বৃহস্পতিবার, ৩০ মার্চ, ২০১৭ ০০:০০ টা

চীনা ইকোনমিক ও ইন্ডাস্ট্রিজ জোন বদলে দেবে চট্টগ্রাম

রেজা মুজাম্মেল, আনোয়ারা থেকে ফিরে

চীনা ইকোনমিক ও ইন্ডাস্ট্রিজ জোন বদলে দেবে চট্টগ্রাম

এগিয়ে চলেছে চীনা ইকোনমিক জোনের কাজ —বাংলাদেশ প্রতিদিন

চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলায় নির্মাণাধীন ‘চায়নিজ ইকোনমিক অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল জোন-২’ প্রকল্পের কাজ এগিয়ে চলেছে। প্রকল্পের অভ্যন্তরে তৈরি করা হচ্ছে তিনটি সংযোগ সড়ক ও দুটি কালভার্ট। চার মৌজার পুরো এলাকাজুড়ে দেওয়া হয়েছে সীমানা পিলার। শিগগিরই শুরু করা হবে অবকাঠামো নির্মাণ। বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) ও চায়না হারবার ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি যৌথভাবে দেশের প্রথম জিটুজি পদ্ধতিতে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। এতে বিনিয়োগ করা হবে প্রায় ১৬ হাজার কোটি টাকা। ৩৭১টি শিল্প-কারখানায় কর্মসংস্থানের সুযোগ হবে প্রায় ৫৫ হাজার মানুষের। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে বদলে যাবে চট্টগ্রাম। বেজা সূত্রে জানা যায়, আনোয়ারা উপজেলার বেলচূড়া, হাজীগাঁও, বটতলী ও বৈরাগ এলাকায় ৭৭৪ একর জমির ওপর এই অর্থনৈতিক ও শিল্পাঞ্চল গড়ে তোলা হচ্ছে। এ প্রকল্পের কাছেই আছে কোরিয়ান ইপিজেড। শুরু হয়েছে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল নির্মাণ।

গতকাল সরেজমিন প্রকল্প এলাকা ঘুরে দেখা যায়, দীর্ঘ এলাকার অভ্যন্তরে যাতায়াতের জন্য বৈরাগ-মোহাম্মদপুর এবং কালাবিবি দীঘিপাড়-ঝিউরি এলাকায় দুটি বড় সড়কে মাটি ভরাটের কাজ প্রায় শেষ। নির্মাণ করা হচ্ছে ঝিউরি ও বৈরাগ বিলে দুটি কালভার্ট। পুরো এলাকায় দেওয়া হয়েছে ৩০০ সীমানা পিলার। সড়কে মাটি ভরাট ও কালভার্ট নির্মাণ করছেন শ্রমিকরা। সীমানা পিলার কাজের ঠিকাদার আনোয়ার হোসেন বলেন, চার মৌজায় সর্বমোট ৩০০টি সীমানা পিলার স্থাপন ও কাঁটাতার দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া এখন প্রকল্পের ভিতর যাতায়াতের জন্য দুটি সড়ক ও দুটি কালভার্ট নির্মাণ করা হচ্ছে।

বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান পবন চৌধুরী বলেন, ‘প্রকল্পটি নিয়ে আমরা দেশে বড় আকারের কর্মসংস্থান তৈরির আশার আলো দেখছি। ৩৭১টি শিল্প-কারখানায় অন্তত ৫৫ হাজার মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ হবে। ইতিমধ্যে প্রকল্পের ভূমি অধিগ্রহণ-সংক্রান্ত সব কাজ শেষ হয়েছে।’ চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মো. সামসুল আরেফিন বলেন, ‘ভূমি অধিগ্রহণ ও সড়ক-কালভার্ট নির্মাণ প্রায় শেষ পর্যায়ে। এরপর বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান নিজ নিজ প্রয়োজন ও শিল্পের ধরন অনুযায়ী অবকাঠামো নির্মাণ করবে। এ ব্যাপারে সরকারের পক্ষ থেকে আমরা প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছি।’ আনোয়ারা উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা গৌতম বাড়ৈ বলেন, আনোয়ারা শিল্প জোনের কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। সড়ক নির্মাণ ও কালভার্ট তৈরির কাজ প্রায় শেষ। শিগগিরই শিল্পাঞ্চলের অবকাঠামো নির্মাণ শুরু হবে। প্রকল্প পরিদর্শন ও কাজের অগ্রগতি দেখতে বেজার একটি টিম আগামীকাল চট্টগ্রামে আসবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে এই পুরো অঞ্চলই আলোকিত হয়ে যাবে।

