মঙ্গলবার, ৪ এপ্রিল, ২০১৭ ০০:০০ টা
আরামবাগ-ঝিলমিল ফ্লাইওভার

আরেক দফা পেছাল নির্মাণ কাজ

পরিবর্তিত নকশায় ভাঙতে হবে ২০ তলা ভবন মসজিদ

মানিক মুনতাসির

রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) সর্বশেষ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর ২০২০ পর্যন্ত ধরা হলেও এখনো ঢাকা ট্রান্সপোর্ট কো-অর্ডিনেশন অথরিটির (ডিটিসিএ) অনুমোদন পায়নি ফকিরাপুল-কদমতলী ফ্লাইওভার প্রকল্প (শান্তিনগর-ঝিলমিল)। ফলে প্রকল্পটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হবে কবে তাও নির্ধারণ করতে পারেনি রাজউক। এর কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে নকশা জটিলতা। প্রকল্পটি প্রথমে শান্তিনগর থেকে ঝিলমিল পর্যন্ত হওয়ার কথা থাকলেও পরিবর্তিত নকশা অনুযায়ী এটি ফকিরাপুল ইন্টারসেকশন থেকে কদমতলী ইন্টারসেকশন পর্যন্ত যাবে বলে জানা গেছে। সর্বশেষ গত সপ্তাহে পরিকল্পনা কমিশনের সঙ্গে এ বিষয়ে বৈঠক করেছে রাজউক। তবে ওই বৈঠকেও তেমন কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। সভার কার্যবিবরণী ঘেঁটে জানা যায়, পরিবর্তিত নকশা অনুযায়ী প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হলে তিনটি ১৫ থেকে ২০ তলা ভবন ভাঙতে হবে। সেই সঙ্গে একটি মসজিদ, কবরস্থান ও ছোট-বড় অনেক স্থাপনা ভাঙতে হবে, যা অত্যন্ত ব্যয়বহুল এবং সময়সাপেক্ষ বলে মনে করে রাজউক। ফলে প্রাক্কলিত ব্যয় যা ধরা হয়েছে তা আরও বেড়ে যেতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে এ প্রকল্পের পরিচালক প্রকৌশলী নুরুল ইসলাম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রকল্পটি বাস্তবায়নের চেষ্টা করা হচ্ছে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করা হচ্ছে। আশা করা হচ্ছে খুব দ্রুত আমরা এর মূল কাজ শুরু করতে পারব। জানা গেছে, পরিবর্তিত নকশা অনুযায়ী ফ্লাইওভারটি শান্তিনগর-ঝিলমিলের পরিবর্তে আরামবাগ-ঝিলমিল ফ্লাইওভার হিসেবে নামকরণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এর ফলে ফ্লাইওভারটির রুট হবে আরামবাগ ইন্টারসেকশন-বিজয়নগর ইন্টারসেকশন-নয়াবাজার ইন্টারসেকশন-চতুর্থ বুড়িগঙ্গা সেতু-কদমতলী ইন্টারসেকশন থেকে ঝিলমিল। এর মোট দৈর্ঘ্য হবে ১২ দশমিক ১ কিলোমিটার। তবে ডিটিসিএর অনুমোদন অনুযায়ী এর দৈর্ঘ্য ধরা হয়েছে ৯ দশমিক ৬ কিলোমিটার। চার লেনবিশিষ্ট অংশের দৈর্ঘ্য ৭ দশমিক ২২ কিলোমিটার এবং দুই লেনবিশিষ্ট অংশের দৈর্ঘ্য ৪ দশমিক ৮৮ কিলোমিটার। পুরো ফ্লাইওভারে আপ র‌্যাম্পের সংখ্যা থাকবে পাঁচটি আর ডাউন র‌্যাম্প পাঁচটি। টোল প্লাজা থাকবে তিনটি। এটি পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপের (পিপিপি) ভিত্তিতে বাস্তবায়ন করতে চায় সরকার। জানা গেছে, প্রকল্প এলাকার ভূমি অধিগ্রহণ, পুনর্বাসন আর স্থাপনা সরানোর কারণে ব্যয় বাড়বে প্রায় ৪০০ কোটি টাকা। সংশোধিত নকশা অনুযায়ী এ ফ্লাইওভারের স্টার্ট পয়েন্ট হবে শান্তিনগরের পরিবর্তে ফকিরাপুল আরামবাগ ইন্টারসেকশন। আর এন্ডিং পয়েন্ট হবে ঝিলমিলের পরিবর্তে কদমতলী ইন্টারসেকশন। প্রস্তাবিত দেশের এই দীর্ঘতম ফ্লাইওভারটির দৈর্ঘ্য হবে ৯ দশমিক ৬ কিলোমিটার। আগের নকশায় এটি ছিল ১২ দশমিক ১ কিলোমিটার। তবে কোন নকশায় প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি।

