মঙ্গলবার, ৪ এপ্রিল, ২০১৭ ০০:০০ টা

কাগজ আমদানিতে মিথ্যা ঘোষণা বন্ধের দাবি

অপ্রদর্শিত আয় আবাসন খাতে বিনিয়োগ চায় রিহ্যাব

নিজস্ব প্রতিবেদক

কাগজ আমদানিতে মিথ্যা ঘোষণা বন্ধে সরকারের কাছে জোর দাবি জানিয়েছেন এই খাতের ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন, কতিপয় অসাধু আমদানিকারকের অনৈতিক কর্মকাণ্ডের ফলে বিপর্যয় পরিস্থিতির মুখোমুখি দেশীয় কাগজ শিল্প। বন্ডেড ওয়্যার হাউস সুবিধার অপব্যবহার করে ডুপ্লেক্স বোর্ড, মিডিয়া পেপার, হার্ড টিস্যু ও অন্যান্য সমজাতীয় কাগজ পণ্য আমদানি হচ্ছে। বাড়ছে চোরাচালান ও শুল্ক ফাঁকি। এমন প্রেক্ষাপটে আগামী ২০১৬-১৭ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে আমদানি বিকল্প দেশীয় কাগজ ও কাগজ জাতীয় পণ্য উৎপাদনকারী শিল্পের অত্যাবশ্যকীয় বিভিন্ন প্রকারের মৌলিক কেমিক্যালসের শুল্ককর কমানো এবং ভ্যাট মওকুফের দাবি করেছে বিপিএমএ।

গতকাল রাজধানীর সেগুনবাগিচার রাজস্ব ভবনে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড-এনবিআর আয়োজিত প্রাক-বাজেট আলোচনায় এই লিখিত প্রস্তাব দিয়েছে কাগজ শিল্প মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ পেপার মিলস অ্যাসোসিয়েশন-বিপিএমএ। এনবিআর চেয়ারম্যান নজিবুর রহমানের সভাপতিত্বে প্রাক-বাজেট আলোচনায় বক্তব্য দেন এনবিআর ভ্যাট (নীতি) সদস্য ব্যারিস্টার জাহাঙ্গীর হোসেন, এফবিসিসিআই উপদেষ্টা মনজুর আহমেদ, বিপিএমএ প্রতিনিধি মোস্তাফিজুর রহমান, রিহ্যাবের প্রথম সহসভাপতি লিয়াকত আলী ভুইয়া মিলনসহ ক্ষুুদ্র ও মাঝারি শিল্প খাতের বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা।

ওই আলোচনা সভায় এনবিআর চেয়ারম্যান নজিবুর রহমান বলেন, নতুন অর্থবছরে ভ্যাটের নতুন আইন চালু হবে। এতে ব্যবসায়ীদের হিসাব রাখতে হবে। আবার রাজস্ব কর্মকর্তারা যাতে ব্যবসায়ীদের হয়রানি করতে না পারেন, সে ব্যবস্থাও নতুন ভ্যাট আইনে আছে। বন্ড সুবিধার অপব্যবহার ও শুল্ক ফাঁকির বিষয়ে আমাদের সজাগ থাকতে হবে।

বাজেট প্রস্তাবে কাগজ শিল্পের জন্য বিভিন্ন কর প্রসঙ্গে বিপিএমএ বলেছে, কোটেড পেপার ও ডুপ্লেক্স বোর্ডের কেমিক্যালস আমদানি পর্যায়ে ১৫ শতাংশ ভ্যাট প্রত্যাহার ও সম্পূরক শুল্ককর ৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৩ শতাংশ করা হোক। এতে শিক্ষা ব্যবস্থা খরচ কমবে। আমদানি পর্যায়ে ভ্যাটসহ সম্পূরক শুল্ককর প্রত্যাহার করা হলে বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হবে।

বিপিএমএ তাদের আরেক প্রস্তাবে বলেছে, বর্তমানে বেবি ডায়াপার ও বেবি ওয়াইপস প্রতি কেজি হিসেবে শুল্কায়ন করা হয়। নতুন বাজেটে বেবি ডায়াপার ও বেবি ওয়াইপস প্রতি পিস বা প্রতি প্যাকেট হিসেবে শুল্কায়ন করা হোক। এতে সরকারি রাজস্ব বাড়ার পাশাপাশি বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হবে। ওই প্রাক-বাজেট আলোচনায় অংশ নিয়ে রিহ্যাবের সহসভাপতি লিয়াকত আলী ভুইয়া মিলন বলেন, প্লট ও ফ্ল্যাটের রেজিস্ট্রেশনের কর কমানো হোক। শুধু অপ্রদর্শিত অর্থ বিনা প্রশ্নে আবাসন খাতে বিনিয়োগের সুযোগ চাই। আমরা কালো টাকা সাদার করার সুযোগ চাই না। পাশাপাশি আবাসন শিল্প রক্ষার্থে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য বিদ্যমান ভ্যাট হ্রাসসহ নতুনভাবে ভ্যাট আরোপ না করার আহ্বান জানান তিনি। রি-রোলিং মিল অ্যাসোসিয়েশনের সহসভাপতিত আবু বকর সিদ্দিক বলেন, নতুন ভ্যাট আইনে ট্যারিফ পদ্ধতি থাকছে না। এ নিয়ে স্টিল শিল্প উদ্বিগ্ন। তাই শিল্পের স্বার্থে ৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন হিসাব করে তার ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপ করা উচিত। এর ব্যত্যয় ঘটলে লৌহ শিল্পে ধস নামবে।

