মঙ্গলবার, ১১ এপ্রিল, ২০১৭ ০০:০০ টা

ফের জামায়াত-বিএনপি টানাপড়েন

আওয়ামী লীগ কাছে টানতে পারে জামায়াতকে : খালেদা জিয়া

শফিউল আলম দোলন

ফের সম্পর্কের টানাপড়েনে পড়েছে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী। বিএনপি কি শেষ পর্যন্ত জামায়াতকে জোট থেকে বাদ দিতে যাচ্ছে? নাকি বিএনপির দুরবস্থা দেখে জামায়াতই এখন ২০ দলীয় জোট থেকে কৌশলে সরে যেতে চাচ্ছে-এমন প্রশ্ন এখন ঘুরপাক খাচ্ছে রাজনৈতিক মহলে। বিএনপি চেয়ারপারসন ও জোট নেত্রী খালেদা জিয়া পরিষ্কার ভাষায় বলেছেন, আগামীতে আওয়ামী লীগ কাছে টানতে পারে জামায়াতকে। অতীতেও তাদের মধ্যে বন্ধুত্ব ছিল। ১৯৮৬ সালে স্বৈরাচার এরশাদ সরকারের অধীনে আওয়ামী লীগের সঙ্গে জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল জামায়াত। এরপর ’৯৫-৯৬ সালে বিএনপি সরকারের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের সঙ্গে আন্দোলন করেছিল দলটি। তাদের ভিতরে সেই সখ্যতা এখনো আছে। আর সেটাকে আবারও যে কোনো মুহৃর্তে কাজে লাগাতে পারে আওয়ামী লীগ। গত রবিবার মধ্যরাতে গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয়ে আইনজীবীদের সঙ্গে আলাপকালে এ মন্তব্য করেন খালেদা জিয়া। তবে এ প্রসঙ্গে বিএনপির শুভাকাঙ্ক্ষী বুদ্ধিজীবী ও গণস্বাস্থ্য হাসপাতালের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেছেন, বেগম খালেদা জিয়া কি জামায়াতকে জোট থেকে বাদ দিতে চাচ্ছেন, নাকি বিএনপির ভবিষ্যৎ অন্ধকার মনে করে জামায়াতে ইসলামীই বিএনপির কাছ থেকে দূরে সরে যেতে চাচ্ছে-সেটিই এখন পর্যবেক্ষণের বিষয়। বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য এ সম্পর্কে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, স্বাধীনতাবিরোধী এই দলটি এখন বিএনপির গলার কাঁটা হয়ে গেছে। বিএনপি না পারছে তাদের গিলতে, আবার না পারছে ফেলতে। তবে জামায়াতের কারণে বিএনপির জন্যে ইউরোপ-আমেরিকা ও ভারতসহ আন্তর্জাতিক বিশ্বের সমর্থন পাওয়া দিন দিন কঠিন হয়ে পড়ছে। 

স্থায়ী কমিটির অপর এক সদস্য বলেন, গত কয়েক বছরে সর্বস্তরে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে জামায়াত বিএনপির সঙ্গে বিরোধিতা করেছে। অধিকাংশ নির্বাচনে তারা আলাদা প্রার্থী দিয়েছে। সর্বশেষ কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন (কুসিক) নির্বাচনেও তারা বিএনপির ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কুর প্রকাশ্যে বিরোধিতা করেছে। একই ওয়ার্ডে বিএনপির প্রার্থীর বিরুদ্ধে নিজেদের প্রার্থীও দিয়েছে জামায়াত। কুসিক নির্বাচনে জোটের সমন্বয়ক ছিলেন এলডিপি মহাসচিব ড. রেদোয়ান আহমেদ। জোটের সব দল তার সঙ্গে যোগাযোগ করলেও জামায়াত করেনি বলে অভিযোগ রয়েছে। এমনকি নির্বাচন নিয়ে ড. রেদোয়ান আহমদ কয়েকটি সমন্বয় সভা করলেও জামায়াতের কোনো নেতা-কর্মী অংশ নেয়নি।  নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্বে থাকা ২০ দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা এ ব্যাপারে খালেদা জিয়ার কাছে অভিযোগও করেছেন। কিন্তু এতেও কোনো পাত্তা দেয়নি জামায়াত। তাছাড়া অনেক দিন ধরেই ২০ দলের বৈঠকেও জামায়াতের কোনো প্রতিনিধি যোগ দিচ্ছে না। বিশেষ করে জোটের মহাসচিব পর্যায়ের বৈঠকে তো প্রায় দুই বছর ধরেই জামায়াতে ইসলামীর কোনো প্রতিনিধি অংশ নিচ্ছে না। ফলে জোট ও বিএনপির সঙ্গে ইসলামী এই দলটির টানাপড়েন সঙ্গত কারণেই বেড়েছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল। এ বিষয়ে বিএনপি ঘরানার বুদ্ধিজীবী অধ্যাপক এমাজউদ্দিন আহমদ বলেন, খালেদা জিয়া সঠিক কথাই বলেছেন। তবে বড্ড দেরি করেই বললেন। আরও আগে বললে আরও ভালো হতো। তবে আমাদের চিন্তা করতে হবে এভাবে যে, আসলে বিএনপি কী জামায়াতকে বাদ দিতে চাচ্ছে, নাকি বিএনপির বর্তমান দূরবস্থা দেখে জামায়াত নিজেই কেটে পড়তে চাচ্ছে? ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির জাতীয় নির্বাচনে জয়লাভের পর থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জামায়াতের সঙ্গ ত্যাগ করে আলোচনায় বসার আহবান জানিয়েছেন বিএনপিকে। এরপর থেকেই জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে জামায়াতের সঙ্গ ছাড়ার ব্যাপারে বিএনপির প্রতি বেশ চাপ রয়েছে। ইউরোপীয় পার্লামেন্টের এক প্রস্তাবে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে উল্লেখ করে জামায়াতে ইসলামী ও হেফাজতে ইসলামের সঙ্গ থেকে দূরত্ব বজায় রাখতে বিএনপির প্রতি আহ্বান জানানো হয়। এছাড়া খালেদা জিয়ার সঙ্গে একাধিক বৈঠকে ঢাকায় নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকরাও বিএনপিকে জামায়াতের সঙ্গ ছাড়ার আহ্বান জানান। 

 

সর্বশেষ খবর