বৃহস্পতিবার, ৬ এপ্রিল, ২০১৭ ০০:০০ টা

ট্যানারিমুক্ত হচ্ছে হাজারীবাগ

আজ শেষ দিন, বিচ্ছিন্ন হচ্ছে বিদ্যুৎ পানি ও গ্যাস সংযোগ

মোস্তফা কাজল

আজ অবসান ঘটছে হাজারীবাগের ৬৭ বছরের চামড়া ব্যবসার। উচ্চ আদালতের নির্দেশে রাজধানীর হাজারীবাগের সব ট্যানারিতে (কারখানা) আজ থেকে বিদ্যুৎ, পানি ও গ্যাস সংযোগ বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। ফলে কার্যত অচল হয়ে পড়বে পুরো ট্যানারি এলাকা। ট্যানারির কারণে হাজারীবাগসহ পাশের এলাকার পরিবেশ দূষিত হয়ে পড়ে। এ এলাকার পাশ দিয়ে প্রবহমান তুরাগ নদও দূষণের কবলে। নদে মাছ বাঁচে না। পানি ব্যবহার করে চর্মরোগসহ নানা ধরনের জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছে সাধারণ মানুষ। এসব কারণে সরকার ছয় বছরে ১৪ বার ট্যানারি সরিয়ে নেওয়ার সময় নির্ধারণ করে। কিন্তু নানা অজুহাতে চামড়া ব্যবসায়ীরা আদালতের দ্বারস্থ হন। আদালত নানা দিক বিবেচনায় সর্বশেষ আজ পর্যন্ত সময় নির্ধারণ করে দেয়। সংশ্লিষ্টরা জানান, ট্যানারি সরিয়ে নিতে আরও তিন মাসের সময় দরকার ট্যানারি মালিকদের। পরিবেশ অধিদফতর জানায়, বর্তমানে হাজারীবাগে ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় সাড়ে তিন শ ট্যানারি রয়েছে। ট্যানারি সরিয়ে নেওয়ার জন্য সাভার পুরোপুরি প্রস্তুত। কিন্তু এসব কথা মানতে রাজি নন বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শাহীন আহমেদ। তিনি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘সাভারে যাওয়ার মতো এখনো পরিবেশ তৈরি হয়নি। আমাদের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে কমপক্ষে আরও তিন মাসের সময় প্রয়োজন।’ ট্যানারি-সংশ্লিষ্টরা জানান, ১৯৫০ সালে নারায়ণগঞ্জ থেকে ট্যানারি সরিয়ে হাজারীবাগে আরেক নদীর পাশে নেওয়া হয়। এখন তা সরিয়ে আবারও সাভারে নদীর পাশে নেওয়া হয়েছে। পরিবেশ অধিদফতরের ঢাকা বিভাগীয় পরিচালক মো. আলমগীর বলেন, ‘আমরা হাজারীবাগের ট্যানারির বিষয়ে আদালতের নির্দেশ পালন করব। এ বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহযোগিতা চেয়ে পত্র দেওয়া হয়েছে।’ ট্যানারি ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আবদুল মালেক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, হাজারীবাগের ট্যানারিতে ৩০ হাজারের বেশি শ্রমিক কাজ করে। এসব ট্যানারির ওপর নির্ভর করে প্রায় ৫০ লাখ মানুষের জীবন-জীবিকা চলমান। এখন ট্যানারি সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে উচ্চ আদালত। তাই মালিকরা ট্যানারি সরিয়ে নিতে শুরু করেছেন। তবে হাজারীবাগের ট্যানারি বন্ধ হয়ে গেলে তেমন একটা ক্ষতি হবে না জানিয়ে ‘আল-আমিন ট্যানারি’র মালিক বলেন, হেমায়েতপুরে বিদ্যুৎ ও গ্যাসসংযোগ দ্রুত পাওয়া যাচ্ছে। এ ছাড়া ফিনিশ লেদার (চামড়া) সরবরাহ করা রবিন এন্টারপ্রাইজের মালিক সাইফুল ইসলাম বলেন, গ্যাসসংযোগ এখন সহজ হওয়ায় হেমায়েতপুরের চামড়া শিল্প নগরীতে ব্যবসা করতে সমস্যা হচ্ছে না। ২৭ বছর ধরে ট্যানারি কারখানায় কাজ করা গ্রেট ইস্টার্ন ট্যানারির শ্রমিক মো. বাদল বলেন, ‘ট্যানারিতে কাজ করে যে টাকা পাই তা দিয়ে সংসার চলে। হেমায়েতপুরের কাজে হাজারীবাগ থেকেই যেতে হবে।’ বিসিকসূত্র জানায়, গতকাল পর্যন্ত হেমায়েতপুরে ছোট-বড় মিলিয়ে ৫৫টি ট্যানারি চালু হয়েছে। আরও প্রায় ২০টি এক সপ্তাহের মধ্যে চালু হওয়ার কথা রয়েছে। হাজারীবাগে কারখানা রয়েছে এমন ১৫৪টি ট্যানারিকে সাভার চামড়া শিল্প নগরীতে প্লট বরাদ্দ দেয় সরকার। বেশির ভাগ কারখানার অবকাঠামো নির্মাণকাজ শেষ হয়নি। কয়েকটি প্লট এখনো ফাঁকা পড়ে রয়েছে। কিছু প্লটে নির্মাণকাজ শুরুর পর বন্ধ রয়েছে। যেসব প্রতিষ্ঠান ভবন নির্মাণ শুরু করেছে, তার মধ্যে ৩০টির মতো ট্যানারি এক তলা ভবনও তৈরি করতে পারেনি। কিছু প্লটে পাইলিংয়ের কাজ চলছে। কেউ কেউ এক তলা ছাদ ঢালাইয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছে। কারও কারও ছয় তলা ভবন প্রস্তুত হয়েছে। নির্মাণাধীন ভবনে ৫৪টি কারখানায় কাঁচা চামড়া প্রক্রিয়াজাতকরণের (ওয়েট বল্গু) কাজ শুরু করেছে।

সর্বশেষ খবর