শুক্রবার, ৩১ মার্চ, ২০১৭ ০০:০০ টা

গণপরিবহনে নারী হয়রানি বাড়ছে

পুরুষ যাত্রী থেকে শুরু করে বাসের হেলপার-কন্ডাক্টর ‘সুযোগ’ নেয় সবাই-ই

জয়শ্রী ভাদুড়ী

গণপরিবহনে নারী হয়রানি বাড়ছে

নানা হয়রানি সহ্য করে প্রতিদিন এভাবেই গন্তব্যে পৌঁছতে হয় নারী যাত্রীদের —জয়ীতা রায়

নগর জীবনে নারীরা সবচেয়ে বেশি যৌন হয়রানির শিকার হয় গণপরিবহনের যাত্রী হলে। সকালে কর্মস্থলে যাওয়া এবং বিকালে ফেরার পথে ভিড় থাকলে বেশি ঘটে এসব ঘটনা। পাশের পুরুষ যাত্রী থেকে শুরু করে বাসের হেলপার-কন্ডাক্টর কারও হাত থেকেই নিরাপদ নয় নারী।

সম্প্রতি ‘ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ’ সংস্থার গবেষণায় দেখা যায়, পাবলিক বাসে চলাচলকারী ৪১ শতাংশ নারী যৌন হয়রানির শিকার হয়। দুর্ভোগ, যৌন হয়রানি ও নির্যাতনের আশঙ্কায় পাবলিক বাস এড়িয়ে চলে ১৩ শতাংশ নারী। এখন মাত্র ২০ দশমিক ৭ শতাংশ নারী পাবলিক বাসে যাতায়াত করে। এ ছাড়া গত বছরের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা        অ্যাকশন এইডের করা ‘চলাচলের স্বাধীনতা : শহরাঞ্চলের গণপরিবহনে নারীদের অভিজ্ঞতা’ শীর্ষক এক গবেষণায় দেখা যায়, প্রায় ৮৪ শতাংশ নারী যাত্রীই গণপরিবহনে কোনো না কোনোভাবে যৌন হয়রানির শিকার হয়। সংস্থাটি বলছে, এই ঘটনা সাধারণত দুই ভাবে ঘটে। কখনো এমন ঘটনা নারীদের শারীরিকভাবে মোকাবিলা করতে হয়, কখনোবা মৌখিকভাবে এমন আচরণের শিকার হতে হয়। ওই গবেষণায় দেখা যায়, হয়রানির শিকার নারীর ৬২ শতাংশই পরবর্তীতে তাদের চলাচল সীমিত করতে বাধ্য হয়েছে। তবে সবচেয়ে হতাশার কথা হচ্ছে, এসব নারীর ৮১ শতাংশই মনে করে, এই ঘটনা পুলিশকে জানানোর কোনো দরকার নেই। কারণ তারা পুলিশকে সহায়তাকারী হিসেবে ভাবতে পারে না। কুড়িল বিশ্বরোড থেকে বিআরটিসির দোতলা বাসে যেতে যেতে কথা হয় উত্তরার শরিফা হায়দারের সঙ্গে। গণপরিবহনে যৌন হয়রানির বিষয়ে নিজের অভিজ্ঞতার কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘গত বছর ফার্মগেট থেকে প্রচণ্ড ভিড় ঠেলে বিআরটিসির বাসে উঠেছিলাম। পা রাখার মতো জায়গা ছিল না। হঠাৎ মনে হলো কেউ আমার শরীরে হাত দেওয়ার চেষ্টা করছে। আমি সতর্কতাবশত মাথার হিজাব থেকে সেফটিপিন খুলে হাতে রাখলাম। এর কিছুক্ষণ পর আমার শরীর স্পর্শ করার সঙ্গে সঙ্গেই আমি ওই ব্যক্তির হাতে পিন ফুটিয়ে দিই। ইশ, বলে চিৎকার দিয়ে হাতটা সরিয়ে নেয়। কিন্তু ভিড়ের মধ্যে ওই বিকৃত রুচির মানুষকে খুঁজে পাইনি।’ কথা শেষ হতেই পাশের আরেক যাত্রী বেসরকারি একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নাজনীন নাহার বলেন, ‘আমি প্রথম যৌন হয়রানির শিকার হয়েছিলাম পাবলিক বাসে। তখন ক্লাস এইটে পড়ি। তার পর থেকে আমার মধ্যে সব সময় ভয় কাজ করত। বেশ কয়েক বছর আমি চেষ্টা করেছি কখনো বাসে না উঠতে। পরবর্তীতে সমস্যা আরও বাড়তে থাকলে আমি মনোরোগ চিকিৎসকের শরণাপন্ন হই। এখনো আমি প্রচণ্ড প্রয়োজন ছাড়া পাবলিক বাসে উঠি না।’ নারীদের এই ভোগান্তি কমাতে সংরক্ষিত আসনে পুুরুষ যাত্রী বসলে জেল-জরিমানার বিধান রেখে আইন পাস করেছে সরকার। কিন্তু নারীরা কীভাবে এ বিষয়ে অভিযোগ করবেন— এখনো জানা যায়নি বিস্তারিত। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী অ্যাডভোকেট এলিনা খান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘শুধু আইন করলে হবে না এর বাস্তবায়নে জনসচেতনতা তৈরি করতে হবে এবং দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টাতে হবে। নারীদের যৌন হয়রানি প্রতিরোধে বা সংরক্ষিত আসনের বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে বাস স্টপেজগুলোয় ভ্রাম্যমাণ আদালতের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। আবার প্রতিটি গাড়িতে নির্দিষ্ট একটি মোবাইল নম্বর দেওয়া যেতে পারে। এর ফলে যে কোনো জায়গা থেকেই নারীরা এ ধরনের পরিস্থিতিতে পড়লে পুলিশকে জানাতে পারবেন এবং দায়িত্বরত ট্রাফিক সার্জেন্ট সেই গাড়ি চিহ্নিত করতে পারবেন।’

সর্বশেষ খবর