সোমবার, ১০ এপ্রিল, ২০১৭ ০০:০০ টা

আগাম বন্যায় ডুবছে হাওর হাহাকারে বাতাস ভারি

প্রতিদিন ডেস্ক

প্রায় ১০ দিনের অবিরাম বর্ষণ থামলেও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানি এখনো হাওরাঞ্চলকে ডুবিয়ে চলেছে। এভাবে আগাম বন্যায় ফসলডুবির ঘটনা বাড়তে থাকায় কৃষকের ঘরে ঘরে চলছে আহাজারি। হাহাকার পড়ে গেছে গোটা হাওরাঞ্চলে। আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো বিবরণ—

নেত্রকোনা : হাওর ছিল সুখের, হাওর ছিল আনন্দের। কিন্তু চিরচেনা সেই রূপ নিমিষেই পাল্টে গেছে প্রতিরক্ষা বাঁধ ভেঙে ফসলডুবে যাওয়ায়। জেলায় ছোট-বড় ১৪০টি হাওরের মধ্যে মোহনগঞ্জের ডিঙ্গাপোতা ও খালিয়াজুরীর কীর্ত্তণখোলা, পাঙ্গাসিয়াসহ কয়েকটি বড় হাওরের ওপরই নির্ভরশীল ছিল প্রায় ৫৫ হাজার কৃষক। ফসলডুবির ঘটনায় একজন কৃষকও বাকি নেই যে ধান তুলতে পেরেছেন। এ পর্যন্ত কম করে হলেও হাওরে প্রায় ৪০ হাজার এবং জেলায় আনুমানিক ৪৫ হাজার হেক্টর জমি পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। শুক্রবার রাতে জয়পুর বাঁধ ভেঙে কৃষ্ণপুর ইউনিয়নের ৩ হাজার ১০০ হেক্টর এবং শনিবার সকালে গছিখাই নামার বাঁধ ভেঙে পুরো ইউনিয়ন পানিতে তলিয়ে যায়। ফলে হাওর উপজেলার ৪০ হাজার ৬২০ হেক্টর জমির কিছুই রক্ষা পায়নি। এমন অবস্থায় পুরো হাওরজুড়ে চলছে হাহাকার। অনেকেই গৃহপালিত গবাদি পশুকে স্থানান্তর করে দিচ্ছেন উজানে থাকা আত্মীয়স্বজনের কাছে। আবার অনেকে কম দরে বেচে দিচ্ছেন প্রিয় পশুগুলোকে। শুধু নিজেদের নয়, গবাদি পশুর খাবারও ভেসে গেছে বানের জলে। ১ এপ্রিল রাতে পাহাড়ি ঢলে প্রথম ভেঙে যায় চরহাইজদা ফসল রক্ষা বেড়িবাঁধ। এরপর এক এক করে কীর্ত্তণখোলাসহ ভাঙতে ভাঙতে হাওরের প্রায় ১৩টি বাঁধ ভেঙে যায়। স্থানীয় কৃষকরা বলছেন, সব হারিয়ে এখন নিঃস্ব তারা।

হবিগঞ্জ : ১০ দিনের অবিরাম বর্ষণ থামলেও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানি এখনো প্রবাহিত হচ্ছে হবিগঞ্জের হাওড় অঞ্চলে। কৃষকের একমাত্র অবলম্বন বোরো ফসলের বৃহৎ অংশ তলিয়ে গেলেও তারা অবশিষ্ট অংশ রক্ষার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন এবং স্বেচ্ছাশ্রমে বাঁধ নির্মাণ করে পাহারা বসিয়েছেন। অনেকেই ফসল হারিয়ে গৃহস্থালির গরু-ছাগল বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। আগামী দিন কিভাবে কাটবে তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন হবিগঞ্জের হাওর পাড়ের নবীগঞ্জ, আজমিরীগঞ্জ, বানিয়াচং ও লাখাই উপজেলার প্রায় ১৫ লক্ষাধিক পরিবার। অভিযোগ উঠেছে ওই সব হাওড় এলাকার একাধিক বাঁধের জন্য সরকার কর্তৃক বরাদ্দ দেওয়া হলেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি। হবিগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর এ পর্যন্ত ২৭ হাজার ১০ হেক্টর বোরো জমির ফসল তলিয়ে যাওয়ার হিসাব দিলেও বেসরকারিভাবে এর পরিমাণ ৫০ হাজার হেক্টরের অধিক হবে বলে ভুক্তভোগীরা জানান। যা টাকার অঙ্কে কমপক্ষে ৩০০ কোটি টাকার ফসল।

মৌলভীবাজার : দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম হাওড় হাকালুকি, হাইল হাওর, সোনাদিঘি, কাওয়াদিঘির হাওর ও কইরকোনা বিলসহ বিভিন্ন এলাকায় অতিবৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে প্লাবিত হয়ে ১৭ হাজার ৪৩২ হেক্টর জমির বোরো ধান বিনষ্ট হয়েছে। হাওরের সর্বত্র থৈ থৈ করছে পানি আর পানি। কৃষকদের অতিকষ্টে ফলানো ধানের ওপর দিয়ে চলছে নৌকা। ফলে জেলাজুড়ে চলছে হাহাকার। ৬ মাসের ঘামঝরা পরিশ্রমে ফলানো বোরো ধানের একটুকুও ঘরে আনতে পারেনি জেলার কোনো কৃষক। বোরো চাষিদের স্বপ্ন এখন দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়েছে। এ বিষয়ে হাওর বাঁচাও, কৃষি বাঁচাও ও কৃষি বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদের একাধিক কর্মকর্তা জানান, ফেঞ্চুগঞ্জের বুড়িকিয়ারী নদী খনন না করার কারণে হাকালুকি হাওরের পানি নিষ্কাশন হতে পারে না। যার ফলে দু-একদিনের বৃষ্টির কারণে পুরো হাওরটি তলিয়ে যায়। তাদের দাবি, এ অঞ্চলের কৃষকদের বাঁচাতে হলে যত দ্রুত সম্ভব ওই খালটি খনন করে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করে দিতে হবে।

সর্বশেষ খবর