রবিবার, ২ এপ্রিল, ২০১৭ ০০:০০ টা
ব্যাংকিং ভাবনা

বিশেষ সুবিধা দেওয়া উচিত প্রবাসীদের

———— — সৈয়দ মাহবুবুর রহমান

আলী রিয়াজ

বিশেষ সুবিধা দেওয়া উচিত প্রবাসীদের

ব্যাংকিং লেনদেনে প্রযুক্তি নতুন নতুন পদ্ধতি নিয়ে এসেছে। মানুষ লেনদেনের ক্ষেত্রে সহজ ও সুবিধাজনক পদ্ধতি চায়। বিদেশে থাকা প্রবাসীরা দেশে টাকা পাঠাতে প্রযুক্তি ব্যবহার করে। মোবাইল ব্যাংকিং তাদের লেনদেনে এক ধরনের গতি এনেছে। এটা এখন হুন্ডির মাধ্যম হিসেবেও ব্যবহার হচ্ছে। প্রবাসীরা হুন্ডির মাধ্যমে অর্থ পাঠাচ্ছে এটা বন্ধ করতে হলে তাদের জন্য বিশেষ সুবিধা দেওয়া উচিত। যারা বিদেশে শ্রম দেয় তাদের পাঠানো বৈদেশিক মুদ্রার দাম বেশি দেওয়া যেতে পারে। তাদের আগ্রহী করে তুলতে হবে ব্যাংকিং মাধ্যমে টাকা পাঠাতে। রেমিট্যান্স কমছে কেন এজন্য পলিসি লেভেলে ভূমিকা নিতে হবে। বিশিষ্ট ব্যাংকার ঢাকা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে মুখোমুখি হয়ে দেশের ব্যাংক, অর্থনীতি, প্রবৃদ্ধি নানা বিষয় নিয়ে কথা বলেন। সাম্প্রতিক সময়ে রেমিট্যান্স প্রবৃদ্ধি কমে যাওয়ার কারণ এ বিষয়ে কি করা উচিত সে সম্পর্কে নিজের অভিমত তুলে ধরেন।  প্রায় ত্রিশ বছরের ব্যাংকিং ক্যারিয়ারে মাহবুবুর রহমান ব্র্যাক ব্যাংকের এমডি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। এ ছাড়া তিনি প্রাইম ব্যাংক, সিটিব্যাংক এনএ, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক, এ এন জেড গ্রিন্ডলেজ ব্যাংক, আইডিএলসি ফাইন্যান্স প্রভৃতি প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। সৌদি বাংলাদেশ এগ্রিকালচারাল অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইনভেস্টমেন্ট কোম্পানিতে (সাবিনকো) যোগদানের মাধ্যমে কর্মজীবন শুরু করেন এই ব্যাংকার। বাংলাদেশে মোবাইল ব্যাংকিং সেবা ‘বিকাশ’ চালুর ক্ষেত্রে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।

মাহবুবুর রহমান বলেন, দেশের ব্যাংকিং ব্যবস্থা অনেক শক্তিশালী। রাজনৈতিক, সামাজিক বিভিন্ন সমস্যা কাটিয়ে সব ব্যাংক ভালো মুনাফা করেছে। যখন দেশের পরিস্থিতি কিছুটা অস্থিতিশীল ছিল সে সময়েও ব্যাংকগুলো মুনাফা করেছে। এতেই বোঝা যায় ব্যাংকগুলো অনেক পরিপক্ব। তবে এই পরিপক্বতার মাঝেও নানা সংকটও আছে। আর্থিক কাঠামো সময় সময় ঝুঁকি নিয়ে কাজ করে। আমি আমার কাজ করে যাব ইতিবাচকভাবে।

