সোমবার, ৩ এপ্রিল, ২০১৭ ০০:০০ টা

মৌলভীবাজারে আত্মহননকারী জঙ্গির ৬ জনই দিনাজপুরের

বোমা বিস্ফোরণেই ছিন্নভিন্ন হয় বড়হাটের তিন জঙ্গি

দিনাজপুর ও মৌলভীবাজার প্রতিনিধি

মৌলভীবাজারে জঙ্গি আস্তানায় বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আত্মহননকারী জঙ্গিদের মধ্যে ছয়জনই দিনাজপুর ঘোড়াঘাট উপজেলার বাসিন্দা। পরিবারের সদস্যরা এ তথ্য প্রকাশ করেছেন।  সূত্র জানায়, নিহতদের মধ্যে রয়েছেন ঘোড়াঘাট উপজেলার ডাঙ্গা গ্রামের লোকমান আলী ও তার স্ত্রীসহ সন্তানরা। লোকমানের শ্বশুর আবু বকর সিদ্দিক জানান, ২০০২ সালে ঘোড়াঘাট উপজেলার কলাবাড়ী গ্রামে তার মেয়ে শিরিনা আক্তারের সঙ্গে বিয়ে হয় লোকমান আলীর। এরপর তাদের দুই সন্তান জন্মগ্রহণ করার পর মেয়ে জামাই জড়িয়ে পড়ে জঙ্গি সংশ্লিষ্টতায়। পরে লোকমান আলী ঢাকার একটি গার্মেন্টে কাজের কথা বলে নিখোঁজ হয়। প্রায় ৪ বছর ধরে লোকমান, মেয়ে ও নাতনিদের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল না তাদের। সবশেষ কথা হয় গত ২৯ মার্চ মোবাইলে। ঘোড়াঘাট থানার ওসি জানান, কয়েক দিন আগে রাতে একটি অচেনা নম্বর থেকে আবু বকর সিদ্দিকের কাছে  ফোন আসে। তখন তার মেয়ে শিরিনা আক্তারের সঙ্গে কথা হয়। শিরিনা আক্তার জানিয়ে দেয়, ‘আপনারা আমাদের ক্ষমা করবেন। আমাদের সঙ্গে আর কোনো দিন দেখা হবে না।’ জবাবে আবু বকর সিদ্দিক বলেন, ‘তুমি কোথায় আছ, একটু ঠিকানা বল— আমি সেখান থেকেই নিয়ে আসব।’ পরে আবু বকর সিদ্দিক বিভিন্ন মিডিয়ার সংবাদে বুঝতে পারেন আত্মহননকারীরা তার মেয়ে-জামাই ও নাতনিরা। উল্লেখ্য, মৌলভীবাজারের নাসিরপুর গ্রামে জঙ্গি আস্তানায় আত্মহনন করে সাতজন। নিহতদের মধ্যে ছয়জন দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলার ডাঙ্গাপাড়া গ্রামের। এদের মধ্যে একজন লোকমান আলী ও বাকিরা হলেন তার স্ত্রী শিরিনা আক্তার, সন্তান আমেনা খাতুন (১২), সুমাইয়া আক্তার (৯), ফাতেমা (৫) ও মরিয়ম (সাড়ে ৩)।

বোমা বিস্ফোরণেই ছিন্নভিন্ন হয় বড়হাটের তিন জঙ্গি : মৌলভীবাজার পৌর শহরের বড়হাট এলাকার জঙ্গি আস্তানায় অপারেশন ম্যাক্সিমাসের সময় আত্মঘাতী বিস্ফোরণ ঘটিয়ে নিহত তিন জঙ্গির ময়নাতদন্ত গতকাল সম্পন্ন হয়েছে। এ ছাড়া নাসিরপুরের জঙ্গি আস্তানায় বিস্ফোরণের ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে মৌলভীবাজার সদর থানায় একটি মামলা করেছে।

মৌলভীবাজার ২৫০ শয্যা হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. পার্থ সারথি দত্ত কানুনগো জানিয়েছেন, গতকাল দুপুরে তিন সদস্যের মেডিকেল টিম ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করে। এই তিনজনের দেহ ছিন্নভিন্ন হয়ে গিয়েছিল। সুইসাইডাল ভেস্ট বিস্ফোরণ ঘটানোর কারণে তাদের পেট ও কোমরের অংশ ছিল না। শরীরে ছোট ছোট তারের টুকরো পাওয়া গেছে। তিন জঙ্গিরই মৃত্যু হয়েছে সুইসাইডাল ভেস্ট বিস্ফোরণ ঘটানোর কারণে। তাদের দুজন পুরুষ ও একজন মহিলা। পুরুষদের বয়স একজনের ৪০-৪২ বছর, অন্যজনের ৩৬-৩৮ আর মহিলার বয়স ২৮-৩০ বছর। ডিএনএ পরীক্ষার জন্য প্রতিটি মরদেহ থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। মামলা : নাসিরপুরের আস্তানায় বিস্ফোরণের ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে মৌলভীবাজার মডেল থানায় একটি মামলা করেছে। মৌলভীবাজার মডেল থানার এসআই শাহাবউদ্দিন বাদী হয়ে এ মামলা করেন। সন্ধ্যায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত নাসিরপুর ও বড়হাটের আস্তানাটি পুলিশ হেফাজতে ছিল। নিরাপত্তার স্বার্থে আস্তানা দুটির আশপাশের ৩০০ মিটার জায়গাজুড়ে ১৪৪ ধারা বহাল রাখে প্রশাসন। ধূম্রজাল : নাসিরপুরে নিহত এক পুরুষ জঙ্গির পরিচয় নিয়ে ধূম্রজাল সৃষ্টি হয়েছে। এ বিষয়ে পুলিশ সুপার মোহাম্মদ শাহ জালাল বলেন, ‘আমরা এখনো তার পরিচয় নিশ্চিত হতে পারিনি। তবে ধারণা করা হচ্ছে, তার বাড়ি দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলার ডাঙ্গাপাড়ায়। বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার জন্য দিনাজপুর পুলিশ সুপারের সঙ্গে কথা হয়েছে। তিনি তদন্ত করে বিষয়টি দেখছেন।’

সতর্ক পুলিশ : নাসিরপুর ও বড়হাটের দুই জঙ্গি আস্তানায় অভিযান শেষ হলেও যে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে পুলিশ। এ ছাড়াও জেলার প্রতিটি উপজেলায় সতর্ক রয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।

সর্বশেষ খবর