বেজা সূত্রে জানা যায়, আনোয়ারার এ শিল্পাঞ্চলে শতভাগ বিনিয়োগ করবে চীনা প্রতিষ্ঠান। তবে প্রকল্পে সরকারের ৩০ শতাংশ আর চীনা বিনিয়োগকারীদের ৭০ শতাংশ অংশীদারি থাকবে। প্রতিষ্ঠা করা হবে ৩৭১টি শিল্প-কারখানা। এর মধ্যে ২৫০টিই জাহাজ নির্মাণ শিল্পের জন্য বরাদ্দ থাকবে। অবকাঠামো উন্নয়নসহ প্রথম পর্যায়ের কাজের জন্য সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৪২০ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। এখানে গড়ে তোলা হবে তৈরি পোশাক শিল্প, রাসায়নিক, ফার্মাসিউটিক্যালস, টেলিযোগাযোগ, কৃষিনির্ভর শিল্প-কারখানা, যন্ত্রপাতি, ইলেকট্রনিক পণ্য টেলিভিশন-মনিটর, চিকিৎসা-অপারেশন যন্ত্র, প্লাস্টিক, আইটি ও আইটি সম্পর্কিত শিল্প-কারখানা। ২০১৭ থেকে শুরু হয়ে ২০২০ সালে প্রকল্পে কাজ শেষ হওয়ার কথা। অন্যদিকে প্রস্তাবিত অর্থনৈতিক অঞ্চলটি চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৩৯ কিলোমিটার, চট্টগ্রাম শহর থেকে ২৮ কিলোমিটার এবং শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ৪৬ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত। ফলে জাহাজ নির্মাণ শিল্প, ইলেকট্রনিক পণ্য ও সিমেন্ট শিল্পকে গুরুত্ব দিয়ে এই বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলা হবে।

চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, আনোয়ারার চার মৌজায় মোট ৭৭৪ একর জায়গায় চীনা অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করা হবে। এর মধ্যে ২৯০ দশমিক ৮৭৫ একর সরকারি খাসজমি প্রতি মৌজা এক লাখ এক টাকা প্রতীকী মূল্যে বেজার অনুকূলে বন্দোবস্ত দেওয়া হয়েছে। এগুলো হলো উপজেলার বেলচূড়া মৌজায় ৫ দশমিক ৯১ একর, হাজীগাঁও মৌজায় ৩৮ দশমিক ১৬ একর, বটতলী মৌজায় ১০০ দশমিক ৮০ একর ও বৈরাগ মৌজায় ১৪৬ একর। এসব ভূমির মৌজা মূল্য ৩০৮ কোটি ৪৩ লাখ ৭২ হাজার ৫৯৪ টাকা।

অন্যদিকে এ প্রকল্পের আরও ৪৮৪ একর জমি অধিগ্রহণের কাজ প্রায় শেষ। অধিগ্রহণের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয় ৪২০ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। ইতিমধ্যে ৬৫ জন ভূমিমালিককে ১৫ কোটি টাকার চেক হস্তান্তর করা হয়েছে। প্রসঙ্গত, ২০১৫ সালের জুনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চীন সফরের সময় সে দেশের প্রধানমন্ত্রী চট্টগ্রামে এই বিশেষ অর্থনৈতিক ও শিল্পাঞ্চল স্থাপনের প্রস্তাব দেন। পরে এ নিয়ে বেজা ও চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মধ্যে সমঝোতা স্মারক সই হয়। সমঝোতা স্মারক অনুযায়ী, বাংলাদেশ সরকার দীর্ঘমেয়াদি বন্দোবস্তের ভিত্তিতে জমি দেবে এবং চীন সরকারের মনোনীত প্রতিষ্ঠান এ জমিতে অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলবে। প্রকল্পে বরাদ্দের ৯২ শতাংশ অর্থ ব্যয় করা হবে ভূমি অধিগ্রহণে। অর্থের জোগান দেওয়া হবে সরকারি তহবিল থেকে।

সর্বশেষ খবর