মঙ্গলবার, ৪ এপ্রিল, ২০১৭ ০০:০০ টা

তিস্তা চুক্তির আশা ছাড়ছে না কেউ

তালিকায় না থাকলেও শেষ মুহূর্তে চমকের প্রত্যাশা দুই দেশেই

জুলকার নাইন

তিস্তা চুক্তির আশা ছাড়ছে না কেউ

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আসন্ন নয়াদিল্লি সফরে কমবেশি ৩০টি চুক্তি স্বাক্ষরের বিষয় চূড়ান্ত করেছে বাংলাদেশ ও ভারত। বিশাল এ তালিকায় এখনো স্থান পায়নি বহুল প্রত্যাশিত তিস্তা নদীর পানি বণ্টন চুক্তি। এতদিন ধরে ভারতের সঙ্গে সব দ্বিপক্ষীয় আলোচনায় তিস্তা চুক্তিই যেখানে ছিল বাংলাদেশের প্রথম এজেন্ডা, এবার তাও নেই। কিন্তু তারপরও তিস্তা চুক্তি স্বাক্ষরের আশা ছাড়ছেন না কেউই। এ সফরের প্রস্তুতির সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত কূটনীতিকরাও প্রত্যাশা করছেন শেষ মুহূর্তের নাটকীয়তার।

পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক ‘তিস্তা চুক্তি’ নিয়ে শীর্ষ বৈঠকে কী হয় তা দেখার অপেক্ষায় রয়েছেন বলে জানিয়েছেন। পররাষ্ট্র সচিবের কথায় চমকের আভাস দেখছেন কেউ কেউ। কেবল ঢাকার নয়, নয়াদিল্লির কর্মকর্তারাও আশা করছেন শেষ মুহূর্তের চমকের। ভারতীয় সাংবাদিকরাও দিচ্ছেন চমকের আভাস। গত সপ্তাহে ঢাকা সফর করে যাওয়া ছয় সিনিয়র ভারতীয় সাংবাদিকের দলও চমকের ইঙ্গিত দিয়ে গেছেন। বাংলাদেশ ইস্যুতে ভারত সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকাণ্ড অত্যন্ত কাছ থেকে নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করে থাকেন এ ছয় সাংবাদিক।

