শুক্রবার, ৩১ মার্চ, ২০১৭ ০০:০০ টা

ফুলের রাজ্যে সবই সুন্দর

মোস্তফা মতিহার

ফুলের রাজ্যে সবই সুন্দর

পবিত্রতা আর ভালোবাসার প্রতীক ফুল। প্রিয় মানুষকে উপহার দিতেও ফুলই সেরা। শুভেচ্ছা জ্ঞাপন, জন্মদিন, একুশে ফেব্রুয়ারি, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, ভালোবাসা দিবস, বসন্ত দিবস, গায়ে হলুদ, বিয়েসহ নানা আচার ও দৈনন্দিন জীবনের যে কোনো উপলক্ষ ফুল ছাড়া যেন বেমানান। মূল্যবান অনেক সামগ্রী থাকার পর ফুল না থাকলেও মনে হয় সবই আছে তবু যেন কিছু নেই। নেতার চরিত্রের বর্ণনা দিতে, নারীর সৌন্দর্য-সুষমার বৈশিষ্ট্য তুলে ধরতে, বিয়ের প্রথম রাতটাকে স্মরণীয় করে রাখতে ফুলের বিকল্প আর কী হতে পারে? কুঁড়েঘর থেকে শুরু করে প্রাসাদ— পুষ্প সর্বত্রই সমানভাবে সমাদৃত। যার কারণে কবিও তার কবিতায় বলেছিলেন, ‘জোটে যদি মোটে একটি পয়সা, খাবার কিনিও ক্ষুধার লাগি, জোটে যদি দুটি পয়সা ফুল কিনে নিও হে অনুরাগী’। দ্রোহ, প্রেম, চেতনার কবি নজরুলও প্রিয়াকে অভিবাদন জানাতে গানে গানে বলেছিলেন ‘মোর প্রিয়া হবে এসো রানী, দেবো খোঁপায় তারার ফুল’। ফুলের মতো সুন্দর, ফুলের মতো চরিত্র— ফুল নিয়ে ইত্যাদি কথা প্রচলিত আছে। ‘ফুলকে যে ভালোবাসে সে কখনো মানুষ খুন করতে পারে না’ এমন কথা সমাজ ও রাষ্ট্রের সর্বত্রই শোনা যায়। সৌন্দর্যচর্চার পাশাপাশি ফুলকে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির উপকরণ হিসেবে তুলে ধরার জন্য ও ফুলের সৌন্দর্য জনসাধারণের মাঝে ব্যাপকভাবে তুলে ধরার লক্ষ্যে বাংলা একাডেমিতে দ্বিতীয়বারের মতো শুরু হলো তিন দিনের ফুল উৎসব। কিছু দিন আগেও নতুন বইয়ের গন্ধে যে বাংলা একাডেমি মুখরিত ছিল গতকাল সেই স্থান ফুলের সৌরভে সুবাসিত ছিল। ফুলের গন্ধে আর অপরূপ সৌন্দর্যে বাংলা একাডেমিতে আগত ফুলপ্রেমীরা যেন কিছু সময়ের জন্য হারিয়ে যান সৌন্দর্য-সুষমার এক অন্য রাজ্যে। ফুলের রাজ্যে পুষ্পপ্রেমীদের স্বাগত জানানের জন্য ফুল ব্যবসায়ীদের প্রাণান্ত চেষ্টা পরিলক্ষিত ছিল সমগ্র একাডেমি প্রাঙ্গণে। ইনোভেশন অ্যান্ড ইনকিউভেশন সেন্টার ফর এন্টারপ্রাইজেস (আইআইসিই) ও বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার সোসাইটির উদ্যোগে এই উৎসবের সহযোগিতায় রয়েছে ইউএসএআইডি, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ ফটোগ্রাফিক সোসাইটি ও দেশিফুল ডটকম। প্রধান অতিথি থেকে সকালে একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে তিন দিনের এই ফুল ফেস্টের উদ্বোধন করেন কৃষি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ মকবুল হোসেন। বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার সোসাইটির সভাপতি আবদুর রহিমের সভাপতিত্বে এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ, কৃষি মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব মো. আনোয়ার ফারুক, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের সাবেক মহাপরিচালক হামিদুর রহমান। আয়োজকদের পক্ষে বক্তব্য দেন আইআইসিইর ব্যবস্থাপনা পরিচালক রিয়াজউদ্দিন মোশাররফ। শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন সোসাইটির সহসভাপতি নাসের গনি চৌধুরী। দ্বিতীয় পর্বে সন্ধ্যায় একই মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয় ফ্যাশন শো ও সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। যশোর ফুল স্টোরের স্বত্বাধিকারী রাসেল হোসেন জানান, সৌন্দর্যচর্চার নির্দিষ্ট সীমানা ছাড়িয়ে ফুল এখন চাষ হচ্ছে বাণিজ্যিকভাবে। এই প্রক্রিয়ায় কর্মসংস্থানের সঙ্গে বেড়েছে অর্থ উপার্জনব্যবস্থা। এ লক্ষ্যেই ফুল উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে।

ফুল চাষের জন্য প্রসিদ্ধ যশোরের ঝিকরগাছার ফুল চাষি মঞ্জু সরকার জানান, যশোরের বিশাল এলাকাজুড়ে রয়েছে তার ফুলের বাগান। তাতে প্রায় ৮০ জন শ্রমিক কাজ করেন। তিনি বলেন, ‘১৫ বছর আগে আমি ফুলের চাষ শুরু করি। বর্তমানে ফুল চাষই আমার পেশা, নেশা। দেশের নানা জায়গায় আমরা ফুল বিক্রি করি। বিদেশেও রপ্তানি করি।’

প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে এই ফুলের রাজ্য। ১ এপ্রিল শেষ হবে তিন দিনের এই উৎসব।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর