শনিবার, ১ এপ্রিল, ২০১৭ ০০:০০ টা

ঝুঁকিতে শতাধিক হাসপাতাল

মাহবুব মমতাজী

ঝুঁকিতে রয়েছে রাজধানীর শতাধিক হাসপাতাল। তবে সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালগুলোর মধ্যে ভূমিকম্প আর অগ্নিকাণ্ডের ঝুঁকিতে রয়েছে—এমন সংখ্যা চারশ’র বেশি। এসব হাসপাতালে অগ্নিকাণ্ড মোকাবিলার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেই।

প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, কিছু হাসপাতালের আধুনিক অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্রপাতি থাকলেও তা ব্যবহার করতে জানেন না সংশ্লিষ্ট কর্মীরা। এসব হাসপাতালে ভূমিকম্প কিংবা বড় ধরনের অগ্নিকাণ্ড হলে ব্যাপক প্রাণহানির আশঙ্কা রয়েছে বলে জানিয়েছেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা। তারা এজন্য সংশ্লিষ্টদের দ্রুত সমস্যা সমাধানের জন্য সতর্ক করেছেন। ফায়ার সার্ভিস সূত্র জানায়, চলতি বছরের মার্চের প্রথম সপ্তাহে রাজধানীর মোট ৪৩৩টি হাসপাতাল পরিদর্শন শেষে ঝুঁকিপূর্ণের একটি প্রতিবেদন তৈরি করেছেন কর্মকর্তারা। এতে ভূমিকম্প ও অগ্নিকাণ্ডে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করে ৪২২টি হাসপাতালের তালিকা দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ২৪৮টি হাসপাতালকে ঝুঁকিপূর্ণ এবং ১৭৪টিকে অধিক ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। আর সার্বিক বিবেচনায় সন্তোষজনক অবস্থানে রয়েছে মাত্র ১১টি হাসপাতাল।

ঝুঁকিপূর্ণ তালিকায় থাকা উল্লেখযোগ্য হাসপাতালগুলো হলো—ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল, স্কয়ার হসপিটাল লিমিটেড, বিআরবি হাসপাতাল লিমিটেড, জাপান বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতাল, ল্যাবএইড স্পেশালাইজড হসপিটাল লিমিটেড, ল্যাবএইড কার্ডিওলজি হসপিটাল লিমিটেড, ইবনে সিনা হাসপাতাল, পপুলার মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টার লিমিটেড, ঢাকা শিশু হাসপাতাল, ট্রমা সেন্টার অর্থোপেডিক হসপিটাল, ইস্পাহানী ইসলামিয়া চক্ষু হাসপাতাল, বারডেম হাসপাতাল, হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট হাসপাতাল, মানোয়ারা হাসপাতাল (প্রা.) লিমিটেড, আদ-দ্বীন হাসপাতাল, ইসলামী ব্যাংক হাসপাতাল, খিদমাহ হাসপাতাল, খিলগাঁও গ্রিন ভিউ ক্লিনিক, ধানমণ্ডি জেডএইচ শিকদার মহিলা মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতাল, হাজারীবাগ ইবনে সিনা ডায়াগনস্টিক অ্যান্ড কনসালটেশন সেন্টার, লালবাগ সেন্ট্রাল হসপিটাল লিমিটেড, গ্রিন লাইফ হসপিটাল লিমিটেড, কমফোর্ট নার্সিং হোম, সিটি হসপিটাল লিমিটেড, বাংলাদেশ আই হসপিটাল, বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, জাতীয় হৃদরোধ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, আগারগাঁও ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরো সায়েন্স হাসপাতাল, আগারগাঁও জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন কেন্দ্র, শেরেবাংলা নগর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, কেয়ার মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বাংলাদেশ ট্রমা স্পেশালাইজড হাসপাতাল, আহ্ছানিয়া মিশন ক্যান্সার অ্যান্ড জেনারেল হাসপাতাল, আল-রাজী হাসপাতাল, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতাল, সালাউদ্দিন স্পেশালাইজড হাসপাতাল লি., মাতৃসদন ও শিশু স্বাস্থ্য প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান, পদ্মা জেনারেল হাসপাতাল, মাতুয়াইল মেডিকেয়ার জেনারেল হাসপাতাল, হিকমা স্পেশালাইজড চক্ষু হাসপাতাল, ধানমণ্ডি হাসপাতাল (প্রা.) লিমিটেড, গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতাল, ধানমণ্ডি ক্লিনিক (প্রা.) লিমিটেড এবং আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতাল লিমিটেড।

বেশি ঝুঁকিপূর্ণের মধ্যে রয়েছে শমরিতা হাসপাতাল, এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, জাতীয় বক্ষব্যাধি হাসপাতাল, জাতীয় ক্যান্সার ইনস্টিটিউট হাসপাতাল, পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টার-২, ক্রিসেন্ট গ্যাস্ট্রোলিভার অ্যান্ড জেনারেল হাসপাতাল, ধানমণ্ডি জেনারেল অ্যান্ড কিডনি হাসপাতাল, ধানমণ্ডি কিডনি ফাউন্ডেশন হাসপাতাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউট, বিএসওএইচ হাসপাতাল, প্যানোরমা হসপিটাল লিমিটেড, ধানমণ্ডি মেডি এইড জেনারেল হাসপাতাল লিমিটেড এবং মেরিস্টোপ বাংলাদেশ। জানা গেছে, ৩০টির বেশি শর্ত পূরণ সাপেক্ষে হাসপাতাল ভবন নির্মাণের কথা থাকলেও এই হাসপাতালগুলো তা মানছে না। শর্তগুলো হলো আশপাশের ফ্যাক্টরির অবস্থান নির্ধারণ, ব্যবহৃত ফ্লোরের আয়তন, ভবনের সাধারণ সিঁড়ির প্রশস্ততা, অগ্নিনির্বাপণ কাজে সিঁড়ির ব্যবস্থা, জরুরি প্রস্থানের সিঁড়ির সংখ্যা ও প্রশস্ততা নির্ধারণ, প্রতি তলায় সেফটি লবির ব্যবস্থা রাখা, জরুরি বহির্গমন পথ মার্কিং ও ভবনের ছাদ টিনশেড কিনা তা যাচাই করা, ছাদে ওঠার সিঁড়ির সংখ্যা ও প্রশস্ততার দিকে নজর রাখা, ছাদের দরজা খোলা ও ভবনের বর্হিগমন দরজার ব্যবস্থা রাখা, আন্ডারগ্রাউন্ড ওয়াটার রিজার্ভ ট্যাংক (৫০ হাজার গ্যালন) রাখা, ১০ হাজার গ্যালনের ওভারহেড ওয়াটার ট্যাংক থাকা, বৈদ্যুতিক তারের কনসিল ওয়্যারিং থাকা, বৈদ্যুতিক মেইন সুইচ বক্স, সুইচ বক্স, জংশন বক্স এবং ডিমান্ড বক্স নিরাপদ অবস্থানে রাখা। প্রতি ফ্লোরে এবং কক্ষে সার্কিট ব্রেকার রাখা, কর্মচারীদের অগ্নিনির্বাপণ ও উদ্ধারে প্রশিক্ষণ দেওয়া এবং সিঁড়িসহ সব পথ বাধামুক্ত রাখা। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদফতরের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আলী আহমেদ খান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আমরা ঝুঁকিপূর্ণ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়ে সতর্ক করেছি। এরপরও কিছুদিনের মধ্যে আমাদের একটি টিম সেসব হাসপাতালে গিয়ে মনিটর করবে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর