বুঝিয়ে দিল তারা বাংলার জনগণের সঙ্গে নেই। তারা আছে আলবদর, আলশামস, রাজাকার, হানাদার পাকিস্তানি বাহিনীর সঙ্গে। তা না হলে নিশ্চয় তারা ১৬ ডিসেম্বর বিজয় না হওয়া পর্যন্ত দীর্ঘদিন যেভাবে এ দেশে গণহত্যা চলেছে, ওই নির্যাতিত মানুষের পাশে থাকত। মহান মুক্তিযুদ্ধে যারা শাহাদাতবরণ করেছে তাদের পাশে থাকত। যারা জিয়াউর রহমানকে স্বাধীনতার ঘোষক বলেন তাদের ‘অর্বাচীন’ মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোনো একজনের বাঁশির ফুঁয়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়নি। বঙ্গবন্ধুর ২৪ বছরের সংগ্রাম ও সঠিক নেতৃত্বের ফসলই হচ্ছে আমাদের স্বাধীনতা। তাই এখন স্বাধীনতার ঘোষণা নিয়ে কে কী বলে তা নিয়ে আলোচনা করার কোনো দরকার নেই। আর স্বাধীনতার ঘোষণা নিয়ে দেশের সর্বোচ্চ আদালতের রায়েই বিতর্কের অবসান হয়েছে। রায়েই আছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানই স্বাধীনতার ঘোষক। আসলে যারা দেশের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করেন না, তারাই এ বিষয়ে প্রশ্ন তুলে জনগণকে বিভ্রান্ত করতে চান। প্রধানমন্ত্রী বলেন, জঙ্গিদের বিরুদ্ধে অভিযানে গেলেই কাদের মনে কষ্ট লাগে, মনোবেদনার সৃষ্টি হয় তা দেশবাসীর সামনে স্পষ্ট। দেশ এগিয়ে গেলে, দেশের মানুষ শান্তিতে থাকলেই এদের অন্তর্জ্বালা শুরু হয়। কীভাবে জঙ্গি-সন্ত্রাসীদের রক্ষা করবে, তাদের অপকর্ম কীভাবে ঢাকবে সেজন্য একই ভাঙা রেকর্ড তারা বাজিয়েই যাচ্ছে। তিনি বলেন, জঙ্গি ও সন্ত্রাসীদের ব্যাপারে আমাদের অবস্থান অত্যন্ত স্পষ্ট। বিএনপি-জামায়াত জোটের অগ্নিসন্ত্রাস, জ্বালাও-পোড়াও যেভাবে দেশের মানুষ মোকাবিলা করেছে, এখন সময় এসেছে জঙ্গি-সন্ত্রাসীদেরও ঐক্যবদ্ধভাবে মোকাবিলা ও প্রতিহত করার।

শেখ হাসিনা বলেন, ধর্মের নামে জঙ্গিবাদ ও আত্মহননের পথ বেছে নিয়ে মুষ্টিমেয় একটি গোষ্ঠী পুরো মুসলমানদেরই বিশ্বের সামনে হেয় করছে। ইসলাম শান্তি ও পবিত্র ধর্ম। ইসলামে আত্মহনন মহাপাপ। তিনি বলেন, আত্মহনন করে মানুষ মারতে পারলেই নাকি জান্নাতে যাবে, সঙ্গে আরও ৭০ জনকে সঙ্গে নিয়ে যাওয়া যাবে। এ পর্যন্ত যারা আত্মঘাতী হয়েছে তারা কি জান্নাতে গেছে নাকি দোজখে গেছে? কেউ (আত্মঘাতী) কি এ ব্যাপারে কোনো মেসেজ পাঠিয়েছে, কেউ কি সেই মেসেজ পেয়েছে? এসব মুষ্টিমেয় লোক পুরো মুসলমানদের জীবনই অতিষ্ঠ করে তুলেছে। প্রধানমন্ত্রী বাড়ি ভাড়া দেওয়ার সময় বাড়িওয়ালাদের সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেন, যাকে বাড়ি ভাড়া দিচ্ছেন তারা কী করেন? কোথা থেকে এসেছেন তা ভালো করেই জেনে ভাড়া দেবেন। নইলে ক্ষতি আপনাদেরই হবে। আর দেশবাসীর কাছেও অনুরোধ, যে যেখানেই আছেন, যারা জঙ্গিবাদের সঙ্গে জড়িত তাদের চিহ্নিত করে সুপথে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করুন।

এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে টেস্ট ও ওয়ানডে জয়ের কথা তুলে ধরে বলেন, একদিকে খেলা, অন্যদিকে জঙ্গিদের বিরুদ্ধে অভিযান। এই দুই টেনশন নিয়েই আমাদের চলতে হচ্ছে। একদিকে আমাদের আনন্দের খবর, অন্যদিকে জঙ্গিদের তৎপরতা। তবে যে কোনো মূল্যে আমরা দেশের মানুষের শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করব।

প্রধানমন্ত্রী দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রকারীদের সম্পর্কে দেশবাসীকে সজাগ থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ঘরের শত্রু বিভীষণ। এই বিভীষণদের জ্বালা নিয়েই আমাদের চলতে হবে। এরা নিজের স্বার্থ নিয়ে ঘোরে আর দেশের দুর্নাম করে বেড়ায়। এরা নিজেদের স্বার্থেই জঙ্গিদের মদদ দেয়, তাদের রক্ষার চেষ্টা করে। এ সময় বঙ্গবন্ধুর একটি উদ্ধৃত্তি তুলে ধরে তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু নিজেই বলেছেন, ‘এ দেশের মাটি এতই উর্বর যে বীজ ফেললে ফসলও জন্মায়, সঙ্গে আগাছা-পরগাছাও জন্মায়’। এসব আগাছা-পরগাছা (ষড়যন্ত্রকারী) উপড়ে ফেলতে পারলে দেশের আরও উন্নয়ন ও সমৃদ্ধি আসবে। আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, মাহবুব-উল আলম হানিফ, ডাকসুর সাবেক ভিপি আখতারুজ্জামান, শাম্মী আহমেদ, সাদেক খান, শাহে আলম মুরাদ প্রমুখ। সভা পরিচালনা করেন প্রচার সম্পাদক হাছান মাহমুদ। দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের মঞ্চে উপস্থিত থাকলেও বক্তৃতা করেননি।

সর্বশেষ খবর