বিশিষ্ট এই ব্যাংকার বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে রেমিট্যান্স কমছে। মোবাইল ব্যাংকিংয়ের কারণেই এটা হয়েছে। মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে একজন প্রবাসী শ্রমিক টাকা পাঠালে সে কিছু সুবিধা পায়। যখন তখন টাকা উত্তোলন করতে পারে। এই সুবিধার কারণেই মূলত হুন্ডি বাড়ছে। এখন এটা ব্যাংকিং মাধ্যমে আনতে হলে প্রবাসীদের আলাদা সুবিধা দিতে হবে। যে প্রবাসী শ্রমিকরা বিদেশে যান তারা নানা ধরনের হয়রানির শিকার হন। টাকা পাঠাতেও কিছুটা হয়রানি তাদের হতে হয়। যদি প্রবাসীদের পাঠানো অর্থমূল্য স্বাভাবিকের চেয়ে কিছুটা বেশি হয় তাহলে সবাই আগ্রহী হবে। এ ছাড়াও ব্যাংকগুলোর প্রবাসীদের লেনদেনে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে কাজ করা উচিত। তা হলে রেমিট্যান্সে যে নিম্নগতি সেটা কমবে বলে আমার মনে হয়। তিনি বলেন, ব্যাংকের এখন সবচেয়ে বড় সমস্যা নন পারফরমিং ঋণ। একটি ঋণ ক্লাসিফাইড হয়ে যাওয়া মানে পুরো বিনিয়োগ ঝুঁকিগ্রস্ত হয়ে যায়। এর প্রভাব ব্যাংকের সব বিনিয়োগের ওপর পড়ে। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রভিশন রাখতে হয়। কয়েক দিক থেকে লোকসান দিতে হয়। দেখা যাচ্ছে বর্তমানে ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ অনেক। সব মিলিয়ে এক লাখ কোটি টাকার বেশি হবে। এটা হলো কীভাবে। গত কয়েক বছরের ব্যবধানে খেলাপির পরিমাণ বেড়েছে। বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সঠিক সিদ্ধান্ত মেনে ঋণ না দেওয়ায় খেলাপির পরিমাণ বাড়ছে।

ঢাকা ব্যাংকের এমডি বলেন, খেলাপি বৃদ্ধির আরেকটি বড় কারণ দেশে ব্যাংকের সংখ্যা অনেক বেশি। অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশ যেখানে অর্থনৈতিক সক্ষমতা আমাদের চেয়ে অনেক বেশি সেখানে মাত্র ৪টি ব্যাংক। দক্ষিণ আফ্রিকায় ব্যাংকের সংখ্যা ছয়টি। দুটি দেশের অর্থনীতি আমাদের চেয়ে কয়েকগুণ বড়। কিন্তু বাংলাদেশে অর্থনীতি ছোট হওয়া সত্ত্বেও ব্যাংকের সংখ্যা ৫৭টি। আরও কয়েকটি আসছে। ব্যাংকের সংখ্যা বেশি হওয়ায় সবাই একই খাতে বিনিয়োগ করছে। কিন্তু খাত সীমিত। যেসব ব্যাংক বিশেষায়িত তারাও মূলধারার ব্যাংকিং করছে। উদ্যোক্তাদের চাহিদা না থাকলেও ঋণ দিচ্ছে। এসব ঋণ খেলাপিতে পরিণত হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, সরকারি পর্যায়ে বড় বড় অবকাঠামো নির্মাণ হচ্ছে। এসব অবকাঠামোতে বিশাল বিনিয়োগ হয়েছে। আর্থিক কর্মকাণ্ডে এক ধরনের গতি এনেছে। কিন্তু এগুলো দীর্ঘমেয়াদে কর্মসংস্থান তৈরি করবে না। শিল্প উৎপাদনে যে ধরনের প্রবৃদ্ধি হতে পারে সেটা এতে হবে না। তাই আমাদের শিল্প উৎপাদনশীল খাতে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। দেখা যাচ্ছে সীমিত কয়েকটি খাতেই বিনিয়োগে আগ্রহ দেখাচ্ছে। এসব খাতের বাইরে যেতে হবে। তিনি বলেন, এত বেশি সংখ্যক ব্যাংক পরিচালনার জন্য যে লোকবল প্রয়োজন সেটা কি আমাদের আছে? ৫৭টি ব্যাংকের জন্য যতজন শাখা ব্যবস্থাপক প্রয়োজন সেটাই নেই। ফলে কম অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ব্যক্তিদের নিয়োগ দিতে হচ্ছে। যেটা ব্যাংক খাতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। ঢাকা ব্যাংকের এমডি আরও বলেন, ঢাকা ব্যাংক ২১ বছর পার করেছে। এই সময়ে দেশের আর্থিক কাঠামোতে বিশেষ ভূমিকা রেখেছি আমরা। একটি ভালো ব্যাংক হিসেবে আমাদের সুনাম রয়েছে। বিশেষ করে রিটেইল ব্যাংকিংয়ের ক্ষেত্রে ঢাকা ব্যাংক পাইওনিয়ার। আগামীতে আমরা এসএমই খাতে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে কাজ করব। আমাদের বিনিয়োগও ভালো। মোট বিনিয়োগের মাত্র ৫ শতাংশ খেলাপি। এটা অনেক কম। এ ছাড়া সিএসআর খাতে ঢাকা  ব্যাংক বিশেষ অবদান রাখছে।

সর্বশেষ খবর