তাদের মতে, তালিকায় থাকুক আর নাই থাকুক, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরে নিশ্চিতভাবেই তিস্তা চুক্তি নিয়ে আলোচনা হবে। ভারতের পক্ষ থেকেই তিস্তা ইস্যু উত্থাপন করা হতে পারে। কারণ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বেশ ভালোভাবেই জানেন তিস্তা চুক্তির দীর্ঘসূত্রতা বাংলাদেশের প্রত্যাশাকে এখন চাপে পরিণত করেছে। আর রাজনৈতিক এই চাপ মাথায় নিয়েই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যাচ্ছেন নয়াদিল্লি। তাই ভারতের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে যাই ঘটুক না কেন, নয়াদিল্লি সরকার তিস্তা ইস্যুতে স্পষ্ট ঘোষণা দেবেন, বাংলাদেশের এই প্রত্যাশা মোটেই অস্বাভাবিক নয় বলে মন্তব্য তাদের। ঢাকায় হাইকমিশনারের দায়িত্ব পালন করা সাবেক এক ভারতীয় কূটনীতিকের মতে, ‘নরেন্দ্র মোদির অবস্থান থেকে এর সবই জানা আছে। তাই বিজ্ঞ রাজনীতিক মোদি তার সুপ্রতিবেশীর গুরুত্বপূর্ণ সফরে বহুল প্রত্যাশিত তিস্তা চুক্তির বিষয় কিছু একটা চমক রাখবেন বলে আশা করাই যায়।’ বার্তা সংস্থা ডয়েচে ভেলের এক প্রতিবেদনে গতকাল বলা হয়েছে, ভারত সরকারের প্রধানমন্ত্রী থেকে সাধারণ আমলা প্রত্যেকেই মনে করছেন, শেখ হাসিনার ভারত সফরে তিস্তা চুক্তিসহ আরও অনেক চুক্তি সম্পাদন হতে চলেছে। এমনকি পশ্চিম বঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি নিজেই শঙ্কা প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তাকে বাদ দিয়েই শেখ হাসিনার সঙ্গে তিস্তা চুক্তি চূড়ান্ত করে ফেলবেন। ঢাকার পররাষ্ট্র দফতরের এক কর্মকর্তা বলেন, যেহেতু তিস্তার পানি বণ্টনের প্রস্তাবিত খসড়ায় আগেই দুই দেশ চূড়ান্ত করে রেখেছে এবং সেই খসড়ার কোনো পরিবর্তন হবে না বলে উভয় পক্ষ একমত আছে, সেহেতু শেষ মুহূর্তে সিদ্ধান্ত নিলেও চুক্তি স্বাক্ষর সম্ভব। এক ঘণ্টা সময় হাতে নিয়ে যে কোনো সময় তিস্তা চুক্তি স্বাক্ষর সম্ভব বলে জানান পররাষ্ট্র দফতরের এই কর্মকর্তা। জানা যায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সর্বশেষ দ্বিপক্ষীয় ভারত সফরে গত ২০১০ সালেই তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি স্বাক্ষর হবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছিল। কিন্তু তখন সেটা সম্ভব না হলেও ভারতের পক্ষ থেকে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল, খুব শিগগিরই এই চুক্তি স্বাক্ষর হবে। তারপর ২০১১ সালের সেপ্টেম্বরে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিং ফিরতি সফরে ঢাকায় আসার আগে তিস্তা চুক্তি চূড়ান্ত হয়েছিল। কিন্তু মনমোহনের সফরের আগের দিন মমতা ব্যানার্জি তিস্তা চুক্তির ব্যাপারে আপত্তি জানিয়ে সফরসঙ্গীর তালিকা থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করে নেন। ভারতে সরকার বদলের পর ২০১৫ সালের জুনে মোদি ঢাকা সফরকালে তিস্তা চুক্তির ব্যাপারে দিল্লির অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে। সেসময় মমতা ঢাকায় এসে তার ওপর আস্থা রাখার কথা বলে গেলেও গত সপ্তাহ পর্যন্ত তিস্তা চুক্তির বিষয়ে নিজের আপত্তির কথা জানিয়ে আসছেন তিনি। অবশ্য ভারতীয় গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুসারে, পরিস্থিতি এখন পাল্টেছে। এখন মমতাকে রাজি করানো নরেন্দ্র মোদির জন্য খুব একটা কষ্টকর নয়। কারণ সাম্প্রতিক বিধানসভার নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ রাজ্যগুলোতে ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপির জয়জয়কার হওয়ায় মোদি আছেন শক্ত অবস্থানে এবং মমতা ব্যানার্জি ও তার তৃণমূল কংগ্রেস আছে বেকায়দায়। নারদ স্টিং অপারেশনে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিবিআইয়ের তদন্তের মুখে পড়েছেন তৃণমূল কংগ্রেসের সাত সাংসদসহ একাধিক মন্ত্রী ও বিধায়ক। তাদের বিরুদ্ধে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগে সিবিআই-কে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে ভারতের শীর্ষ আদালত। আবার একই সময়ে ভারতের শাসক দল বিজেপির মূল সংগঠন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ পশ্চিমবঙ্গে তাদের সাংগঠনিক শক্তি বৃদ্ধির স্বপ্ন দেখছে। এই পরিস্থিতিতে মমতা এবং তার দল তৃণমূল ও পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের নেতা-মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে নারদ-অস্ত্রকে ব্যবহার করতে চাইছে বিজেপি এবং আরএসএস।

সর্বশেষ খবর