শনিবার, ৮ এপ্রিল, ২০১৭ ০০:০০ টা

আসছে ত্রি-বার্ষিক আগাম বাজেট পরিকল্পনা

অগ্রাধিকার পাচ্ছে এসডিজি এবং মেগা প্রকল্পের বাস্তবায়ন

মানিক মুনতাসির

দ্বিতীয়বারের মতো তিন বছরের আগাম বাজেট পরিকল্পনা করছে সরকার। এ ব্যাপারে ইতিমধ্যে সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের প্রধানদের কাছে লিখিত মতামত চেয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। দেশের উন্নয়নে এবং টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনে আগামী বছরগুলোতেও উচ্চাভিলাষী বাজেট দিতে চান অর্থমন্ত্রী। এর পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৭-১৮, ২০১৮-১৯ এবং ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটের সম্ভাব্য আকার কত হবে তা নিয়ে এখনই ভাবছেন অর্থমন্ত্রী। এই তিন বছরে ক্রমান্বয়ে জাতীয় বাজেট ১৫ থেকে ২০ শতাংশ বৃদ্ধি করা যেতে পারে বলে মনে করেন অর্থমন্ত্রী। তবে জনগণের চাহিদার বিপরীতে বাজেটের এই বৃদ্ধির হারকে খুব একটা উচ্চাভিলাষী মনে করেন না তিনি।

অর্থ বিভাগের একটি সূত্র জানায়, জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা-২০৩০ (এসডিজি) বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া ইতিমধ্যে শুরু করেছে সরকার। এ সময়ের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি সুখী ও সমৃদ্ধিশালী দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে চান অর্থমন্ত্রী। এ ছাড়া ২০৩০ সালের আগে এবং ২০২১ সালের মধ্যেই দেশকে দারিদ্র্যমুক্ত করার পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে সরকার। সরকারের এ কার্যক্রম ত্রিবার্ষিক বাজেট পরিকল্পনায় অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। পাশাপাশি টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার অভীষ্ট লক্ষ্য সামনে রেখে এ পরিকল্পনা নিচ্ছে সরকার। অবশ্য এর আগে ২০১৫-১৬ অর্থবছরের শেষ দিকে প্রথমবারের মতো ত্রিবার্ষিক বাজেট পরিকল্পনা করেছিল সরকার। সেই পরিকল্পনার মধ্যে চলতি ২০১৬-১৭ অর্থবছরও যুক্ত রয়েছে।

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। অর্থমন্ত্রীর পরিকল্পনা অনুযায়ী আগামী অর্থবছরের (২০১৭-১৮) বাজেটের আকার ৪ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকা হতে পারে। ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেটের আকার ধরা হতে পারে ৪ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা। এবং অর্থমন্ত্রীর স্বপ্ন অনুযায়ী ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেট হবে ৫ লাখ কোটি টাকার ওপরে। আর এই সময়ের মধ্যে দেশের জিডিপির প্রবৃদ্ধির হার ২ অঙ্কে পৌঁছাবে বলে মনে করেন অর্থমন্ত্রী; যা ইতিমধ্যে ৭ দশমিক ১১ শতাংশ অর্জিত হয়েছে। চলতি বাজেটে এর লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ। এমন বিশাল আকারের বাজেট দিয়ে আগামী তিন বছরে দেশের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বিনিয়োগ, শিল্প, কৃষি, যোগাযোগ-অবকাঠামো, সার্বিক মানবসম্পদ উন্নয়ন, বিদ্যুৎ-জ্বালানি, সড়ক, রেলপথ, বন্দরসহ ভৌত অবকাঠামো উন্নয়নকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া আগামী বছরের বাজেটগুলোয় অগ্রাধিকার খাতের মধ্যে রয়েছে কৃষি ও পল্লী উন্নয়ন, কর্মসংস্থান, তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি, ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়ন, জলবায়ু মোকাবিলায় সক্ষমতা অর্জন ও বহির্বিশ্বের অর্থনৈতিক সুযোগ অধিকতর ব্যবহার এবং প্রবাসী আয় বৃদ্ধি ও বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নতুন নতুন রপ্তানির বাজার অনুসন্ধান।

অর্থমন্ত্রী মনে করেন, এই বাজেট বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজন রাজস্ব আদায় বৃদ্ধি, বৈদেশিক সহায়তার হার বৃদ্ধি ও স্বশাসিত সংস্থাগুলো থেকে অতিরিক্ত উদ্বৃত্ত আদায়। এ ধরনের বাজেট বাস্তবায়নে সরকারের প্রতিটি মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও সংস্থার সহযোগিতা চেয়েছেন তিনি। তবে বাজেট বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে হবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর)। কেননা উচ্চমাত্রায় রাজস্ব আদায় ছাড়া বাজেটের অর্থায়ন মেটানো সম্ভব নয় বলে মনে করেন আবুল মাল আবদুল মুহিত।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের সূত্রগুলো বলছে, পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার আলোকে আগামী তিন অর্থবছরের বাজেটের সম্ভাব্য আকার নির্ধারণ করেছে সরকার। পাঁচ বছর পর সরকার জিডিপির প্রবৃদ্ধি কত চায়, কী পরিমাণ বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান চায় ইত্যাদি বিষয়ে নানা পরিকল্পনা সরকারের সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার মধ্যে অধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এসব বিষয় আগামী তিনটি বাজেটেও গুরুত্ব পাবে বলে জানা গেছে। আগামী বছরের বাজেটগুলোর আকার কেমন হতে পারে সে বিষয়ে সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগ পৃথক বৈঠক করেছে। শুধু তাই নয়, অর্থ মন্ত্রণালয়ে এ-সংক্রান্ত চাহিদাও পাঠিয়েছে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো। এসব চাহিদাপত্রে বাজেটের আকার, বজেটের অর্থায়ন, কর্মসংস্থান, বিনিয়োগ ইত্যাদি বিষয়কে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

সর্বশেষ খবর