শিরোনাম
মঙ্গলবার, ২৮ মার্চ, ২০১৭ ০০:০০ টা
বই ছাপার শুল্ক

দিতে হচ্ছে দেশিদের বিদেশিদেরটা দিয়ে দিচ্ছে সরকার

আকতারুজ্জামান

বই ছাপার কাজে আমদানি করা বিভিন্ন মুদ্রণ কাগজ ও অন্যান্য উপকরণ বাবদ ৬১ শতাংশ শুল্কসহ নানা ধরনের কর এবং চার্জ পরিশোধ করতে হয় দেশীয় মুদ্রণ প্রতিষ্ঠানকে। অন্যদিকে আন্তর্জাতিক টেন্ডারে অংশ নেওয়া বিদেশি মুদ্রণ প্রতিষ্ঠানের ছাপানো বই আমদানির জন্য এলসি খরচ, বীমা খরচ, সিঅ্যান্ডএফ চার্জ, যাবতীয় সরকারি শুল্ক বাবদ ৩১ শতাংশ ছাড়াও ব্যাংক কমিশন পরিশোধ করছে বাংলাদেশ সরকার তথা জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। বাংলাদেশ মুদ্রণ শিল্প সমিতির নেতারা বলছেন, আন্তর্জাতিক দরপত্র প্রক্রিয়ায় চড়া দামে উপকরণ কিনে মুদ্রণকাজ সম্পন্ন করে পাঠ্যপুস্তক সরবরাহ করে দেশীয় প্রতিষ্ঠান অসম একটি প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়। এতে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন দেশীয় মুদ্রণ শিল্প মালিকরা। দেশীয় মুদ্রণ শিল্পের বিকাশ ও উন্নয়নে আন্তর্জাতিক দরপত্র পদ্ধতি বাতিল করার দাবিতে এনসিটিবি চেয়ারম্যান ও প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক বরাবর লিখিত আবেদন জমা দিয়েছেন বাংলাদেশ মুদ্রণ শিল্প সমিতির চেয়ারম্যান তোফায়েল খান। এ ছাড়া দরপত্র মূল্যায়নের সময় শুল্কের ৩১ শতাংশ যোগ করে বিদেশি দরদাতাদের মূল্যায়ন করার দাবি জানিয়েছেন সমিতির নেতারা।

সূত্রমতে, প্রাথমিকের বিভিন্ন শ্রেণির বিনা মূল্যের বই আন্তর্জাতিক টেন্ডারের মাধ্যমে ছাপানো হয় প্রতিবছর। ২০১৭ শিক্ষাবর্ষের জন্য ১১ কোটি ৫৫ লাখ ২৬ হাজার ৯৫২টি বই ছাপানো হয়েছে আন্তর্জাতিক দরপত্রের মাধ্যমে। দেশের পাশাপাশি এবার ভারত ও চীনে প্রাথমিক স্তরের বই ছাপানো হয়েছে।

জানা যায়, আন্তর্জাতিক দরপত্রে অংশ নেওয়া বিদেশি মুদ্রণ প্রতিষ্ঠানসমূহ তাদের অভ্যন্তরীণ বাজার থেকে কাগজসহ অন্যান্য মুদ্রণ উপকরণ সংগ্রহ করে নিজ দেশের সরকারের কাছে বিশেষ রপ্তানি প্রণোদনা সুবিধা গ্রহণ করে। তারা বাংলাদেশ সরকারকে এসব বিনা শুল্কে সরবরাহ করে থাকে। কিন্তু আমদানিকারক হিসেবে এনসিটিবিকে পাঠ্যপুস্তক আমদানির জন্য এলসি খরচ, বীমা খরচ, সিঅ্যান্ডএফ চার্জ, আমদানির জন্য যাবতীয় সরকারি শুল্ক বাবদ ৩১ শতাংশ ছাড়াও ব্যাংক কমিশন পরিশোধ করতে হয়। অথচ টেন্ডারের সময় উদ্ধৃত দর বিদেশি মুদ্রণ শিল্পের ক্ষেত্রে যোগ করা হয় না। অন্যদিকে আন্তর্জাতিক টেন্ডারে অংশ নিয়ে দেশীয় মুদ্রণ প্রতিষ্ঠানকে বিদেশ থেকে আমদানি করা বিভিন্ন ধরনের কাগজ ও মুদ্রণ উপকরণ বাবদ ৬১ শতাংশ শুল্কসহ অন্যান্য কর এবং বিভিন্ন চার্জ পরিশোধ করতে হয়। টেন্ডারে অংশ নিতে গিয়েই বড় প্রতিযোগিতার সম্মুখীন হন এ দেশের ছাপা কারখানা মালিকরা। এনসিটিবি চেয়ারম্যান ও প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক বরাবর মুদ্রণ শিল্প সমিতির আবেদন থেকে জানা যায়, আন্তর্জাতিক টেন্ডারে দাতা সংস্থা বিশ্বব্যাংকের প্রকিউরমেন্ট গাইড লাইন অনুযায়ী বিদেশি প্রতিষ্ঠানকে ৩১ শতাংশের বেশি শুল্ক সুবিধার বিপরীতে দেশীয় প্রতিষ্ঠানকে ১৫ শতাংশ সুবিধা দেওয়া হয়। অথচ এর মধ্য থেকে ৫ শতাংশ আয়কর কেটে নেওয়া হয়। প্রকৃতপক্ষে মাত্র ১০ শতাংশ সুবিধাপ্রাপ্ত হয় দেশীয় প্রতিষ্ঠান। এটি দেশীয় ও বিদেশি দরদাতার মধ্যে বৈষম্য ছাড়া আর কিছু নয় বলেও মন্তব্য করেন সমিতির চেয়ারম্যান তোফায়েল খান। দেশীয় মুদ্রণ শিল্পের বিকাশ ও উন্নয়নে আন্তর্জাতিক দরপত্র পদ্ধতি বাতিলের অনুরোধও জানান তিনি।

সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. জহুরুল ইসলাম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আন্তর্জাতিক টেন্ডারে অংশ নেওয়ার ক্ষেত্রে দেশীয় ও বিদেশি মুদ্রণ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে বৈষম্য দূর করতে পাবলিক প্রকিউরমেন্ট (পিপিআর) বিধিমালার ধারাসমূহ সংশোধনের অনুরোধ জানিয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী বরাবর লিখিত আবেদন জানিয়েছি। এ ব্যাপারে শিগগিরই তার সঙ্গে বৈঠকের কথা রয়েছে। বিদেশি দরদাতাদের বই আমদানি করতে গিয়ে নানা শুল্ক ও চার্জ বাবদ ৩১ শতাংশ পরিশোধ করছে সরকার। আমরা চাই দরপত্র মূল্যায়নের সময় এই ৩১ শতাংশ যোগ করে বিদেশি দরদাতাদের মূল্যায়ন করা হোক।’

সর্বশেষ খবর