শনিবার, ৮ এপ্রিল, ২০১৭ ০০:০০ টা

খুলনা-কলকাতা ট্রেন শুরু আজ

চালু হচ্ছে যাত্রীবাহী বাসও

সামছুজ্জামান শাহীন, খুলনা ও বকুল মাহবুব, বেনাপোল

খুলনা-কলকাতা ট্রেন শুরু আজ

ভারতে রাষ্ট্রপতি ভবনে গতকাল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ —বাংলাদেশ প্রতিদিন

খুলনা রেলস্টেশনে গতকালের সকালটা ছিল অন্যরকম। দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা খুলনা-কলকাতা দ্বিতীয় মৈত্রী এক্সপ্রেসের যাত্রা শুরু আজ। এ নিয়ে খুলনাবাসীর চোখে-মুখে উচ্ছ্বাস। খুলনা রেলস্টেশনে ঘুরে দেখা গেল, তিন নম্বর প্লাটফরমে রাখা লাল-সবুজের ছোপে চকচকে সাদা ট্রেনকে ঘিরে মেতে উঠেছেন অনেকেই। ঐতিহাসিক যাত্রার জন্য প্রস্তুত হয়ে আছে বাংলাদেশ রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। ধোয়ামোছার পর পুরো ট্রেনটিকে রঙিন কাগজ ও ফুল দিয়ে সাজানো হয়েছে। বেলা গড়ানোর সঙ্গে ট্রেনটি ঘিরে স্টেশনে উত্সুক মানুষের ভিড়ও বাড়ছে। খুলনা থেকে রেলপথে কলকাতার দূরত্ব প্রায় ২০০ কিলোমিটার। আর এজন্য সময় লাগবে ৩ থেকে ৪ ঘণ্টা। রেলওয়ের খুলনার স্টেশন মাস্টার কাজী আমিরুল ইসলাম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানালেন, অবশেষে এ অঞ্চলের মানুষের দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান হতে যাচ্ছে। আগামীকাল (শনিবার) সকালে খুলনা-কলকাতা দ্বিতীয় ‘মৈত্রী এক্সপ্রেস’ ট্রেন পরীক্ষামূলক চলাচলের জন্য খুলনা থেকে রওনা দিয়ে যশোর হয়ে কলকাতায় পৌঁছাবে। এর আগে নয়াদিল্লি থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ট্রেনের উদ্বোধন করবেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। পরদিন সকালে ট্রেনটি কলকাতা থেকে খুলনার উদ্দেশে ছেড়ে আসবে। বেনাপোল রেলস্টেশনে এ উপলক্ষে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। যাত্রা শুরু অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন রেলপথ মন্ত্রী মো. মুজিবুল হক, জনপ্রশাসন মন্ত্রী ইসমত আরা সাদেক, রেলের মহাপরিচালক মো. আমজাদ হোসেন, অতিরিক্ত মহাব্যবস্থাপক হাবিবুর রহমান, পশ্চিমাঞ্চলীয় জোনের জিএম খায়রুল আলমসহ প্রশাসনের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তারা। এদিকে গতকাল ভারতের পূর্ব রেলের জেনারেল ম্যানেজার এস এন আগরওয়াল ভারতের পেট্রাপোল সীমান্ত স্টেশন পরিদর্শন করেন। তিনি গণমাধ্যমকে জানান, বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে বেনাপোল-পেট্রাপোল স্টেশন দিয়ে যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল শুরু হবে। ওই দিন বাংলাদেশ থেকে প্রথম যাত্রীবাহী ট্রেন ভারতের পেট্রাপোলে যাবে। এর পর থেকে দুই দেশের মধ্যে শুরু হবে যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল। জানা যায়, আজ খুলনা থেকে বাংলাদেশ রেলওয়ের একটি ট্রেন কলকাতার উদ্দেশে আনুষ্ঠানিক যাত্রা করবে। পরে ওই ট্রেনটিই ফিরবে কলকাতা থেকে। খুলনা ও কলকাতা রেলস্টেশনে আন্তর্জাতিক রুটে যাত্রী ট্রেন চালানোর যাবতীয় অবকাঠামোগত সুবিধা রয়েছে। বেনাপোল এবং ওপারের পেট্রাপোলে নতুন করে পরিকাঠামো তৈরি করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ইমিগ্রেশন, কাস্টমস