সিমেন্ট ম্যানুফেকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের ভাইস চেয়ারম্যান শহীদুল্লাহ সিমেন্ট শিল্পের কাঁচামাল ক্লিংকারের ওপর শুল্ককর পরিশোধের আহ্বান জানিয়ে বলেন, স্টিল শিল্পের ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট সমর্থনযোগ্য নয়। এতে টন প্রতি রডের দাম ৯ হাজার টাকা বৃদ্ধি পাবে। পাশাপাশি সরকারের উন্নয়ন ব্যয়ও বৃদ্ধি পাবে। ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আবদুর রাজ্জাক বলেন, নতুন আইন নিয়ে ব্যবসায়ীদের কিছু ক্ষেত্রে আপত্তি আছে। তাই আইন বাস্তবায়নের পর এনবিআরকে যাতে আবার ইউটার্ন দিতে না হয়। ব্যবসায়ীরা সরকারের সঠিক সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছেন। প্লাস্টিক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির প্রতিনিধি শামীম আহমেদ বলেন, নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন করলে ১ হাজার ৩৭০টি পণ্যের সম্পূরক শুল্ক উঠে যাবে। এতে প্লাস্টিক খাতের ব্যবসায়ীরা উদ্বিগ্ন। সম্পূরক শুল্ক উঠে গেলে প্লাস্টিক খাতের ব্যবসায়ীরা টিকে থাকতে পারবেন না। এসএমই অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আলী জামান বলেন, অনলাইনে রেজিস্ট্রেশনের ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীদের বিশ্বাসবোধের ঘাটতির জায়গা তৈরি হচ্ছে। রেজিস্ট্রেশনে শুরুতেই করদাতা শনাক্তকরণ নম্বর (টিআইএন) দিতে হচ্ছে। পরবর্তীতে আয়কর অফিস যদি টিআইএনের সূত্র ধরে টার্নওভারের ১০ শতাংশ গ্রস প্রফিট হিসাব করে তাহলে ব্যবসায়ীদের আত্মহত্যা করা ছাড়া উপায় থাকবে না।

তিনি আরও বলেন, ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের টার্নওভার ট্যাক্স ৩ শতাংশ ধরা হয়েছে। তার মানে পণ্যের ২০ শতাংশ মূল্য সংযোজন। অনেক বড় প্রতিষ্ঠান যারা রেয়াত নিতে পারে তারাও ২০ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর দিতে পারে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ আছে। পিভিসি পাইপ প্রস্তুতকারক সমিতির প্রতিনিধি ইকবাল জামান জুয়েল বলেন, কিছু খাত আছে যেগুলোর ট্রানজেকশন বেশি কিন্তু মুনাফা কম। তাই বিক্রয়ের ওপর ভ্যাট আদায় যৌক্তিক হবে না। এসব খাতে সংকুচিত ভিত্তিমূল্য হারে ভ্যাট আদায় না করলে বিকৃতির মধ্যে পড়বে। আয়রন অ্যান্ড স্টিল আমদানিকারক সমিতির সভাপতি আমির হোসেন নুরানী বলেন, ১ টন মালামাল বিক্রি করলে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা মুনাফা থাকে। কিন্তু ৪ শতাংশ হারে ট্রেড ভ্যাট ধরলে ১৫ হাজার টাকা ভ্যাট দিতে হয়। যা ব্যবসায়ীদের ওপর জুলুম হয়ে যাচ্ছে। আবার ৫০০ টাকা ভ্যাট ফাঁকির জন্য ১৫ দিন যাবৎও গাড়ি আটকে রাখার মতো নজির আছে। ভ্যাট আদায়ের আগে খাতভিত্তিক সমিতির সঙ্গে বৈঠকের আহ্বান জানান তিনি। পাদুকা প্রস্তুতকারক সমিতির সভাপতি শাহনেওয়াজ হোসেন বেলাল বলেন, রাবারের পাদুকা ও হাওয়াই চপ্পলের ওপর ভ্যাট অব্যাহতি সুবিধা প্রত্যাহার করায় পণ্যের দাম বাড়ছে। এ সুযোগে চীনের জুতায় বাজার সয়লাব হয়ে যাচ্ছে। এতে দেশীয় শিল্প ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে এসে পৌঁছেছে।

সর্বশেষ খবর