বুধবার, ২৯ মার্চ, ২০১৭ ০০:০০ টা
পজেটিভ বাংলাদেশ

সৎ মানুষ গড়তে সততা স্টোর

দীপংকর ভট্টাচার্য লিটন, শ্রীমঙ্গল

সৎ মানুষ গড়তে সততা স্টোর

শিশুরাই আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। এরাই একদিন দেশকে এগিয়ে নেবে। আগামীর বাংলাদেশকে দুর্নীতিমুক্ত রাখতে তাই এদেরকে সৎ মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। দেশের সব জেলার একটি উপজেলায় একটি বালিকা এবং একটি বালক বিদ্যালয়ে সততা স্টোর খোলার মধ্যদিয়ে এ উদ্যোগের বাস্তবায়ন শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

কর্মউদ্যোগের অংশ হিসেবে গত ফেব্রুয়ারি মাসে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার বিটিআরআই উচ্চবিদ্যালয় ও সাতগাঁও উচ্চবিদ্যালয়ে এই সততা স্টোর চালু করা হয়েছে। বিদ্যালয়েরই একটি কক্ষের নাম দেওয়া হয়েছে সততা স্টোর। এই স্টোরে প্রবেশের সময়ই ছাত্র-ছাত্রীরা টেবিলে রাখা রেজিস্ট্রারে নিজের নাম, শ্রেণি ও রোল লিখে রাখছে। এ স্টোরে স্তরে স্তরে সাজানো হয়েছে খাতা, কলম, পেনসিল, রাবার, স্কেল, জ্যামিতি বক্স, রং পেনসিল, চিপস, বিস্কুট। দেওয়া আছে প্রতিটি পণ্যের মূল্য তালিকা। তালিকা দেখে শিশুরা নিজেরাই নিজেদের পণ্য কিনে নিচ্ছে। এই সঙ্গে টেবিলে রাখা তালাবদ্ধ ক্যাশ বাক্সে ফেলে দিচ্ছে পণ্যের মূল্য। তাছাড়া পণ্যমূল্যের সঙ্গে যে সব পণ্য তারা ক্রয় করছে— সাদা কাগজে সে সব পণ্যের নাম ও টাকার পরিমাণও লিখে ক্যাশ বাক্সে রাখছে। একাধিক পণ্য হলে হিসাবের জন্য দেওয়া আছে ক্যালকুলেটার। এ ছাড়া সততা স্টোরে একটি প্রি অর্ডার বই দেওয়া হয়েছে, কারণ যদি চাহিদামতো জিনিস পাওয়া না যায়— সে ক্ষেত্রে প্রি অর্ডার বুকে অর্ডার দিতে হবে। দুদক সূত্রে জানা গেছে, তরুণ প্রজন্মের মাঝে সততা ও নিষ্ঠাবোধ সৃষ্টি এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে গণসচেতনতা গড়ার লক্ষ্যে দুদক থেকে একটি নীতিমালা জারি করা হয়েছে। এর মাধ্যমে দেশের প্রতি জেলার যে কোনো একটি উপজেলায় একটি বালিকা বিদ্যালয় এবং একটি বালক বিদ্যালয়ে সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সহযোগিতায় ও উদ্যোগে ‘সততা স্টোর’ স্থাপন, চালু ও ব্যবস্থাপনার বিষয়ে পদ্ধতি ঠিক করে দেওয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সঙ্গে পরামর্শক্রমে সততা স্টোরের প্রাথমিক পুঁজি সংগ্রহ ও বিনিয়োগ করবেন। ওই স্টোরে পণ্য হিসেবে থাকবে খাতা, কলম, পেনসিল, রাবার, স্কেল, জ্যামিতি বক্স, রং পেনসিল, চিপস, বিস্কুট ছাড়াও সততা সংঘের পরিচালনা কমিটির কাছে যে সব পণ্য ছাত্র-ছাত্রীদের আবশ্যক বলে প্রতীয়মান হবে—সেগুলো। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদ এবং সংশ্লিষ্ট মহানগর, জেলা, উপজেলার দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি-সম্পাদক কর্তৃক গঠিত কমিটি এ স্টোর পরিচালনা করবে। আর পণ্যের মূল্য নির্ধারণ পদ্ধতি হবে বাজার মূল্যের সমান। সততা স্টোর মনিটরিংয়ের জন্য উপজেলা পর্যায়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, জেলা ও মহানগরের ক্ষেত্রে জেলা প্রশাসক কর্তৃক নির্ধারিত কোনো কর্মকর্তা, সংশ্লিষ্ট মহানগর, জেলা, উপজেলা দুর্নীতিদমন কমিটির সভাপতি-সম্পাদক বা তার মনোনীত প্রতিনিধি ও সংশ্লিষ্ট স্কুলের প্রধান শিক্ষকের সমন্বয়ে তিন সদস্যের কমিটি থাকবে। এ কমিটি প্রতিমাসে অন্তত একবার বৈঠক করে হিসাব-নিকাশ যাচাই ও ক্রয়যোগ্য সামগ্রীর তালিকা প্রণয়নপূর্বক প্রয়োজনীয় অর্থ স্টোর পরিচালনা কমিটির কাছে প্রদান করবে। সাতগাঁত্ত উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অনুপ দত্ত বলেন, এটি একটি ভালো উদ্যোগ। এভাবে সৎ চর্চার মধ্যদিয়ে শিশুরা আগামী দিনে সৎ মানুষ হিসেবে গড়ে উঠবে। তিনি জানান, প্রতিদিনই তার বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা সততা স্টোর থেকে প্রয়োজনীয় পণ্য কিনছে এবং রক্ষিত বাক্সে দাম রেখে যাচ্ছে। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সিলেট বিভাগীয় পরিচালক শিরীন পারভিন বলেন, ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সৎ চর্চা করানোর জন্য এবং দুর্নীতিবিরোধী মনোভাব তৈরির জন্য এ কর্মউদ্যোগ। এ উদ্যোগের ফলে ছাত্র-ছাত্রীদের মাইন্ড ফ্রেস হয়ে উঠবে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর