শিরোনাম
মঙ্গলবার, ১১ এপ্রিল, ২০১৭ ০০:০০ টা

খুঁড়িয়ে চলছে বিটিসিএল

১৩ হাজার কোটি টাকার সম্পদ নিয়েও কমছে গ্রাহক, বাড়ছে লোকসান

জয়শ্রী ভাদুড়ী

খুঁড়িয়ে চলছে বিটিসিএল

একটা সময় শহর-গঞ্জে টিঅ্যান্ডটি ল্যান্ডফোনের দোকানে চোখে পড়ত মানুষের লম্বা লাইন। কেউ নিতে চান দেশের বাইরে থাকা স্বজনের খোঁজ, কেউ অন্য শহরে থাকা আত্মীয়ের কাছে পৌঁছে দিতে চান প্রয়োজনীয় খবর। এই ল্যান্ডফোনের সঙ্গে জড়িয়ে আছে লাখো মানুষের সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না আর আবেগ-অনুভূতি। কিন্তু প্রযুক্তির উত্কর্ষতার সঙ্গে ল্যান্ডফোন তাল মেলাতে না পারায় গ্রাহকেরা ঝুঁকে পড়েছেন মোবাইল ফোনের দিকে। ফলে বছর বছর লোকসান বেড়েই চলেছে বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন কোম্পানি লিমিটেডের (বিটিসিএল)।

২০০৮ সালের হিসাব অনুযায়ী, ১২ হাজার ৯৬৭ কোটি টাকার সম্পদ রয়েছে বিটিসিএলের। আছে পর্যাপ্ত লোকবল। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটি দাঁড়াতে পারছে না। বরং প্রতি বছরই কমছে গ্রাহক, বাড়ছে লোকসান। বিটিসিএলের দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটির টেলিফোন অপারেটিং সামর্থ্য আছে ১৩ লাখ। কিন্তু গ্রাহক আছে সাড়ে ৬ লাখ। অথচ গত বছর গ্রাহকের সংখ্যা ছিল ৭ লাখ ১৬ হাজার। ২০১২ সালে ছিল ৯ লাখ ৪৩ হাজার। গ্রাহকসংখ্যা কমে যাওয়ায় বিটিসিএলের আয়ও কমছে।

দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে বিটিসিএলের ক্ষতির পরিমাণ ছিল ২৮৩ কোটি ২৩ লাখ ১৪ হাজার ৭৩১ টাকা। আর ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ক্ষতির পরিমাণ বেড়ে দাঁড়ায় ৩২৮ কোটি ৩৪ লাখ ২৬ হাজার ৭৫০ টাকা। অথচ ২০১১-১২ অর্থবছরে ক্ষতির পরিমাণ ছিল ৬২ কোটি ৮৪ হাজার ৩৩৮ টাকা। অর্থাৎ বছরে প্রায় ১০০ কোটি টাকা করে গত তিন বছরে ৩০০ কোটি টাকার মতো লোকসান গুনেছে প্রতিষ্ঠানটি।

বিটিসিএলের অর্থ আয় হয় একটা দেশের ভিতরের সংযোগ থেকে এবং বড় অংশটি আসে দেশের বাইরে থেকে আসা কলে। কিন্তু মানুষের হাতে মোবাইল ফোন চলে আসায় প্রবাসীরা ল্যান্ডফোনে কল দেওয়া কমিয়ে দিয়েছেন। ফলে বিটিসিএলের রাজস্বের বড় একটা অর্থ চলে যাচ্ছে অন্য মোবাইল অপারেটরদের হাতে। আর প্রতিদিনই এক পা করে ক্ষতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে বিটিসিএল। মিরপুর-১০ এলাকার গ্রাহক হায়দার আলী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমার বাড়ির টেলিফোন লাইনটি সাত দিন ধরে বিকল। বিটিসিএল অফিসে অভিযোগ করা হলে তারা জানান, লোক গিয়ে ঠিক করে দিয়ে আসবে। কিন্তু সাত দিন পার হলেও লাইন ঠিক হয়নি, কোনো লোকও আসেনি।’ তিনি বলেন, ‘আট বছর হলো আমি ল্যান্ডফোনের সংযোগ নিয়েছি। এর মধ্যে কমপক্ষে ২০ বার আমাকে ফোনের বিভিন্ন সমস্যায় ঘুরতে হয়েছে বিটিসিএল অফিসে।’

তথ্যপ্রযুক্তির উন্নয়ন ঘটার সঙ্গে বিটিসিএল সেবা খাতের উন্নয়ন ঘটেনি। বরং ভাটা পড়েছে। ল্যান্ডফোনের মাধ্যমে ইন্টারনেট সেবা দেওয়া হলেও তা নিয়ে রয়েছে গ্রাহকদের বিস্তর অভিযোগ। সূত্র জানায়, বর্তমানে বিটিসিএল গ্রাহকদের আট ধরনের সেবা দেয়। এর মধ্যে আছে : পিএসটিএন লাইসেন্স, ইন্টারন্যাশনাল গেটওয়ে সার্ভিস অপারেটর লাইসেন্স, ইন্টারকানেকশন এক্সচেঞ্জ সার্ভিস অপারেটর লাইসেন্স, ইন্টারন্যাশনাল ইন্টারনেট গেটওয়ে সার্ভিস অপারেটর লাইসেন্স, ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার লাইসেন্স, ইন্টারন্যাশনাল টেরিস্ট্রিয়াল কেবল লাইসেন্স, ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন্স ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক লাইসেন্স এবং ব্রডব্যান্ড ওয়্যারলেস অ্যাকসেস লাইসেন্স। অর্থাৎ বিটিসিএল নতুন ল্যান্ডফোনের সংযোগ, ব্রডব্যান্ড সংযোগ, অন্য অপারেটরে কল করার জন্য এক্সচেঞ্জ করা এবং অন্য অপারেটরদের ইন্টারনেট পৌঁছে দিতে গেটওয়ে হিসেবে কাজ করছে। এ ব্যাপারে বিটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহফুজ উদ্দিন আহমদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘প্রতিনিয়তই পরিবর্তিত হচ্ছে প্রযুক্তি। তাই ল্যান্ডফোনের সেবা আরও উন্নত করতে আমরা ল্যান্ডলাইনকে শক্তিশালী করার পাশাপাশি নতুন সেবা যুক্ত করার পরিকল্পনা নিয়েছি। কিন্তু অন্য প্রতিষ্ঠানগুলো রাস্তা খুঁড়লেই বিটিসিএলের ক্যাবল কেটে ফেলে। আমাদের না জানিয়ে পোল সরিয়ে দেয়। এজন্য অনেক সময় গ্রাহকদের অসুবিধা হয়। নতুন সেবার মাধ্যমে গ্রাহক ভোগান্তি কমানো হবে এবং এ থেকে আসবে অতিরিক্ত রাজস্ব।’

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর