মঙ্গলবার, ২৮ মার্চ, ২০১৭ ০০:০০ টা
ঐতিহ্য

নতুন স্বপ্নে বগুড়ার মৃিশল্পীরা

নিজস্ব প্রতিবেদক, বগুড়া

নতুন স্বপ্নে বগুড়ার মৃিশল্পীরা

এক সময় মাটির তৈরি জিনিসপত্র ছিল বাঙালিদের একমাত্র ঐতিহ্য। কিন্তু নানা প্রতিকূলতা আর কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে এ জনপ্রিয় শিল্পকর্ম। অনেক মৃিশল্পী পেশাও বদল করেছেন। তবে পূর্ব পুরুষদের এই শিল্পকে অনেকেই আঁকড়ে ধরে জীবিকা নির্বাহ করছেন। তাদেরই একজন বগুড়ার শেরপুর পৌরশহরের পালপাড়ার নিখিল চন্দ্র পাল। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত এ কাজেই নিয়োজিত থাকেন তিনি। কারণ এ শিল্পই তার একমাত্র আয়ের উৎস। নিখিল চন্দ্র পাল জানান, ২৫ বছর ধরে তিনি এই পেশার সঙ্গে জড়িত। তার পূর্ব পুরুষরা এ কাজ করতেন। চার সদস্যের পরিবার টিকিয়ে রাখতে এটাই তার একমাত্র ভরসা। কিন্তু আধুনিকতার ছোঁয়ায় মানুষ এ শিল্পকর্ম থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়ায় আয়-রোজগার অনেক কমে গেছে। তবে এখানকার দই শিল্পকে ঘিরে আশার আলো দেখছেন মৃিশল্পীরা। কারণ এখানে প্রতিদিন শতশত মণ দই তৈরি হয়। এসব দই রাখার জন্য প্রয়োজন মাটির পাত্রের। এসব দইয়ের পাত্র তৈরির চাহিদা বেশি থাকায় এই শিল্প নিয়ে নতুন করে ভাবনা শুরু হয়েছে। শুধু নিখিল চন্দ্র পালই নয়। উপজেলার পাল সম্প্রদায়ের অন্তত দুই শতাধিক পরিবারের মৃিশল্পের মাধ্যমেই জীবিকা নির্বাহ চলছে। জানা যায়, উপজেলার মৃিশল্পের খ্যাতি ছিল দেশব্যাপী। পৌরশহরসহ উপজেলার খানপুর, সুঘাট ও গাড়ীদহ ইউনিয়নের দুই থেকে তিন হাজার পাল পরিবার এ শিল্পের সঙ্গে জড়িত ছিল। দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হতো মৃতশিল্পীদের হাতে তৈরি মাটির সব জিনিসপত্র। কিন্তু আধুনিকতার ছোঁয়া, কালের বির্বতন আর পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে এ শিল্পটির অবস্থা করুণ। নতুন প্রজন্মের কেউ শিখছেন না মৃিশল্পের কাজ। কমদামে টেকসই প্লাস্টিক, মেলামাইন, লোহা ও সিলভারের তৈরি সামগ্রীর দাপটে কমে গেছে চাহিদা। তবে আশার কথা হচ্ছে দই শিল্পকে ঘিরে উপজেলার ঐতিহ্যবাহী মৃিশল্প আবার নতুন করে জেগে উঠছে। নানা প্রতিকূলতা উপেক্ষা করে অন্তত দুই শতাধিক পরিবার এ মৃিশল্পকে ঘিরেই স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছেন। বৌদ্ধ পাল জানান, প্লাস্টিক ও অ্যালোমুনিয়ামের জিনিসপত্র বাজারে আসায় মাটির তৈরি আসবাবপত্র তেমন একটা চলে না। তবে এখানে প্রতিদিন শতশত মণ দই তৈরি হয়। মাটির তৈরি সরা, পাতিল ও কাপে ভরে শতশত কেজি দই বাজারজাত করা হয়। তাই মাটির তৈরি এসব পাত্রের ব্যাপক চাহিদা থাকায় বিলুপ্ত প্রায় মৃিশল্পের একটি কারখানা খুলেছেন। তার কারখানায় শুধু দইয়ের জন্য মাটির পাত্র তৈরি হয়। এদিকে, সংসারের খরচ জোগাতে বাড়ির গৃহিণীরাও এ কাজ করে থাকেন। সুমনা রানী পাল বলেন, ছোটবেলা থেকেই এ কাজ করে আসছেন। এটাই তাদের একমাত্র উপার্জনের পথ। সুভাষ পাল, খুদিরাম পাল ও শিশির পাল জানান, মাটির ব্যাংক, টালি, ফুলের টপ, পটারীসহ মাটির তৈরি খেলনা সামগ্রী এখনো জনপ্রিয়। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে পুরনো এই পেশার প্রতি পাল সম্প্রদায়ের লোকজনের আগ্রহ বাড়বে বলে তারা জানান। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা একেএম সরোয়ার জাহান, এই শিল্পটি বাঁচিয়ে রাখতে সরকারিভাবে নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় মৃিশল্পীদের বিভিন্ন প্রণোদনাও দেওয়া হচ্ছে।

সর্বশেষ খবর