এদিকে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) জানিয়েছে, নতুন নকশায় প্রকল্প বাস্তবায়ন করা কিছুটা কষ্টসাধ্য হবে। কেননা ফ্লাইওভারটি কদমতলী ইন্টারসেকশন পর্যন্ত করা হলে উচ্চ গ্রেডিয়েন্ট ঢালু পথ হবে, যা যান চলাচলের জন্য উপযোগী হবে না। একই সঙ্গে র‌্যাম্প (ওঠা-নামার পথ) নির্মাণের জায়গার সংকট তৈরি করবে। এ জন্য বুড়িগঙ্গা নদীর পাড় থেকে কদমতলী ইন্টারসেকশন পর্যন্ত অনেক জমি অধিগ্রহণ করতে হবে। এ জায়গায় ১৫ থেকে ২০ তলা পর্যন্ত তিনটি উঁচু ভবন রয়েছে। এর বাইরে একটি মসজিদ, কবরস্থানসহ রয়েছে ছোট-বড় অনেক স্থাপনা। এসব স্থাপনা অপসারণ এবং জমি অধিগ্রহণ করা সময় ও ব্যয়সাপেক্ষ। এতে কমপক্ষে ৪০০ কোটি টাকা অতিরিক্ত ব্যয় হবে বলে ধারণা করছে রাজউক। জানা যায়, গত বছর ২৩ মার্চ ডিটিসিএর বোর্ডসভায় ফ্লাইওভারের সংশোধিত নকশা অনুমোদিত হয়। রাজউক ডিটিসিএর নকশার এন্ডিং পয়েন্টের ব্যাপারে আপত্তি তুললে ওই বছরের ২৯ জুন মুখ্য সচিবের সভাপতিত্বে একটি সভা আহ্বান করা হয়। ওই সভা থেকে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় বিষয়টি সুরাহার জন্য পরামর্শ দেয়। পরে ২০ জুলাই গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রীর সভাপতিত্বে ‘শান্তিনগর-ঝিলমিল’ ফ্লাইওভার-সংক্রান্ত সভা থেকে ডিটিসিএর নকশা যাচাই-বাছাই করে মন্ত্রণালয়কে জানানোর জন্য একটি টেকনিক্যাল কমিটি গঠন করে দেওয়া হয়েছে। এ কমিটিকে দ্রুততম সময়ের মধ্যে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে। কমিটি এখনো চূড়ান্ত রিপোর্ট না দেওয়ায় কোন নকশায় ফ্লাইওভারটি বাস্তবায়ন করা হবে তাও চূড়ান্ত হয়নি। জানা গেছে, ২০১৩ সালের ৯ জানুয়ারি অর্থনৈতিক বিষয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি শান্তিনগর-ঝিলমিল ফ্লাইওভার প্রকল্পটি পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপের (পিপিপি) ভিত্তিতে বাস্তবায়নের অনুমোদন দেয়। তখন এ প্রকল্পের ব্যয় নির্ধারণ করা হয় ১ হাজার ৯২১ কোটি টাকা। তবে পরিবর্তিত নকশা অনুযায়ী এর সঙ্গে আরও ৪০০ কোটি টাকা যুক্ত হয়ে মোট ব্যয় দাঁড়াবে ২ হাজার ৩২১ কোটি টাকা। প্রকল্পটি ২০২০ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে সমাপ্ত করার সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে।

সর্বশেষ খবর