বুধবার, ২৯ মার্চ, ২০১৭ ০০:০০ টা

ভুয়া প্রশ্নফাঁসে দুই কলেজ শিক্ষকসহ গ্রেফতার ৯

নিজস্ব প্রতিবেদক

বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিজ্ঞাপন দিয়ে পাবলিক পরীক্ষার ভুয়া প্রশ্নপত্র বিক্রির অভিযোগে দুই কলেজ শিক্ষকসহ নয়জনকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। তারা হলেন, আশুলিয়ার এ এম গাজীরচক উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের অধ্যক্ষ মো. মোজাফফর হোসেন, একই কলেজের শিক্ষক আতিকুল ইসলাম, অফিস সহকারী আবদুল মজিদ ও ছাত্র আরিফ হোসেন আকাশ ওরফে আদু ভাই, রাকিব হোসেন সাইদুর রহমান ও তানভীর হোসেন এবং টঙ্গীর কোনিয়া কোচিং সেন্টারের শিক্ষক হামিদুর রহমান তুহিন ও উত্তরার সৃষ্টি সেন্ট্রাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের গণিতের শিক্ষক জাহাঙ্গীর আলম। সোমবার রাতে রাজধানীর তেজগাঁও সাত রাস্তার মোড় থেকে তাদের আটক করা হয় বলে জানিয়েছেন ডিবির যুগ্ম-কমিশনার আবদুল বাতেন।

গতকাল ঢাকা মহানগর পুলিশের মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে আবদুল বাতেন দাবি করেন, গ্রেফতারকৃতরা সংঘবদ্ধভাবে ভুয়া প্রশ্নপত্র বিক্রির সঙ্গে সম্পৃক্ত। এদের মধ্যে অধ্যক্ষ মোজাফ্ফর হোসেনের মাধ্যমে এরা প্রশ্নপত্র ফাঁস করে প্রতারণামূলক কাজে সম্পৃক্ত ছিল। এরা দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন নামে ফেসবুক আইডি খুলে ভুয়া প্রশ্নপত্র পোস্ট করে ছাত্রছাত্রীদের কাছ থেকে অর্থ আদায় করত।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতদের তথ্যের ভিত্তিতে গোয়েন্দা পুলিশ জানায়, গ্রেফতারকৃতরা দীর্ঘদিন ধরে ইমো, হোয়াটস অ্যাপ এর মাধ্যমে বিভিন্ন পাবলিক পরীক্ষার পূর্বে ভুয়া প্রশ্নপত্র অনলাইনে পোস্ট করে সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের কাছ থেকে অবৈধভাবে অর্থ উপার্জন করত। ব্রিফিংয়ে আবদুল বাতেন বলেন, সাধারণত তিনটি পর্যায়ে প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়। এর মধ্যে প্রথম পর্যায়ে প্রশ্নপত্র প্রণয়ন ও ব্যবস্থাপনা কমিটিতে যারা থাকেন, তাদের কারও মাধ্যমে প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়। দ্বিতীয় পর্যায় হলো মুদ্রণস্থান অর্থাৎ বিজি প্রেস থেকে। আর তৃতীয় পর্যায় হলো, জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে পরীক্ষার কেন্দ্র উপ-কেন্দ্রে প্রশ্নপত্র সরবরাহের সময়ও প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে। আটক নয়জন প্রশ্নপত্র ফাঁসের তৃতীয় পর্যায়ের সঙ্গে জড়িত। প্রশ্নপত্র ফাঁসের দ্বিতীয় চক্রের নেতা শিক্ষক জাহাঙ্গীর। ডিবি কর্মকর্তা দাবি করেন, আটককৃতদের মধ্যে প্রশ্নপত্র ফাঁসের একটি চক্রের নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন অধ্যক্ষ মোজাফ্ফর। তিনি প্রশ্নপত্র পরীক্ষার কেন্দ্রে আনার সময় ছবি তুলতেন। এই ছবি তার ঘনিষ্ঠ শিক্ষক আতিকুলের কাছে পাঠাতেন। এরপর প্রশ্নের সমাধান করে তা একটি বিশেষ ফেসবুক গ্রুপের অ্যাডমিনের কাছে পাঠাতেন আতিকুল। অর্থাৎ তিনি প্রশ্ন ও উত্তর ফেসবুক গ্রুপে দিয়ে দিতেন। প্রায় দুই হাজার সদস্যের এই বিশেষ ফেসবুক গ্রুপের অ্যাডমিনের নাম ‘জি এম সাগর’। প্রশ্নপত্র বিনিময়ের মাধ্যমে ফেসবুক গ্রুপের কাছ থেকে ৫০০ থেকে ৫০০০ টাকা করে আদায় করতেন এই গ্রুপের সদস্যরা। এই অবৈধ কাজের টাকা তারা পুরো চক্রের মধ্যে ভাগ করে নিতেন।

ব্রিফিংয়ে বলা হয়, আটককৃতদের ব্যবহূত ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বিভিন্ন সাইটের অ্যাকাউন্ট থেকে ২০১৭ সালের এসএসসি পরীক্ষার বাংলা দ্বিতীয় পত্র, ইংরেজি প্রথম পত্র, ইংরেজি দ্বিতীয় পত্র, গণিত ও পদার্থ বিজ্ঞানের ভুয়া প্রশ্নপত্র ও প্রশ্ন ফাঁসের গুজবের স্ত্রিনশট এবং নয়টি বিভিন্ন মডেলের মোবাইল সেট জব্দ করা হয়েছে। এ ছাড়াও তাদের কাছে ২০১৬ সালের জেএসসি পরীক্ষার বাংলা দ্বিতীয় পত্র, গণিত, ইংরেজি, কৃষি শিক্ষা, চারু ও কারু কলার এবং এইচএসসি পরীক্ষার উচ্চতর গণিত প্রথম পত্র, রসায়ন ও জীববিজ্ঞানের ভুয়া প্রশ্ন পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানায় মামলা হয়েছে।

সর্বশেষ খবর