বৃহস্পতিবার, ৬ এপ্রিল, ২০১৭ ০০:০০ টা
আরিফের বিরুদ্ধে রিট

দোয়া পড়ে চেয়ারে বসলেন বুলবুল

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী

দোয়া পড়ে চেয়ারে বসলেন বুলবুল

রাজশাহী সিটি করপোরেশনের (রাসিক) মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল বলেছেন, ‘পাঁচ বছরের সব সমস্যা আগামী ১৫ মাসের মধ্যে সমাধানে উদ্যোগ নেব। সরকার আমাকে সাহায্য করলে আমি অসমাপ্ত সব কাজ করতে পারব। যে ১৬ মাস দায়িত্ব পালন করেছি, তখনো সহযোগিতা পেয়েছিলাম। স্থানীয় সরকারকে অবজ্ঞা করে কেউ ক্ষমতায় থাকতে পারে না। তাই আগামীতেও সরকারের সহযোগিতা পাব।’ গতকাল বেলা পৌনে ১২টার দিকে নগর ভবনে এসে নিজ চেয়ারে বসে তিনি সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন। মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল অটোরিকশায় চেপে নগর ভবনে আসেন। বেলা ১১টা ১৫ মিনিটে উপশহর মোড় থেকে অটোরিকশায় নগর ভবনের উদ্দেশে তিনি রওনা হন। এ সময় শতাধিক নেতা-কর্মী তার সঙ্গে ছিলেন। ২৩ মাস মেয়রের দায়িত্ব থেকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত থাকার পর রবিবার সকালে রাসিকে আসেন বুলবুল। কিন্তু নগরপিতার কক্ষ তালাবদ্ধ। এর ফলে তিনি পাশের একটি কক্ষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। এ নিয়ে নগর ভবন এলাকায় বিএনপির নেতা-কর্মীদের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। পরে এ উত্তেজনা ভাঙচুরে রূপ নেয়। রবিবার বেলা ৩টার দিকে বুলবুল সিটি করপোরেশনে তার কক্ষে বসেন। এর পর রই সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার ফ্যাক্সে তার সাময়িক বরখাস্তের আদেশ আসে। মঙ্গলবার বুলবুল তার সাময়িক বরখাস্তের আদেশের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে রিট করেন। হাইকোর্ট স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের আদেশ স্থগিত করেন। ফলে গতকাল আবারও নগর ভবনে ফেরেন তিনি। তবে এদিন তাকে বাধা পেতে হয়নি। নগর ভবনে আসামাত্র বিপুলসংখ্যক কাউন্সিলর ও কর্মকর্তা-কর্মচারী তাকে ফুল দিয়ে স্বাগত জানান। খোলা রাখা হয়েছিল মেয়রের দফতরের প্রধান ফটকটি। কোনো ধরনের বাধা-বিপত্তি ছাড়া মেয়রের কক্ষে প্রবেশ করেন তিনি। মেয়রের চেয়ারে বসার আগে দোয়া পড়েন, মোনাজাত করেন। গণমাধ্যমের সঙ্গে আলাপকালে মেয়র বলেন, ‘আজ যে কারণেই হোক দেশের বিরাজমান রাজনৈতিক, সামাজিক, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে রাজনৈতিক অবস্থানের কারণে আমরা আমাদের গণতন্ত্রকে বিবর্ণ অবস্থায় দেখছি। আমরা চাই এ গণতন্ত্র সুস্থ, সবল এবং গ্রিন সিটির মতো হোক। আমরা চাই এ গণতন্ত্র সম্পর্কে সাধারণ মানুষের কাছে শ্রদ্ধার একটা জায়গা তৈরি হোক। আমরা চাই রাসিকের যে ঐতিহ্য তা ফিরিয়ে আনতে। গত দুই বছরে নিয়ম ভেঙে রাসিকে একটা অচলাবস্থা তৈরি করা হয়েছে। আগামী ১৫ মাসে এ অচলাবস্থার অবসান করা হবে। আর এটাই হবে আমার সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।’ তিনি বলেন, ‘আমার প্রথম চ্যালেঞ্জ হবে এই সিটি করপোরেশনে একটা সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশ তৈরি করা। যে সম্পর্ক নষ্ট হয়েছিল, যে সম্পর্কে ঘুন ধরেছে, সে সম্পর্ক তৈরি করা। এই রাজশাহীতে স্বৈরাচারী মনোভাব ছেড়ে আবার গণতান্ত্রিক পরিবেশ সৃষ্টি করা। এটাই হবে আমার বড় চ্যালেঞ্জ। রাসিকের উন্নয়ন, সেবা, স্বাস্থ্য খাত, শিক্ষা খাত, অন্যান্য জায়গায় যদি কোনো দুর্বলতা থাকে, সেগুলো খুঁজে সবাইকে জানানো হবে।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, রাসিকের কোনো নাগরিক সেবামুক্ত হবে না। আগামী ১৫ মাসে আাামার যদি চারগুণ পরিশ্রম করতে হয়, তবে সে পরিশ্রমের মধ্য দিয়ে সেটিকে পাঁচ বছর বানানোর চেষ্টার করব।’ সরকারের কাছে কেমন সহযোগিতা আশা করছেন, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘সরকারের কাছে অবশ্যই সহযোগিতা পাব। যেহেতু আমি ১৬ মাস দায়িত্ব পালন করেছি। আমার বিশ্বাস আগামী ১৫ মাসেও আমি সে সহযোগিতা পাব। এ কারণেই পাব যে, স্থানীয় সরকারকে অবমূল্যায়ন করে কেউ কখনো রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থাকতে পারে না। আমার কর্মের মধ্যে দিয়ে, সততা ও নিষ্ঠার মধ্য দিয়ে কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাব। আমাদের সবার পরিশ্রম বাড়িয়ে দেব এবং আগামী ১৫ মাসকে পাঁচ বছরের সময় হিসেবে বেঁধে নিয়ে আমাদের কাজ পরিচালনা করব।’

