মঙ্গলবার, ৪ এপ্রিল, ২০১৭ ০০:০০ টা

পাঁচ দিন পর বের করা হলো ছিন্নভিন্ন দুই জঙ্গির লাশ

আতিয়া মহলে ‘অপারেশন টোয়াইলাইট’

শাহ্ দিদার আলম নবেল, সিলেট

অভিযান শেষ হওয়ার পাঁচ দিন পর আতিয়া মহল থেকে দুই জঙ্গির ছিন্নভিন্ন লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। ঢাকায় র‌্যাব সদর দফতর থেকে আসা বোমা নিষ্ক্রিয়করণ ইউনিট, ডগ স্কোয়াড ও টেকনিক্যাল টিম গতকাল নিহত জঙ্গিদের দেহাবশেষ উদ্ধার করে। এদিকে আতিয়া মহল বিস্ফোরক মুক্ত করতে আরও কয়েক দিন সময় লাগবে বলে জানিয়েছেন র‌্যাব-৯ অধিনায়ক লে. কর্নেল আলী হায়দার আজাদ আহমদ। সিলেটের দক্ষিণ সুরমার শিববাড়ী পাঠানপাড়ার আতিয়া মহলে জঙ্গি আস্তানা ২৩ মার্চ দিবাগত রাত থেকে ঘিরে রাখে পুলিশ। পরদিন অভিযানে যোগ দেয় সোয়াত। ২৫ মার্চ সকাল থেকে ‘অপারেশন টোয়াইলাইট’ শুরু করে সেনাবাহিনী। পরে ২৮ মার্চ অভিযান সমাপ্ত ঘোষণা করে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হয়, আতিয়া মহলে চার জঙ্গি নিহত হয়েছে। এর মধ্যে দুজনের লাশ পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এ ছাড়া আতিয়া মহলে প্রচুর বিস্ফোরক ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে। সেনাবাহিনীর কমান্ডোদের অভিযান শেষ হওয়ার পরও দুই জঙ্গির লাশ আতিয়া মহলের ভিতরে ছিল। লাশ দুটি পচে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছিল শিববাড়ী এলাকায়। দুর্ভোগ পোহাচ্ছিলেন স্থানীয় বাসিন্দারা। অবশেষে গতকাল ভবনের ভিতর থেকে নিহত জঙ্গিদের দেহাবশেষ উদ্ধার করে র‌্যাব। সকাল ৮টায় ঘটনাস্থলে পৌঁছায় র‌্যাবের ইউনিট। তারা আতিয়া মহলের আশপাশের সড়কে যান ও জনসাধারণের চলাচল বন্ধ করে দেয়। আতিয়া মহল ঘিরে বেশ কয়েকবার পর্যবেক্ষণ করেন র‌্যাবের সদস্যরা। এরপর শুরু হয় তাদের অভিযান। একপর্যায়ে ভবনের ভিতর থেকে দুই জঙ্গির দেহাবশেষ উদ্ধার করে র‌্যাব। উদ্ধার দেহাবশেষ বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে ওসমানী হাসপাতালের মর্গে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে লাশ দুটির ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হবে। এ ছাড়া পরিচয় শনাক্তের জন্য ডিএনএর নমুনাও সংগ্রহ করা হবে। এদিকে গতকাল বিকালে র‌্যাবের পক্ষ থেকে প্রেস ব্রিফিং করা হয়েছে। ব্রিফিংয়ে র‌্যাব-৯ অধিনায়ক লে. কর্নেল আলী হায়দার আজাদ আহমদ বলেন, ‘২৮ মার্চ কমান্ডোরা অভিযান শেষ করার পর আতিয়া মহল পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। ভবনের ভিতর দুটি লাশ এবং আইইডি (রূপান্তরিত বিস্ফোরক) ছিল। মৌলভীবাজারের অভিযানের কারণে আতিয়া মহলে অভিযান শুরু করতে দেরি হয়। রবিবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে বিস্ফোরক উদ্ধারের দায়িত্ব দেওয়া হয় র‌্যাবকে। দায়িত্ব পেয়ে র‌্যাব সদর দফতর থেকে আজ (গতকাল) বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট, ডগ স্কোয়াড ও টেকনিক্যাল টিম ঘটনাস্থলে আসে। লে. কর্নেল আরিফুল ইসলামের নেতৃত্বে বেলা সাড়ে ১১টায় শুরু হয় অভিযান। প্রথম লক্ষ্য ছিল লাশ দুটি উদ্ধার। শুরুতে ভবনের চারপাশ থেকে ধ্বংসাবশেষ পরিচ্ছন্ন করা হয়। এরপর নিচতলা থেকে দুই জঙ্গির দেহাবশেষ উদ্ধার করে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়।’ তিনি বলেন, ‘আতিয়া মহলকে বিস্ফোরক মুক্ত করা একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়া। এখানে বেশ কিছু বিস্ফোরক রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ বিস্ফোরকগুলো জঙ্গিদের হতে পারে, আবার সেনাবাহিনীর ছোড়া অবিস্ফোরিত বিস্ফোরকও হতে পারে। এগুলো উদ্ধার সময়সাপেক্ষ। এ সময় এলাকাবাসীকে ধৈর্য ধারণ করতে হবে। ভবনটি নিরাপদ হয়ে গেলেই বাসিন্দারা এতে ফিরে যেতে পারবেন।’ প্রথম দিনের অভিযানে কোনো বিস্ফোরক উদ্ধার করা হয়নি জানিয়ে র‌্যাব অধিনায়ক বলেন, ‘উদ্ধারের সময় যাতে দুর্ঘটনা না ঘটে সে জন্য সতর্ক থেকে অভিযান চলছে। অভিযানে সিলেট মহানগর পুলিশ, সিটি করপোরেশন, ফায়ার ব্রিগেড সহযোগিতা করছে।’ উদ্ধার লাশ দুটির দেহাবশেষ চেনা যাচ্ছে না উল্লেখ করে লে. কর্নেল আলী হায়দার বলেন, ‘সুইসাইডাল ভেস্টের বিস্ফোরণে লাশ দুটি ছিন্নভিন্ন। সেনাবাহিনীর অভিযানের শেষ সময়ে এগুলো বিস্ফোরিত হয়।’ এদিকে সিলেট মহানগর পুলিশের উপকমিশনার বাসুদেব বণিক বলেন, ‘দুই জঙ্গির দেহাবশেষ আমরা র‌্যাবের কাছ থেকে পেয়েছি। সেগুলো ওসমানী হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। ময়নাতদন্ত শেষে তাদের ডিএনএর নমুনা সংগ্রহ করা হবে। ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে তাদের পরিচয় শনাক্তের চেষ্টা করা হবে।’

সর্বশেষ খবর