শনিবার, ১ এপ্রিল, ২০১৭ ০০:০০ টা

শিক্ষায় হার বাড়লেও পেশায় পিছিয়ে

জিন্নাতুন নূর

শিক্ষায় হার বাড়লেও পেশায় পিছিয়ে

আজ থেকে দুই দশক আগেও যেখানে শতকরা হিসাবে পাঁচজন নারী শিক্ষার্থী স্থাপত্যবিদ্যায় শিক্ষা নিতেন এখন এই সংখ্যা ৬০ জনে দাঁড়িয়েছে। অর্থাৎ স্থাপত্য বিষয়ে আগের চেয়ে নারীদের শিক্ষা গ্রহণের আগ্রহ তুলনামূলক বৃদ্ধি পেয়েছে। স্থাপত্যবিদ্যার শিক্ষকরা জানান, স্থাপত্যবিদ্যায় নারীদের শিক্ষার হার দুই দশকে পাঁচগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে শিক্ষা ক্ষেত্রে অংশগ্রহণ বৃদ্ধি পেলেও স্থপতি হিসেবে পেশাগত জীবনে অনেক নারী ঝরে পড়ছেন। বিশেষজ্ঞরা নারীদের এ পেশায় ধরে রাখতে নারীবান্ধব কর্মপরিবেশ ও তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন।

বর্তমানে সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে সারা দেশের ২১টি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্থাপত্যবিদ্যায় ডিগ্রি দেওয়া হচ্ছে। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে মেধাবী ছাত্রীদের অংশগ্রহণের হার ছাত্রদের চেয়ে বেশি হলেও পেশাগত ক্ষেত্রে এই ছাত্রীদের অনেকেই টিকতে পারছেন না। সূত্র জানায়, বর্তমানে রাজধানীতে নারী স্থপতিদের মধ্যে মাত্র ১৫ জনের কিছু বেশি ব্যক্তিগতভাবে বড় ফার্ম দিয়ে সম্মানজনক পর্যায়ে কাজ করছেন। আর ৩০ থেকে ৩৫ জন ছোট ফার্ম দিয়ে স্বাধীনভাবে কাজ করছেন।

কয়েকজন স্থপতিবিদ ও স্থাপত্য বিভাগের শিক্ষক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, নারীদের অনেকেরই মাঠ পর্যায়ে কাজ করতে গিয়ে স্বপ্নভঙ্গ হয়। বিশেষ করে নারীরা তাদের নিজস্ব ফার্ম দেওয়ার জন্য যে ধরনের সহযোগিতা প্রয়োজন তা সংশ্লিষ্টদের কাজ থেকে পাচ্ছেন না। মেধাবী ছাত্রীদের অনেকে শিক্ষকতা পেশায় প্রবেশ করেন আর বাকিরা কারও অধীনে কোনো বেসরকারি ফার্মে চাকরি করেন। যে বয়সে একটি পুরুষ স্থপতি নিজস্ব ফার্ম চালু করেন একই বয়সে পর্যাপ্ত সহযোগিতা না পাওয়ায় নারীরা পিছিয়ে পড়ছেন। এ ছাড়া যে নারীরা বেসরকারি ফার্মগুলোতে চাকরি করেন তাদের অনেকের সঙ্গে তাদের প্রতিষ্ঠানের প্রধান ব্যক্তি একজন স্থপতির চেয়ে অফিস সেক্রেটারির মতো আচরণ করেন। নারী স্থপতিদের তাদের অফিস থেকে একটি ভবনের নকশা তৈরির বা মাঠ পর্যায়ের কাজে পাঠানোর বদলে ক্লায়েন্টের সঙ্গে মাঠ পরিদর্শনের জন্য পাঠানো হয়। যা তাদের জন্য অসম্মানজনক। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) স্থাপত্য বিভাগের অধ্যাপক ড. ফরিদা নিলুফার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, মেয়েরা স্থাপত্যবিদ্যায় বেশি পড়লেও পেশাগত ক্ষেত্রে মেয়েদের অনেকে ঝরে পড়ছে। এক যুগের বেশি সময় ধরে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো নারী স্থপতিদের পেশাগতভাবে সেভাবে স্বীকৃতি বা মর্যাদা দিচ্ছে না। মেয়েরা যাতে স্বাচ্ছন্দ্যে এই পেশায় কাজ চালিয়ে যেতে পারে এ জন্য নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে কর্মক্ষেত্রে একজন স্থপতির দায়িত্ব কী হবে সে বিষয়ে যথাযথ নির্দেশনা থাকা উচিত এবং তা মেনে চলা উচিত। এ বিষয়ে নারীদের মধ্যেও সচেতনতা তৈরি করতে হবে। 

কয়েকজন নারী স্থপতি এই প্রতিবেদককে জানান, নারী স্থপতিরা তাদের কাজের প্রতি বেশ দায়িত্বশীল হন। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে তারা নিয়মিত এই পেশায় থাকতে পারছেন না। পরিবারের সঙ্গে তাল মিলাতে গিয়ে অনেকেই এই পেশা থেকে ঝরে পড়ছেন। এ ছাড়া শিশুদিবাযত্ন কেন্দ্রের সুবিধা না থাকায় অনেকেই কাজ করতে গিয়ে সন্তানের জন্য দুশ্চিন্তায় থাকেন। আবার নারীরা মাঠ পর্যায়ের কাজ করতে পারবেন না এমন ধারণা থেকে অনেকে নারীদের নিয়োগ দিতে চান না। তবে দেশের নারী স্থপতিদের মধ্যে অনেকেই স্ব স্ব ক্ষেত্রে দ্যুতি ছড়াচ্ছেন। তাদেরই একজন মেরিনা তাবাসসুম। দৃষ্টিনন্দন স্থাপনার মাধ্যমে তিনি বিদেশে বাংলাদেশের নাম উজ্জ্বল করেছেন। নিজের সৃষ্টিশীলতার জন্য বাংলাদেশের এই স্থপতি আন্তর্জাতিক পুরস্কারও পেয়েছেন। রাজধানী ঢাকার দক্ষিণখান থানার পরিবেশবান্ধব একটি মসজিদ তৈরির জন্য তিনি আগা খান স্থাপত্য পুরস্কার পেয়েছেন। দেশে প্রথমবারের মতো নারী হিসেবে বায়তুর রউফ নামক একটি মসজিদের নকশা তৈরি করার কৃতিত্ব অর্জন করেন তিনি। মেরিনা জানান, তিনি এমনভাবে এ মসজিদটি তৈরি করেছেন যাতে করে এর মধ্যে দিয়ে সহজেই প্রাকৃতিক আলো-বাতাস চলাচল করতে পারে। ফলে মুসল্লিদের কৃত্রিম আলো বাতাসের প্রয়োজন কম হবে। একই সঙ্গে এর মাধ্যমে বিদ্যুতের অপচয়ও রোধ করা যাবে। তবে মেরিনা জানান, নারী বলে এই মসজিদের নির্মাণকাজে তার সমস্যা হয়নি। তিনি দেশীয় উপকরণ ও পদ্ধতি ব্যবহার করেই এই মসজিদটি তৈরি করেন। মেরিনার নকশায় তৈরিকৃত মসজিদটিতে মিনার বা গম্বুজ নেই। আটটি পিলারের ওপর এটি তৈরি করা হয়েছে। মেরিনা ১৯৯৫ সালে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক পাস করেন।

সর্বশেষ খবর