মেয়র আরিফকে ঠেকাতে আদালতে রাষ্ট্রপক্ষ : সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীকে দ্বিতীয় দফায় সাময়িক বরখাস্ত স্থগিত করে হাই কোর্টের দেওয়া আদেশ স্থগিত চেয়ে আবেদন করেছে রাষ্ট্রপক্ষ। গতকাল আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় রাষ্ট্রপক্ষ এ আবেদন করে বলে আরিফের আইনজীবী আবদুল হালিম কাফি জানিয়েছেন। চেম্বার বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের আদালতে আবেদনটি উত্থাপন করা হলেও শুনানি হয়নি। এর আগে ৩ এপ্রিল একটি রিটের প্রাথমিক শুনানি শেষে আরিফকে বরখাস্তের আদেশ স্থগিত করে হাই কোর্ট। বিএনপি নেতা আরিফুল হক চৌধুরী উচ্চ আদালতের ছাড়পত্রে ২ এপ্রিল মেয়রের দায়িত্বে ফেরার পরপরই তাকে আবারও বরখাস্ত করে সরকার। সিলেটের মেয়র আরিফের বিরুদ্ধে করা একটি ফৌজদারি মামলার সম্পূরক অভিযোগপত্র ২২ মার্চ সুনামগঞ্জের বিশেষ ট্রাইব্যুনালে গৃহীত হওয়ার ঘটনায় স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) আইন অনুযায়ী তাকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। সুনামগঞ্জে ২০০৪ সালের ২১ জুন আওয়ামী লীগ নেতা সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের জনসভায় বোমা হামলার ঘটনায় করা এক মামলায় গত বছর কারাবন্দী আরিফুলকে গ্রেফতার দেখানো হয়। পরে ওই মামলায় পুলিশ সম্পূরক অভিযোগপত্র দিলে তাতে আরিফুলের নাম যোগ করা হয়। ২০০৫ সালের ২৭ জানুয়ারি গ্রেনেড হামলায় সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়া নিহত হন। এ ঘটনায় করা মামলায় প্রথম দফার অভিযোগপত্রে আরিফের নাম ছিল না। অধিকতর তদন্ত শেষে পুলিশ ২০১৪ সালে সংশোধিত সম্পূরক অভিযোগপত্র জমা দেয়। সেখানে আসামির তালিকায় আরিফসহ ১১ জনের নাম যুক্ত হয়। ওই বছরের ২১ ডিসেম্বর আদালত নতুন ১১ আসামির বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করলে ৩০ ডিসেম্বর আরিফ আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করেন। আবেদন নাকচ করে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। আদালতে গৃহীত অভিযোগপত্রে নাম আসায় ২০১৫ সালের জানুয়ারিতে তাকে মেয়র পদ থেকে বরখাস্ত করে সরকার। পরে আরিফের আবেদনে হাই কোর্ট সেই বরখাস্তের আদেশ স্থগিত করে। আপিল বিভাগেও তা বহাল থাকে। আদালতের ছাড়পত্র পেয়ে ২ এপ্রিল মেয়রের চেয়ারে বসার পরই দ্বিতীয় দফায় বরখাস্তের সম্মুখীন হন আরিফ।

সর্বশেষ খবর