ও রেলপুলিশের জন্য কক্ষ নির্মাণ। বেনাপোলে নির্মাণে ব্যয় করা হয় ২ কোটি ২৫ লাখ টাকা। জানা যায়, খুলনা-কলকাতা দ্বিতীয় ‘মৈত্রী এক্সপ্রেস’ ট্রেনের পরীক্ষামূলক উদ্বোধনের জন্য বাংলাদেশ রেলওয়ে আন্তনগর সার্ভিসের পাঁচটি বগি খুলনায় আনা হয়েছে। এই ট্রেনে চড়ে খুলনা থেকে স্থানীয় সংসদ সদস্য, জেলা প্রশাসন ও রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন কয়েকজন কর্মকর্তা বেনাপোলে পৌঁছাবেন। সেখানে এই বহরের সঙ্গে যুক্ত হবেন রেলমন্ত্রী মো. মুজিবুল হক। রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, ‘মৈত্রী এক্সপ্রেস’ ট্রেনটি পরীক্ষামূলক উদ্বোধন হলেও আনুষঙ্গিক কাজের অসম্পূর্ণতার কারণে বাণিজ্যিকভাবে নিয়মিত চালু হতে আরও কিছু দিন লাগবে। তবে ট্রেন চলাচলের জন্য ইতিমধ্যে দুই দেশের ট্রেনের সংযোগ লাইন সংস্কার, কাস্টমস, ইমিগ্রেশন, বেনাপোলে প্লাটফরম নির্মাণ, যাত্রীদের নিরাপত্তা, স্ক্যানিং ব্যবস্থাসহ নানা কাজ দ্রুত সম্পন্ন করা হয়েছে। বাংলাদেশ রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাব্যবস্থাপক হাবিবুর রহমান জানান, ‘প্রথমাবস্থায় যশোর জংশন, বেনাপোল ও নওয়াপাড়া স্টেশনের মতো গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট থেকে যাত্রীরা এই ট্রেনে চড়তে পারবেন না। পরে যাত্রীদের চাহিদা বিবেচনা করে ট্রেনের ট্রিপ ও স্টেশন সংখ্যা বাড়ানো হবে। ম্যানুয়াল পদ্ধতির পাশাপাশি অনলাইনেও টিকিট কাটার সুযোগ পাবেন যাত্রীরা। খুলনা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সহসভাপতি অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘এটি শুধু ট্রায়ালের (পরীক্ষামূলক) মধ্যে যেন সীমাবদ্ধ না থাকে। দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক উন্নয়ন ও যাতায়াতে ভোগান্তি কমাতে খুলনা-কলকাতা মৈত্রী এক্সপ্রেস নিয়মিত চলাচল করতে হবে।’ রেলওয়ের এক কর্মকর্তা জানান, বাংলাদেশ রেলওয়েতে যাত্রীবাহী বগি ও ইঞ্জিনস্বল্পতার কারণে শুরুতে দ্বিতীয় মৈত্রী এক্সপ্রেস ট্রেনটি ভারতীয় ইঞ্জিন ও রেক দিয়ে চলাচল করবে। এটি খুলনা-যশোর-বেনাপোল-পেট্রাপোল-বনগাঁ হয়ে কলকাতার শিয়ালদহ স্টেশনে পৌঁছবে। উদ্বোধনের পর থেকে দ্বিতীয় মৈত্রী এক্সপ্রেস ট্রেনটি সপ্তাহে এক দিন চলাচল করবে। পরে ট্রিপ বাড়ানো হবে। তিন ঘণ্টার মধ্যে ব্যবসায়ী, পর্যটক, রোগী কলকাতায় পৌঁছাতে পারবে। দুই দেশের মানুষ যাতে আরও অল্প খরচে, স্বল্প সময়ে ও নিরাপদে স্বচ্ছন্দে ভ্রমণ করতে পারেন সেই লক্ষ্যে এ উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়।

কলকাতা-খুলনা-ঢাকা বাসেরও উদ্বোধন আজ : আজ উদ্বোধন হবে কলকতা-খুলনা-ঢাকার বাস সার্ভিসও। নতুন যাত্রীবাহী পরিসেবার উদ্বোধন হবে আজ দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরিসেবা বাসটির উদ্বোধন করবেন। সঙ্গে থাকবেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। এ ছাড়া রাজ্যের মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যরা উপস্থিত থাকবেন। বাসটি কলকতা-বেনাপোল-খুলনা হয়ে মাওয়া পথে পদ্মা নদীর ফেরি পার হয়ে ঢাকায় পৌঁছবে।

সর্বশেষ খবর