শনিবার, ৮ এপ্রিল, ২০১৭ ০০:০০ টা

জানমালের নিরাপত্তায় প্রশিক্ষিত নারী কর্মী

জিন্নাতুন নূর

জানমালের নিরাপত্তায় প্রশিক্ষিত নারী কর্মী

গুলশানে একটি মার্কেটে নারী নিরাপত্তা কর্মীর তৎপরতা —জয়ীতা রায়

শারমিন হক। একটি   মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে জ্যেষ্ঠ নিরাপত্তা কর্মী হিসেবে কাজ করছেন। এক দশক আগে গাইবান্ধার এই নারী নিরাপত্তা কর্মী তার গ্রামে আনসার বাহিনী থেকে প্রশিক্ষণের সুযোগ পান। শারমিন ভেবেছিলেন এই প্রশিক্ষণ তার চাকরিজীবনে পরবর্তীতে সহায়ক ভূমিকা রাখবে। পরিবারের কাউকে না জানিয়েই শারমিন আনসার থেকে প্রশিক্ষণ নেন    এবং কয়েক বছর আনসার কর্মী হিসেবে দায়িত্বও পালন করেন। এরপর আরেকটু ভালো সুযোগ-সুবিধার প্রত্যাশায় চাকরি বদলে ঢাকার একটি মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে চাকরি নেন। শুরুতে পরিবারের কাছে লুকিয়ে রাখলেও পরে শারমিনের পরিবার তার কাজের কথা জানতে পারেন এবং তাকে এই কাজের জন্য উৎসাহ দেন।

এই প্রতিবেদককে শারমিন জানান, তার রাইফেল চালানোর প্রশিক্ষণ আছে। তিনি মনে করেন এটি অন্য যে কোনো সাধারণ পেশা থেকে বেশ চ্যালেঞ্জিং। তিনি আরও জানান, তার পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানটিতে এখন আটজন নারী নিরাপত্তা কর্মী কাজ করছেন। দিনে অভ্যর্থনাস্থলে এই নিরাপত্তা কর্মীরা তাদের দায়িত্ব পালন করেন। এ জন্য তাদের প্রতিষ্ঠান থেকে নির্ধারিত পোশাকও দেওয়া হয়েছে। নারী নিরাপত্তা কর্মী হলেও তাদের আগত দর্শনার্থীরা বেশ গুরুত্ব দেন এবং সমীহ করেন। তারা বলেন, ভালো সুযোগ-সুবিধা ও সম্মান দুটোই পাওয়া যায় বলে তারা নিরাপত্তা কর্মীর কাজটি বেছে নিয়েছেন। মানুষের নিরাপত্তা ও সম্পদ রক্ষার দায়িত্বে নারীদের বেশ কয়েক বছর ধরে নিরাপত্তা কর্মী হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে দেখা যাচ্ছে। পুরুষ নিরাপত্তা কর্মীর পাশাপাশি নারী নিরাপত্তা কর্মীরা বেশ স্বাচ্ছন্দ্যেই তাদের কাজ করছেন। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রাজধানীর বিভিন্ন মার্কেট-শপিং মল, ব্যাংক, রেস্টুরেন্ট, পার্ক, পোশাক কারখানা ও মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে এখন নারী নিরাপত্তা কর্মীদের নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। প্রথমদিকে এই জনবহুল স্থানগুলোতে কর্মরত নারীকর্মী ও আগত নারীদের তল্লাশি নিতে নারী নিরাপত্তা কর্মীর প্রয়োজন দেখা দেয়। কিন্তু কাজের প্রতি তাদের একাগ্রতা ও সততার কারণে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বর্তমানে নারী নিরাপত্তা কর্মীদের নিয়োগের পরিমাণও বৃদ্ধি পেয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রাজধানীর বিভিন্ন সিকিউরিটি সার্ভিস প্রতিষ্ঠানগুলো বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের চাহিদার ভিত্তিতে নারীকর্মীদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন। ঢাকার একটি সিকিউরিটি সার্ভিস প্রতিষ্ঠান ওরিয়ন সিকিউরিটি সার্ভিসের কর্মকর্তা মাহমুদুল হাসান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আমরা বিভিন্ন কোম্পানি থেকে পাওয়া চাহিদা অনুযায়ী নারী নিরাপত্তা কর্মীদের নিয়োগের ব্যবস্থা করি। যে সব জায়গায় নারীদের যাতায়াত বেশি সে প্রতিষ্ঠানগুলোই নারীকর্মীদের নিয়োগ দেয়। এলিট ফোর্স নামক একটি নিরাপত্তা সেবা প্রদানকারী সংস্থার দায়িত্বপ্রাপ্তরা জানান, তাদের প্রতিষ্ঠানের প্রায় ১ হাজার ২০০ নারীকর্মী ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় কাজ করছে। তবে এই শাখায় আরও জনশক্তির প্রয়োজন আছে।

সাধারণত একজন নারী নিরাপত্তা কর্মীকে কর্মদিবসে ছয় ঘণ্টা দায়িত্ব পালন করতে হয়। আর পুরুষ নিরাপত্তা কর্মীদের থেকে তাদের বেতনও কিছুটা বেশি। এ প্রসঙ্গে রাজধানীর একটি শপিং মলের নিরাপত্তা কর্মী রিনা আক্তার বলেন, ‘ইউনিফর্ম পরে আমাকে টানা কয়েক ঘণ্টা দায়িত্ব পালন করতে হয়। এ পেশায় আসার জন্য আমার পরিবার আমাকে উৎসাহিত করেন। প্রথমে দাঁড়িয়ে থাকতে কিছুটা কষ্ট হলেও এখন অভ্যাস হয়ে গেছে।’

সর্বশেষ খবর