বৃহস্পতিবার, ৬ এপ্রিল, ২০১৭ ০০:০০ টা

এমপি হতে কেন্দ্র ছেড়ে জেলার নেতৃত্বে আগ্রহ

দ্বিতীয় দফায় চিঠি পাঠানোর মেয়াদ শেষ

মাহমুদ আজহার

সাবেক ছাত্রনেতা ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবুল খায়ের ভূঁইয়া। গতকাল কেন্দ্রের গুরুত্বপূর্ণ এ পদ থেকে ‘ইস্তফা’ দিয়েছেন তিনি। আগামী নির্বাচন ও জেলার নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ প্লাটফরম ‘ভাবনা’ থেকেই তার এ সিদ্ধান্ত। একই অবস্থা চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা শাহজাদা মিয়ারও। গতকাল উপদেষ্টার পদ ছেড়ে জেলার সভাপতি থাকতে আগ্রহ দেখিয়ে চিঠি দিয়েছেন দলের মহাসচিবকে। বরিশাল বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আ ক ন কুদ্দুসুর রহমানও কেন্দ্রের পদ ছেড়ে দিয়েছেন। বরিশাল উত্তরের সাধারণ সম্পাদক পদে থাকতে কেন্দ্রের দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। শুধু এই কয়েকজন নেতাই নন, দলের গুরুত্বপূর্ণ প্রায় ৩০ জন নেতা কেন্দ্রীয় পদ ছেড়ে জেলার নেতৃত্বে থাকতে আগ্রহ দেখিয়ে চিঠি দিয়েছেন।

জানা যায়, কেন্দ্রের দায়িত্ব ছাড়া নেতাদের মূল লক্ষ্য হলো আগামী নির্বাচনে দলের প্রার্থী হওয়ার জন্য জেলার নেতৃত্বকে শক্তিশালী করা। জেলা ছেড়ে দিয়ে কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকলে তৃণমূলের নেতৃত্বে বিশৃঙ্খলা তৈরির শঙ্কা তাদের। এতে জাতীয় নির্বাচনেও প্রভাব পড়তে পারে বলে মনে করছেন কেন্দ্রীয় পদছাড়া নেতারা। তাই এক নেতার এক পদের বিধানকে সম্মান দেখিয়ে কেন্দ্র থেকেই নেতারা সরে দাঁড়িয়েছেন। তা ছাড়া নেতাদের কেউ কেউ বলছেন, কেন্দ্রীয় দায়িত্ব থাকলেও তাদের কোনো কাজ নেই। দলের কাজ করেন গুটি কয়েকজন। তাই জেলার নেতা-কর্মীদের সঙ্গেই সময় কাটাতে চান কেন্দ্র থেকে পদত্যাগী নেতারা।

‘এক নেতার এক পদ’ রাখতে বিএনপির দেওয়া আল্টিমেটামের শেষ দিন ছিল গতকাল। এ নিয়ে ১৯ নেতার কাছে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবীর রিজভী স্বাক্ষরিত চিঠি পাঠানো হয় গত ২১ মার্চ।

এ প্রসঙ্গে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, স্বেচ্ছায় একাধিক পদ না ছাড়া হলে সংশ্লিষ্টকে এক পদ নির্ধারণ করে দেওয়া হবে।’

কেন্দ্রীয় কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান আলতাফ হোসেন চৌধুরী গতকাল কেন্দ্রে এক চিঠি পাঠিয়েছেন। তিনি পটুয়াখালী জেলার সভাপতিও। সেখানে তিনি ওই জেলার সামগ্রিক রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট তুলে ধরে বিস্তারিত চিঠি দিয়েছেন দলকে। একই অবস্থা যুগ্ম মহাসচিব মজিবর রহমান সারোয়ারের। তিনিও বরিশাল মহানগরের সামগ্রিক বাস্তব চিত্র তুলে ধরে বিএনপি চেয়ারপারসনকে চিঠি দিয়েছেন। একই সঙ্গে সিদ্ধান্ত নেওয়ার দায়িত্বও দিয়েছেন বিএনপি প্রধানকে। উভয় চিঠিতেই কোনো পদ ছাড়ার বিষয়টি স্পষ্ট হয়নি। দলের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবীর খোকন আগামী নির্বাচন পর্যন্ত জেলার পদে থাকতে দলের হাইকমান্ডকে চিঠি দিয়েছেন।

জানা যায়, সর্বশেষ একাধিক পদে থাকা নেতারা ছিলেন—বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও পটুয়াখালী জেলা সভাপতি এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) আলতাফ হোসেন চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও ফরিদপুর জেলার সভাপতি শাহাজাদা মিয়া, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও লক্ষ্মীপুর জেলা সভাপতি আবুল খায়ের ভূঁইয়া, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও নাছিরনগর উপজেলা সভাপতি কাজী আকরামুজ্জামান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও ঘাটাইল উপজেলা সভাপতি লুত্ফর রহমান আজাদ, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও হালুয়াঘাট উপজেলা সভাপতি আফজাল এইচ খান, যুগ্ম-মহাসচিব ও বরিশাল মহানগর সভাপতি মজিবর রহমান সরোয়ার, যুগ্ম মহাসচিব ও  নরসিংদী জেলা সভাপতি খায়রুল কবীর খোকন, সাংগঠনিক সম্পাদক ও গাজীপুর জেলা সভাপতি ফজলুল হক মিলন, সাংগঠনিক সম্পাদক ও লালমনিরহাট জেলার সভাপতি আসাদুল হাবিব দুলু, সাংগঠনিক সম্পাদক ও নাটোর জেলা সভাপতি অ্যাডভোকেট রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, সহকর্মসংস্থান সম্পাদক ও খাগড়াছড়ি জেলা সভাপতি আবদুল ওয়াদুদ ভূইয়া, সমবায় সম্পাদক ও হবিগঞ্জ জেলার সাধারণ সম্পাদক জি কে গউস, প্রশিক্ষণবিষয়ক সম্পাদক ও কলাপাড়া উপজেলা সভাপতি এ বি এম মোশাররফ হোসেন, পল্লী উন্নয়ন বিষয়ক সম্পাদক ও নাগরপুর উপজেলা সভাপতি গৌতম চক্রবর্তী, শিশুবিষয়ক সম্পাদক ও মির্জাপুর উপজেলা সভাপতি আবুল কালাম আজাদ সিদ্দিকী, সহ-জলবায়ু বিষয়ক সম্পাদক ও মেলান্দাহ উপজেলা সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ও বরিশাল দক্ষিণ সাধারণ সম্পাদক আ ক ন কুদ্দুসুর রহমান, উপ-কোষাধ্যক্ষ ও চুয়াডাঙ্গা জেলার ১ নম্বর যুগ্ম-আহ্বায়ক মাহমুদুল হাসান বাবু।  

জানা যায়, বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটি ও জেলা বা মহানগর ৬১ নেতা একাধিক পদধারী ছিলেন। একাধিক পদ ছাড়তে সংশ্লিষ্ট নেতাদের দুদফা সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছিল।

সর্বশেষ খবর